Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Bangladesh

সংকট কাটানোর নির্দেশনা নেই

বাজারে নিত্যপণ্যের চড়া দর। ব্যাংক, শেয়ারবাজারসহ আর্থিক খাতের অবস্থা দুর্বল। রপ্তানির চাকা ধীর। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে চলে এসেছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। বেড়েছে ঋণ পরিশোধের চাপ। সব মিলিয়ে ভালো নেই অর্থনীতি। সরকারি হিসাবেই এক বছরে গড়ে খাদ্যমূল্য বেড়েছে ১১ শতাংশ। তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ মে মাসে রপ্তানি কমেছে ১৬ শতাংশ। এমন দুঃসময়ে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নতুন অর্থবছরের জন্য যে বাজেট পেশ করলেন, তাতে স্বস্তির খবর কম। সংকটের এই সময়েও গতানুগতিক বাজেট প্রস্তাবই দিলেন তিনি। সংকট কাটানোর পথ বাতলে দিতে পারলেন না। 

অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’। ১৭৪ পৃষ্ঠার বক্তব্যে তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নানা আশার কথা শুনিয়েছেন। তবে সমৃদ্ধ হতে গেলে তো অর্থনীতির এখনকার সংকট আগে সামাল দিতে হবে। সেই জায়গায় তাঁর বক্তব্যের পৃষ্ঠা বরাদ্দ ছিল একেবারেই কম। 

নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সংকটের কারণে আগের কয়েকটি অর্থবছরের তুলনায় এবার ব্যয় বাড়ানোর হার অনেক কম। সে তুলনায় আয় বাড়ানোর হার বেশি। বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ঋণের নির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে। 

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাজেট প্রণয়ন করতে গিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ, সবার জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য নিরাপত্তা, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, এলডিসি থেকে উত্তরণ, ব্যবসা প্রক্রিয়া সহজ করা, বিনিয়োগ ও শিল্পের প্রসার, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা বিশেষ অগ্রাধিকার পেয়েছে। 

অর্থমন্ত্রী উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে যা বলেছেন, তাতে বেশির ভাগ সময় কারণ বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক চাহিদা কমানোর জন্য মুদ্রানীতিতে যে সংকোচন সম্প্রতি এনেছে, তাকে সহায়তা করবে রাজস্ব নীতি। বাজারে সরবরাহ শৃঙ্খলের ত্রুটির কথা বলেছেন। তবে ত্রুটি সারানোর কৌশল জানাননি। সব ক্ষেত্রেই তিনি আগের অর্জনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তবে আগামীতে সরকার কী করতে চায় বা সংকট কীভাবে সামাল দেবে, সেদিকে খুব একটা যাননি। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার শর্ত হিসেবে যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তাতে অর্থনীতি কীভাবে উপকৃত হবে, তা জানাননি অর্থমন্ত্রী। জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির মতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কীভাবে সাড়ে ৬ শতাংশে নামাবেন, তার ব্যাখ্যা দেননি। যদিও অর্থমন্ত্রী উপস্থাপিত অর্থ বিলে রাজস্ব বাড়াতে বিভিন্ন জায়গায় কর, শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। এতে করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কতটুকু সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। 
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি সীমিত পরিসরে রাখা হলেও নিম্ন আয়ের মানুষের সুরক্ষা 

কার্যক্রম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি এ বিষয়ে বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসৃজন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলাসহ সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে। 

গতকাল বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন আগামী অর্থবছরের বাজেট এবং চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করার জন্য সম্মতি দেন। এবারের বাজেট দেশের ৫৩তম বাজেট। টানা চতুর্থ মেয়াদে গঠিত বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেট। এর আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা সরকার টানা তিন মেয়াদে ১৫টি বাজেট দিয়েছে। 

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচনী ইশতেহারের ১১টি বিশেষ অগ্রাধিকার হবে বাজেটে সম্পদ সঞ্চালনার প্রধান ভিত্তি। ১১টি বিশেষ অগ্রাধিকারের তালিকায় এক নম্বরে আছে দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা। অর্থমন্ত্রী মুখে বললেও প্রধান এ অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। সরকারের আরেক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো। এ বিষয়েও পরিকল্পনা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেননি। নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল নীতি ঘোষণা করা হলেও বাজেটে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। আর্থিক লেনদেন-সংক্রান্ত অপরাধ কঠোরভাবে দমন করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তবে কঠোর অবস্থানের প্রতিফলন নেই তাঁর বক্তব্যে।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছে। তবে এ দুই খাতে বরাদ্দ ও পরিকল্পনা গতানুগতিক। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত নিয়ে তিনি আগের অর্জনের ফিরিস্তি দিয়েছেন। নতুন কী করবেন, তুলে ধরেননি। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশের কম। স্বাস্থ্য খাতে ১ শতাংশের কম। তবে এ দুই খাতে বরাদ্দ আগের চেয়ে সামান্য বাড়ানো হয়েছে।

নির্বাচনী ইশতেহারে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে জোর দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে এসব বিষয়ে বাজেটের পদক্ষেপে আশাবাদী হওয়ার উপকরণ কম। মধ্যবিত্ত শ্রেণির টিকে থাকার সংগ্রাম থেকে রেহাই দেওয়ার মতো তেমন পদক্ষেপ নেই। বরং কিছু কর আরোপে তাদের জীবনযাত্রার খরচ আরও বাড়বে। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জন্য ভালোমন্দ দুটিই আছে। স্থানীয় শিল্প প্রতিরক্ষণে কিছু পদক্ষেপ আছে। আবার কিছু অব্যাহতি ও ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। রপ্তানিকারকদের জন্য তেমন কোনো সুবিধা নেই। বরং তারা উৎসে কর কমানোর যে দাবি করেছিলেন, তা রাখা হয়নি। শেয়ারবাজারের জন্য বাজেটে নেই কোনো সুখবর। বরং মূলধনি মুনাফায় কর আরোপ এবং করপোরেট করে শর্ত দিয়ে জটিল করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রীর সব প্রস্তাবই যে জনগণের জন্য অস্বস্তির, তা বলা যাবে না। সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে গবেষণায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ইতিবাচক ফল দিতে পারে। সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ভাতাভোগী মানুষের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তবে আর্থিক সক্ষমতার অভাবে ভাতা তেমন বাড়ানো যায়নি। কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় মনোযোগ বাড়ানো হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তিসহায়ক নানা পদক্ষেপের ঘোষণা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আয়করের ক্ষেত্রে উচ্চবিত্ত মানুষের জন্য করহার বাড়ালেও নিচের পর্যায়ে অপরিবর্তিত রয়েছে। ন্যূনতম করও একই রয়েছে। এক ব্যক্তির কোম্পানির করহার কমানো হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রধান পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়নি।


খরচে লাগাম 
আগামী অর্থবছরে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এ আকার আগামী অর্থবছরের অনুমিত মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। জিডিপি ধরা হয়েছে ৫২ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছিল, যা ছিল জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। তবে সংশোধিত বাজেট ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে নতুন বাজেটে ব্যয়ের আকার ৮২ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে বেশি ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে নতুন বাজেট মাত্র ৩৫ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের মূল বাজেট আগের অর্থবছরের চেয়ে ৮৩ হাজার ৭০১ কোটি বা ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি ছিল। 

আয়ের উৎস 
সরকারের মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কর থেকে আসবে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের বাইরে থেকে আসবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অনুদানসহ সরকারের মোট প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। 

ঘাটতি 
বাজেটে অনুদান ছাড়া মোট ঘাটতি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অন্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৮ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto