সংসার চালানো দায়
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহব্যবস্থাপক বেলাল হোসেন। গত বুধবার ছুটি থাকায় আলফাডাঙ্গা সদর বাজারে ৫০০ টাকা নিয়ে আসেন বাজার করতে। দুই কেজি আলু ১০০ টাকা, বেগুন এক কেজি ৬০ টাকা, কচুর মুখি এক কেজি ৬০ টাকা, ধুন্দল ও পটোল কিনলেন ৮০ টাকা দিয়ে। এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন ৮০ টাকা দিয়ে। রসুনের দাম অতিরিক্ত থাকায় মাত্র ৫০০ গ্রাম কিনেছেন ১২০ টাকায়। স্ত্রী বলেছিলেন তরিতরকারির পাশাপাশি কাঁচামরিচ কিনতে। কিন্তু পাঁচ ধরনের তরকারি কেনার পর আর টাকা ছিল না বেলালের পকেটে। ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচের দাম আলফাডাঙ্গা বাজারে ৪০ টাকা। শেষে দোকানিকে এক কেজি আলু ফেরত দিয়ে ২০০ গ্রাম মরিচ কিনে বাড়ি ফিরতে হয়েছে বিলাল হোসেনকে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আয় না বাড়লেও খরচ বেড়েছে অনেক।’আলফাডাঙ্গা পৌরসভার বাকাইল গ্রামের ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী আক্কাস বিশ্বাস। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংবাদপত্র, কার্টন, লোহা, প্লাস্টিকসহ ভাঙাড়ি মালপত্র সংগ্রহ করতেন। দিনে আয় হতো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এখন মালপত্রের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগে এক কেজি কার্টনের দাম ছিল ১৬ থেকে ১৮ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা কেজি দরে। হঠাৎ এসব মালপত্রের দাম পড়ে যাওয়ায় বাসাবাড়ির লোকজন ও ব্যবসায়ীরাও বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। ফলে আক্কাসের দৈনিক আয় দাঁড়িয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। রোজগার কমলেও খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। সীমিত আয়ে সংসারের খরচ চালাতে নাভিশ্বাস উঠছে তাঁর।
আলফাডাঙ্গা সদর বাজার, গোপালপুর হাট, জাটিগ্রাম হাট, হেলেঞ্চা হাটসহ কয়েকটি হাটে ঘুরে দেখা গেছে, ছয় মাস আগের তুলনায় শাকসবজির দাম অনেক বেড়েছে। তবে দাম ওঠানামা করে। স্থানীয় চাষিরা সবজি বেশি করে বাজারে নিয়ে এলে দাম কিছুটা কমে। সরবরাহ কম থাকলে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যে সবজির দাম কমবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
আলফাডাঙ্গা সদর বাজারে তরকারির দাম হাটের তুলনায় অনেক বেশি রাখা হয়। বাজার করতে আসা অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গৃহস্থরা বাজারে তরকারি আনা মাত্রই ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে পাইকারি দরে কিনে কয়েক গুণ দাম বাড়িয়ে দেন। এ নিয়ে মাঝেমধ্যে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হতে দেখা যায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, এখন সবজির মাত্র ৩০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়। বাকি ৭০ শতাংশ অন্য জেলা থেকে আসে। গত সপ্তাহের ৪০ টাকার আলু এখন ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ ১৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৭০, আদা ও রসুন ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া করলা ৬০, পটোল ৪০, ঢ্যাঁড়শ ৫০, বেগুন ৬০, কচুর মুখি ৬০, মিষ্টিকুমড়া প্রতি পিস ৪০ এবং চালকুমড়া ও লাউ আকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পুঁইশাক, কলমিশাক, লালশাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম বাড়ার কথা জানান স্থানীয় সবজি বিক্রেতা ফারুক হোসেন মিয়া। তাঁর দাবি, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। শীতকালীন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে, দাম বেশি থাকলেও সরবরাহ বাড়লেই দাম কমে যাবে। সব ধরনের মাছ-মাংসের দামও বেড়েছে। আলফাডাঙ্গা সদর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র বলেন, এখন বর্ষা মৌসুম পেরিয়ে গেলেও মাছ ধরা পড়ছে না। নদীর মাছ প্রকারভেদে ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। চাষ করা ছোট রুই, মাঝারি সাইজের কাতলা, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ও ব্রিগেড মাছ দুই মাস আগে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত। এখন ৩০০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। ১৫০ টাকার পাঙাশ এখন ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ ব্যবসায়ী পবন দাশ বলেন, স্থানীয়ভাবে মাছের জোগান কম। দেশি মাছ সামান্য কিছু এলেও অনেক দামে বিক্রি হয়। চাষ করা মাছ আনা হয় খুলনা-বাগেরহাটসহ অন্য জেলা থেকে। পাঙাশ আনা হয় ময়মনসিংহ থেকে। যাতায়াত খরচ বেশি হওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
ছয় মাস আগের দরের সঙ্গে তুলনা করলে শাকসবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানান আলফাডাঙ্গা সদর বাজার সবজি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জুদ্দু মিয়া। তিনি বলেন, প্রতিবছর এ সময় শাকসবজির দাম কিছুটা বাড়ে। এখন বাজারে বিক্রি হওয়া শাকসবজির ৭০ শতাংশের বেশি জেলার বাইরে থেকে আসে। এ জন্য দাম বেশি।
শাকসবজির দাম বাড়ার বিষয়ে ইউএনও রফিকুল হক বলেন, বাজার তদারকি করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।