Bangladesh

সংস্কার নির্বাচনে বিভক্তি

নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘিরে সরগরম দেশের রাজনীতি। সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘কম সংস্কার চাইলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আর বেশি সংস্কার চাইলে জুনে নির্বাচন হবে।’ বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সংস্কার ও সুস্পষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। দেশের প্রধান বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি বলছে, সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। ন্যূনতম সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। অন্যতম রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী বলছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন দিতে হবে। আর আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের নিয়ে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের আগে জাতীয় নির্বাচনের বিরোধী। এ নিয়ে চলছে তর্কবিতর্ক। নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে দলগুলোতে বিভক্তি এখন প্রকট।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংস্কারের বিষয়ে সুপারিশগুলোর সঙ্গে একমত নয় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিচার বিভাগ সংস্কারের ২৩ সুপারিশের মধ্যে ২০টিতে বিএনপি একমত। দুদক সংস্কারের ২০ সুপারিশের ১৯টিতে একমত ও আংশিক একমত। জনপ্রশাসন সংস্কারের ২৬ প্রস্তাবের অর্ধেকের বেশি বিষয়ে দলটি একমত, বাকিগুলোর বিষয়ে মন্তব্য রয়েছে। আর সংসদে দুজন ডেপুটি স্পিকারের মধ্যে একজন বিরোধী দল থেকে মনোনীত করতে একমত বিএনপি।

এদিকে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে নিজেদের মতামত দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। মতামতে দলটি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে। অন্যদিকে এনসিপি সংস্কার বিষয়ে প্রস্তাবিত ১৬৬ সুপারিশের মধ্যে ১১৩টিতে একমত হয়েছে।

রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ১৬৬টি প্রশ্নমালার যে স্প্রেডশিট পাঠিয়েছে, তার মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ১২০টিতে একমত হয়েছে। সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত ৭০ প্রস্তাবের মধ্যে ৫১টিতে এলডিপি একমত, ১৬টিতে একমত নয়, একটিতে আংশিকভাবে একমত এবং দুটি প্রস্তাব অস্পষ্ট বলে মনে করে দলটি। বিচার বিভাগের ২৩টির মধ্যে ২২টিতে একমত আর একটিতে আংশিকভাবে একমত, দুর্নীতি দমনের ২০টির মধ্যে সবকটিতে একমত। জনপ্রশাসনের ২৬টির মধ্যে ১১টিতে একমত, ১৫টিতে একমত নয়। নির্বাচন সংস্কারের ২৭ প্রস্তাবের মধ্যে ১৬টিতে একমত এবং ১১টিতে দলটি একমত নয় বলে কমিশনকে জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে বারবার দাবি জানাচ্ছে বিএনপি। দলটি চায় যৌক্তিক সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন। ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ধরে নিয়ে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে। জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে উল্লেখ করে নেতা-কর্মীদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির দাবির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করছে সমমনা দলগুলো। তারা বিএনপির দাবির সঙ্গে মিল রেখে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছে। জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বাধীন ১২-দলীয় জোট, ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোট। এ ছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি  (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটও ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। এখন যতটুকু করা সম্ভব, তা করা উচিত। বাকিটা নির্বাচিত সরকার এসে সম্পন্ন করবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার ও বিচারের কথা বলে কেবল সময়ক্ষেপণ করছে। তারা এখনো স্পষ্ট করে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিচ্ছে না, এমনকি কোন বছরের ডিসেম্বর বা জুনে নির্বাচন হবে তা-ও পরিষ্কার করছে না। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

বিএনপির আন্দোলনের শরিক রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূস ভালো কাজ করছেন। তাঁর প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু অনির্বাচিত সরকার অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকতে পারে না। দেশের মানুষ ১৬ বছর ভোট দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা সরকার ভোটের ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমান সরকারের উচিত নির্বাচনের জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা। এদিকে নির্বাচনের সময়সীমা ও সংস্কার ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অবস্থান প্রায় ভিন্ন। দল দুটির দাবি মৌলিক সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান গতকাল লালমনিরহাটে সমাবেশে বলেছেন, সংস্কার ও বিচার নিশ্চিত করেই জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার, সহাবস্থানসহ নির্বাচনের শর্ত পূরণ করতে হবে। নইলে নির্বাচনের কমিটমেন্ট ঠিক থাকবে কি না আল্লাহ ভালো জানেন। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন বলেন, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সে নির্বাচনে এনসিপি অংশ নেবে কি না সেটাও বিবেচনাধীন থাকবে। নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান বিচার, বিচারের রোডম্যাপ এবং সংস্কার ও জুলাই সনদ কার্যকর করতে হবে।

এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ, আমার বাংলাদেশ পার্টিসহ (এবি পার্টি) আরও বেশ কিছু রাজনৈতিক দলেরও দাবি সংস্কার শেষ করে নির্বাচন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, গণ অভ্যুত্থানের পরও যদি নির্বাচনের দাবি তুলতে হয়, সেটা বিব্রতকর। গণতান্ত্রিক সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। গণহত্যার বিচার ও সংস্কার নির্বাচনের বিপরীতে দাঁড় করানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ অপরাধের বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলসমূহের জনগণের কাছে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তি অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের অন্যতম উপাদান হলো নির্বাচন। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় গণঅধিকার পরিষদ। তার আগে সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন তিনটি আলাপ একই সঙ্গে হতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d