Hot

সংবিধান সংশোধন প্রশ্নে নির্বাচিত পার্লামেন্টেই অটল বিএনপি

সংস্কার নিয়ে বিএনপি’র সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল সংসদ ভবনের এলডি হলে সকাল ১১টায় বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল পৌনে ৫টার দিকে। দীর্ঘ আলাপচারিতার পরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি
উভয়পক্ষ। আবার বেশ কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনার সুযোগ হয়নি। এসব বিষয়ে আগামী রোববার ফের বৈঠক হবে বলে বিএনপি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, দ্বিমত করা বিষয়গুলো নিয়ে মূলত বিএনপি’র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। আলোচনার মাধ্যমে কিছু বিষয় পরিষ্কার হয়েছে। কিছু বিষয়ে পরবর্তীতে আলোচনার জন্য বিএনপি’র পক্ষ থেকে সময় নেয়া হয়েছে। কয়েকটি বিষয়ে প্রয়োজনে দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। কমিশন সদস্যরা বিএনপি নেতাদের বক্তব্য শুনেছেন, তাদের দ্বিমতের বিষয়গুলো নোটে নিয়েছেন। বৈঠকে বিএনপি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, সংবিধান সংস্কারের বিষয়টি কেবলমাত্র নির্বাচিত পার্লামেন্টই করতে পারে। এটি দলের পক্ষ থেকে আগের আলোচনায়ও বলা হয়েছিল। এখনো বলা হচ্ছে। বিএনপি এ বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে।

ওদিকে বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে নয় বিএনপি। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে স্প্রেডশিটের ‘বিস্তর ফারাক’ও দেখছে দলটি। ‘স্প্রেডশিটে সংক্ষিপ্ত হ্যাঁ/না জবাব দেয়ার জন্য যে কাগজগুলো দিয়েছে তাতে করে অনেকটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে এবং বিচারবিভাগের মতামত নিয়ে প্রতিবেদনে ‘মিস লিড’ করা হয়েছে বলেও মনে করছে বিএনপি। এ ছাড়া বৈঠকে সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে মতপার্থক্য ছিল এবং একমতও ছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমিশনের যুক্তি গ্রহণ করেছে বিএনপি। সেই বিষয়গুলো দলীয় ফোরামে আলোচনা করবে। এজন্য কমিশনের কিছু পয়েন্ট নোট করেছে দলটি এবং তাদেরও অধিকাংশ বক্তব্য নোট করেছে কমিশন। ওদিকে সংবিধানের প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি, ফান্ডামেন্টাল রাইটসসহ অনেক ক্ষেত্রে তারা একমত পোষণ করেছেন। গতকাল বৈঠকে কমিশনের সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি, ফান্ডামেন্টাল রাইটস এবং আইন বিভাগের সংস্কার নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছে বিএনপি। এরমধ্যে প্রায় সব বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে কাছাকাছি ঐকমত্যে পৌঁছেছে দলটি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতভিন্নতাও রয়েছে। এসব বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ, সাবেক সচিব আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা প্রায় পৌনে ৫টা পর্যন্ত, দুপুরে নামাজের বিরতি বাদ দিয়ে সার্বক্ষণিক আলোচনা করেছি। আমরা আলোচনা শুরু করেছিলাম সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রদত্ত রিপোর্টের উপরে। পরবর্তীতে আমরা বিচারবিভাগ সংস্কার সংক্রান্ত রিপোর্টের উপরে কিছুটা আলাপ-আলোচনা করেছি। আবার পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। রোববার সকাল ১১টা থেকে আমরা আবার বসবো। কারণ এগুলো বিস্তারিত আমরা দফাওয়ারি আলোচনা করে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে এখন আমি বলতে পারবো না যে,  স্পেসিফিক আমরা কতোগুলো দফায় একমত হয়েছি। আমরা প্রায় সব বিষয়ে কাছাকাছি আসতে পেরেছি। কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের ভিন্নমত তো থাকতেই পারে, আছে। 

তিনি বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি, ফান্ডামেন্টাল রাইটস, আইন বিভাগ পর্যন্ত আজকে (বৃহস্পতিবার) আমরা এগোতে পেরেছি, সংবিধানের বিষয়ে। বাকি নির্বাহী বিভাগ, এক্সিকিউটিভ আমরা শুরু করবো, জুডিশিয়ালটা আমরা আলাদা আলোচনা করেছি, কিন্তু সংবিধানের মধ্যেও যে বিচার বিভাগের অংশটি আছে- সেটা আমরা একসঙ্গে আলোচনা করবো। আর নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, প্রশাসন-এগুলো আজকে আর আলোচনা হয়নি। সেটা পরবর্তী দিনে হবে। তবে সংবিধান সংস্কার কমিশনের যে রিপোর্টগুলো আমরা আলোচনা করেছি, তাতে আমরা সংবিধানের প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি, ফান্ডামেন্টাল রাইটস-এগুলোর বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রে আমরা একমত পোষণ করতে পেরেছি। কিছু কিছু আবার আমাদের সুচিন্তিত মতামত দেবো বলে বলেছি। আমাদের মতামতের প্রেক্ষিতে পুনরায় উনারা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবেন। 

সালাহউদ্দিন বলেন, কিছু কিছু বিষয় এমন আছে যে, যেসমস্ত বিষয়গুলো এখানে বিবেচিত করা উচিত বলে আমরা মনে করেছি, সেটা আবার আমাদের দলীয় ফোরামেও আলোচনা করতে হবে। এবিষয়ে আমরা পরে জানাবো। আর সংবিধানের সংস্কারের বিষয়ে আমরা বিশেষ করে ৭০ অনুচ্ছেদে আমরা আমাদের মতামতটা দিয়েছি। উনারা তাদের মতামত দিয়েছেন। উনারা সেটা কতোটুকু গ্রহণ করবেন, না করবেন- সেটা পরবর্তীতে দেখা যাবে। আমরা আমাদের যুক্তি দিয়েছি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচারে, সামাজিক কালচারে এবং প্র্যাকটিসে যদি আমরা ৭০ অনুচ্ছেদ অর্থ বিল ছাড়া বাকি সর্বক্ষেত্রে ওপেন করি তাহলে সরকারের স্থায়িত্ব থাকবে না। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপক বাধা আসতে পারে। সেই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের অতীতের রাজনীতিতে নজির পাই। সেক্ষেত্রে আমরা বলেছি, অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধন বিল আস্থাবোধ, জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বাদে সংসদ সদস্যরা যেকোনো বিষয়ে আলাপ-আলোচনা এবং সংসদে ভোট দিতে তাদের কোনো বাধা থাকবে না।      

বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, অন্য যে সমস্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে-আমরা গণভোটের বিষয়গুলো বলেছি। সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে বলেছি, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে উনাদের যে প্রস্তাব ছিল। সকল সংবিধান সংশোধনীগুলো সংশোধনের পরবর্তীতে উভয় কক্ষে পাস করার পরে, তারপরে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য যখন যাবে- তখন গণভোট হবে। আমরা বলেছি, সংবিধানের সকল সংশোধনী গণভোটের জন্য প্রযোজ্য নয়। শুধুমাত্র যে সমস্ত বিষয়াদি গণভোটের জন্য নির্ধারিত থাকবে। যেমন বর্তমান সংবিধানে আছে প্রস্তাবনা, আর্টিকেল ৮ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, আর্টিকেল ৪৮ ও ৫৬ এবং ১৪২ যেটাতে সংবিধান সংশোধনীর কার্যক্রমগুলোর উপায় বলা আছে। ১৪২ এটা যদি সংশোধন করতে হয় তাহলে গণভোটে যেতে হয়। এটা এখন রিএনস্টেট হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ১৫তম সংশোধনীতে যেটা মামলাতে এসেছে। তবে সেটা পার্লামেন্টে গৃহীত হওয়ার পরে সেটা কার্যকর হবে। এখন এ সমস্ত ক্ষেত্র ছাড়াও যদি ভবিষ্যৎ পার্লামেন্ট কোনো কোনো বিষয়ে গণভোটের জন্য উপযুক্ত মনে করে যে পার্লামেন্টে গৃহীত হওয়ার পরে রাষ্ট্রপতির কাছে যখন যাবে গৃহীত হওয়ার জন্য যাবে। সে সমস্ত বিষয় গণভোটের জন্য দেয়া যায় কিনা তা পরবর্তী পার্লামেন্ট চিন্তা করবে। এখন ঢালাওভাবে যদি সকল সংশোধনী গণভোটের জন্য বিধান রাখি তাহলে সেটা অনুচিত হবে। আমরা মনে করি উনারা সেটা বুঝতে পেরেছেন। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বিষয়ে আজকে আমার ওই বিষয়ে আলোচনা করতে পারিনি। দফাওয়ারি আলোচনার শুরুতে আমরা কিছুটা এ বিষয়ে বলেছি। যে সমস্ত প্রস্তাবনার ওপরে আমরা মতামত দিয়েছি কমিশনের রিপোর্টের ওপরে। সেখানে আমরা বলেছি, আমরা এই ধারণার সঙ্গে একমত নই। কারণ জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল যেটাকে উনারা এনসিসি নামে অভিহিত করেছেন। এটার যদি প্রবর্তন হয়, এটার কোনো প্র্যাক্টিস ছিল না আমাদের দেশে। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস ও পার্লামেন্টের ইতিহাসের জন্য নতুন হবে। এই প্র্যাক্টিসটা হঠাৎ করে এখানে আনার ব্যবস্থা হলে সেটা অন্যান্য ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগকে এবং আইনসভাকে দুর্বল করে দেয়া হচ্ছে কিনা, রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে। যেই সময় পার্লামেন্ট থাকবে না। অথবা সংসদ ভেঙে যায়, সেই সময়ের ক্ষেত্রে দেখা যাবে- সেই কমিশন খুব বেশি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে অন্যকিছু করে কিনা, এগুলোও আমরা চিন্তা-ভাবনা করেছি। তারপরও আমরা বলেছি, নির্বাচিত পার্লামেন্ট বিস্তর আলোচনার মধ্যদিয়ে গ্রহণ করা যাবে কিনা, তখন আলোচনা করা যাবে। এখন আমরা নীতিগতভাবে একমত হইনি। 

সালাহউদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি ৮, ৯, ১০, ১১, ১২ পর্যন্ত এখানে আমরা মূলত পঞ্চম সংশোধনীর পূর্ব পর্যন্ত ফেরত যেতে চেয়েছি। এখানে একটা ভুল বোঝার কারণ ছিল সংস্কার কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে ওখানে ধর্মনিরপেক্ষতাসহ অন্যান্যগুলো বাতিলের জন্য প্রস্তাব করেছে। আমরা যেভাবে দিয়েছি মিসইন্টারপ্রেড, এজন্য যে আমরা সংবিধানের ৮, ৯, ১০  স্প্রেডশিটের জন্য ৫, ৬, ৭ দফা কম্পাইল করে বলেছি। রাষ্ট্রপরিচালনার এই নীতিমালাগুলো পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্ব অবস্থায় যাওয়া হোক। আমরা পঞ্চদশ সংশোধনী সমর্থন করি যেটা গৃহীত হয়েছে। ঐখানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে। ঐখানে গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদসহ সবকিছু আছে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসেবে এবং সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে। সুতরাং আমার বহুত্ববাদের পক্ষেও নই, ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির পক্ষেও নই। কিন্তু আমরা লেখার সময় লিখেছি পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্ববর্তী অবস্থা, এইজন্য একটা মিসইন্টাপ্রেট হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। আসলে তা নয়, আমরা  এখন পরিষ্কার করছি- পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্যে গৃহীত রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি এবং সংবিধানের মূলনীতি যেটা আছে, সেটা চাই। এখন যেটা প্রস্তাব করা হয়েছে বহুত্ববাদ সেটার বিরোধিতা করেছি আমরা। তবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার যে কথাগুলো স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রে  উল্লেখ করা আছে। সে বিষয়ে উনার প্রস্তাবনা ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা, উনারা প্রস্তাব করেছেন। আমরা বলেছি, এ বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে একমত, তবে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে আমরা সেটা জানাবো। 

সংবিধান সংস্কার কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদনে ১৩১টি প্রস্তাব থাকলেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে ৭০ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি সংবিধান সংস্কার কমিশনের ২৫টি প্রস্তাবে একমত, ২৫টির মতো বিষয়ে আংশিকভাবে একমত। বাকি বিষয়গুলোতে একমত হতে পারেনি।

বিচার বিভাগের মতামত নিয়ে প্রতিবেদনে ‘মিস লিড’ করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিস্তারিত প্রতিবেদনের ১৫০টি মতামতের মধ্যে ৮৯টির বিষয়ে মতামত দিয়েছি। বাকিগুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রে একমত হওয়া বা মন্তব্যসহ একমত হওয়ার কথা জানিয়েছি। যেসব বিষয়ে ‘হ্যাঁ/ না’ তে মতামত চাওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে বিস্তারিত প্রতিবেদনের ‘বিস্তর ফারাক’ দেখার কথা তুলে ধরে এই বিএনপি নেতা বলেন, সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের সংশোধনী ব্যতিরেকে বিচারক নিয়োগের অধ্যাদেশ জারি করা ততক্ষণ পর্যন্ত অসাংবিধানিক হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তা সংবিধানে গৃহীত হচ্ছে। ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা সংবিধানসম্মত হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রইবে। বিচার বিভাগ কর্তৃক সংবিধান লঙ্ঘন সমুচিত হবে না।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের অধিকাংশ বিষয় সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, কিছু কিছু বিষয়ে তারা এমন প্রস্তাব দিয়েছে, যা বাস্তবায়ন করলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সত্তা বজায় থাকবে না।

বৈঠকের শুরুতে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বার বার আমরা দেখছি- এদেশে গণতন্ত্র হোঁচট খেয়েছে, ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এ দেশে, সেগুলো যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে। এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো সংগ্রাম করেছে, বিএনপি অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা, যাতে করে বাংলাদেশে একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারি।

বৈঠকে বিএনপি’র পক্ষে সূচনা বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংস্কার একটা চলমান অনিবার্য প্রক্রিয়া, হতেই হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলায়, বদলাবেই, অনিবার্য চলমান প্রক্রিয়া বলছি এটাকে। আমরা সবাই চাই, ভালো চাই। আরও ভালো চাই, আরও ভালো চাই। কিন্তু খুব ভালো করার জন্য যেন আমরা এত সময় না নেই, যাতে মানুষের পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা স্তিমিত হয়ে যায়। নিশ্চয় আমরা ভালো করতে চাই এবং এই ভালো করার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে, সব সময় থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা কালকেও (বুধবার) প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, বিএনপি’র চাইতে বেশি সংস্কার বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল করেছে? রাজনৈতিকভাবে বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা তো বিএনপি করেছেন। বহু দলীয় গণতন্ত্র তো বিএনপি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তো বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক শাসনব্যবস্থা তো বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছে, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ তো অনেক ক্ষেত্রে করেছে। এমনকি বিএনপি তো গ্রাম সরকার প্রবর্তন করেছে। তাতে আর কতো দূর পর্যন্ত আমরা প্রশস্ত করতে চাই। আপনি মুক্তবাজার অর্থনীতি বিএনপি চালু করেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন বিএনপি গঠন করেছে। আজকে অর্থনীতির সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত হলো ভ্যাট, বিএনপি করেছে। আজকে অর্থনীতির মূলস্তম্ভ পোশাক খাত বিএনপি’র হাতে হয়েছে, কৃষি উন্নয়ন, প্রবাসী কর্মসংস্থান, পল্লী বিদ্যুতায়ন থেকে শুরু করে সমবায় উন্নয়ন, কুটির শিল্প বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে না, বিএনপি সংস্কারের দল।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, তারপরও কেউ কেউ নানা কথা বলেন, তারা যখন সংস্কারের ‘স’ উচ্চারণ করেনাই, তখন তো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ দিয়েছেন। কেউ যখন সংস্কারের কথা ভাবেনি তখন শহীদ জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন। আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি এবং আমরা এটা বলেছি, এর চেয়ে ভালো প্রস্তাব থাকলে সেটা সাদরে গ্রহণ করবো। কাজেই যদি ঐকমত্য কমিশনের সনদ নাও হয় বিএনপি’র জন্য সনদ আছে একটা, সংস্কারের সনদ। কাজেই আমরা সংস্কারের পক্ষে। আমরা তো শুধু একটা কথা বলবো, সবকিছুর মূলে জনগণ। জনগণের সম্মতিতে যেন সব হয়। 

গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপিসহ সবগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন। এরপর থেকে সংসদ ভবনের এলডি হলে আলী রীয়াজের নেতৃত্বে কমিশন সদস্যরা আলাদা আলাদাভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে। সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০শে মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই পর্যন্ত তারা ১১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor