Bangladesh

সংবিধানে বিচারবিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর পরামর্শ বিশিষ্ট নাগরিকদের

‘সংবিধানের ২২ নং অনুচ্ছেদে আইনবিভাগের ক্ষমতা পৃথকীকরণের বিষয়ে সংশোধন আনা যেতে পারে। এছাড়া আলোচিত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যের মতো না করে কীভাবে আমাদের মতো গঠন করা যায় সেটাও বিবেচনা করতে হবে’, যোগ করেন তিনি।

সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে দ্বিতীয় দিন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্যরা। এতে বিচারবিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ ও স্বাধীনতা নিশ্চিত, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো, চেক অ্যান্ড ব্যালান্স নীতি অবলম্বনসহ কিছু বিষয়কে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে বিশিষ্ট ৯ নাগরিকের সঙ্গে কমিশনের সদস্যরা বৈঠক করেন।

সভায় কি ধরনের মতামত দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সংবিধানে সংগঠন করার অধিকারের কথা বলা হলেও রাজনৈতিক দল সম্পর্কে  বর্ণনা নেই। বিচারবিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ নিয়েও পরামর্শ দিয়েছি। ঢাকার বাইরেও তিনটি পুরনো বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট ডিভিশন করা যেতে পারে। নিম্ন আদালতকে উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, জনসংখ্যা অনুপাতে ন্যায়বিচারের পর্যাপ্ত বন্দোবস্ত এখন নেই। এছাড়া সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন, পিএসসি, সিএজি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের বাইরে কমিশন বাড়ানো যেতে পারে। যেমন- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও স্থানীয় সরকার কমিশন।
 
অধ্যাপক তোফায়েল আরও বলেন, সংবিধানের মূলনীতি বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঠিক আছে কি না, সেটি বিবেচনা করতে হবে, বিশেষ করে সমাজতন্ত্র। এছাড়া সার্বভৌমত্বের যে ধারণা সেটি স্পষ্ট করতে বলেছি। সার্বভৌমত্ব যেন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়ানো থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যেমন- বিচারবিভাগের সার্বভৌমত্ব, আইনসভার সার্বভৌমত্ব।

‘সংবিধানের ২২ নং অনুচ্ছেদে আইনবিভাগের ক্ষমতা পৃথকীকরণের বিষয়ে সংশোধন আনা যেতে পারে। এছাড়া আলোচিত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যের মতো না করে কীভাবে আমাদের মতো গঠন করা যায় সেটাও বিবেচনা করতে হবে’, যোগ করেন তিনি।
 
অন্যদিকে অ্যাভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, অনেকেই নতুন সংবিধান লেখার কথা বললেও আমি বলেছি গণপরিষদ নির্বাচন কিংবা গণভোটের পরিবেশ নেই। তাই সংশোধন করাই ভালো। তবে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য নির্বাচন কমিশন ও জুডিশিয়ারি নিয়ে কাজ করতে হবে। বাদবাকি পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে করবে।
 
তিনি বলেন, রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে বলেছি। সেটি করা হলে অন্যান্য জাতি-গোষ্টীর সঙ্গে স্পষ্টত বৈষম্য করা হবে। এটি করা  কোনোভাবেই উচিত হবে না, যেটা এরশাদ করে গেছেন।
 
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রসঙ্গে সুব্রত চৌধুরী বলেন, সেপারেশন অব জুডিশিয়ারি নিয়ে মাজদার হোসেন মামলার রায় পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে বিচার বিভাগ স্বাধীনতা পাবে। এছাড়া ১৯৭২ এর সংবিধানের ১১৫ ও ১১৬ নম্বর অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপন করতে হবে। এছাড়া বিচারবিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ করা সময়ের চাহিদা।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, মানবাধিকার কর্মী হিসেবে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গভেদে সব মানুষের অধিকার সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিতের কথা বলেছি। 

তিনি বলেন, এমন একটি চেক অ্যান্ড ব্যালান্স অবস্থা রাখতে হবে যেন সংবিধান বারংবার ক্ষত-বিক্ষত না হয়। সেরকম কিছু সংযোজনের চিন্তা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর চরম ক্ষমতা হ্রাস ও ডাইনাস্টিক রুল নিয়ে বিধিবিধান আরোপ করতে হবে।

কিছু বিষয় বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় সংগীতের মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে যেন বিতর্ক না হয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। সেকুল্যারজিম নিয়ে সুষ্ঠু বর্ণনা প্রয়োজন, যেনো সেটি নিয়ে ভুল ধারণার অবকাশ না থাকে।

সভায় আরও অংশ নেন অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, মুফতি আব্দুল মালেক (খতিব, বায়তুল মোকাররম), খুশি কবির, মুসা আল হাফিজ, ড. শহিদুল আলম এবং মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী।

অন্যদিকে কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ এবং সদস্য অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ড. শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী এবং ফিরোজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। 

আগামী কয়েকদিন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের সঙ্গে সংবিধান সংস্কার কমিশন মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে কমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button