Hot

সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্যে জোর ঢাকায় গুতেরাঁর ব্যস্ত দিন

বিচার, সংস্কার, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও পারস্পরিক আস্থা তৈরিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ। গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। বিএনপিসহ ৭টি রাজনৈতিক দল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের দুই উপদেষ্টাকে নিয়ে এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও পুনঃনির্মাণের ক্ষেত্রে সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ। তিনি বলেন, আপনারা জাতিসংঘকে একটি বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে গণ্য করতে পারেন। বাংলাদেশের জনগণের পাশে থেকে জাতিসংঘ সকলের জন্য টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়তা করবে। গুতেরাঁ বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন জানানো। আমি বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যৎ বৃহত্তর গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশাকে স্বীকৃতি দিচ্ছি।

ওদিকে জাতিসংঘ ঢাকা অফিসের আয়োজনে হওয়া বৈঠকে দলগুলোর নেতারাও ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিয়েছেন। বৈঠক নিয়ে বিএনপি নেতাদের মাঝে কিছুটা বিরক্তিভাবও দেখা গেছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গোলটেবিল বৈঠকের বিষয়ে তিনি ঠিক বুঝেননি বলে উল্লেখ করেন। গোলটেবিল  বৈঠকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে নির্বাচন কেন্দ্রিক সংস্কারগুলো দ্রুত শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলা হয়। জামায়াত সংস্কার, সুষ্ঠু নির্বাচন, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। নতুন দল এনসিপি বিচার ও সংস্কারে জোর দিয়েছে। এ ছাড়াও গণপরিষদের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার, জুলাই সনদসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছে। এ ছাড়া বৈঠকে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রধান সংস্কার নিয়ে কমিশনের বক্তব্য তুলে ধরেন। বৈঠকে অংশ নেয়া সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিব গোলটেবিল বৈঠকে মূলত সংস্কার প্রক্রিয়া বুঝতে চেয়েছেন। বৃহত্তর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আস্থার ওপর জোর দিয়েছেন। আর বাংলাদেশের আগামীর নির্বাচন যেন বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয় সে বিষয়েও কথা হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যতা থাকলেও গণতন্ত্র অটুট রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বৈঠকে সরকারের পক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা প্রফেসর আসিফ নজরুল, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার বিষয়ক কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এর সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও রূপান্তরের মধ্যদিয়ে যাওয়ার সময় জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও পুনর্মিলনের ক্ষেত্রে সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ। তিনি বলেন, আপনারা জাতিসংঘকে একটি বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে গণ্য করতে পারেন। বাংলাদেশের জনগণের পাশে থেকে জাতিসংঘ সকলের জন্য টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়তা করবে। গুতেরাঁ বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন জানানো। তিনি বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমি বাংলাদেশে আসতে পেরে আনন্দিত যে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। আমি বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যৎ বৃহত্তর গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশাকে স্বীকৃতি দিচ্ছি। গুতেরাঁ বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আর একটি ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও তাদের ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, রমজান সকলকে মানবতার সংযোগকারী সর্বজনীন মূল্যবোধ: সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও উদারতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বাংলাদেশ তার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে শান্তি, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার মূল্যবোধের জীবন্ত প্রতীক। বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষার অন্যতম বৃহত্তম অবদানকারী দেশ উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বিশ্বে সবচেয়ে কঠিন ও বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে ইফতার করার কথাও উল্লেখ করেন। এর মাধ্যমে তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও তাদের আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশিদের প্রতি তার সংহতি প্রকাশ করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে মানবিক বিপর্যয় এড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আরও সহায়তা দেয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমি আন্তরিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই, যাতে আমরা এই মানবিক বিপর্যয় এড়াতে পারি।

বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব সংস্কারের ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তিনি বলেন, মূলত এখানে সংস্কারে যে কমিশনগুলো করা হয়েছে, সে বিষয়গুলো জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। আমরা আমাদের বক্তব্যের মধ্যে যে কথাগুলো বলে আসছি, সেই একই কথা বলেছি। ফখরুল বলেন, সংস্কার অবশ্যই করতে হবে, সেই সংস্কারের কথা সবার আগে বলেছে বিএনপি। কিন্তু সংস্কারটা যেন দ্রুত করা যায়। আমরা যেটা বলেছি, মূলত নির্বাচন কেন্দ্রিক বিষয়গুলো সংস্কারগুলো করে ফেলা, তারপর দ্রুত নির্বাচন করা, এরপর একটি সংসদের মাধ্যমে বাড়তি সংস্কারগুলো করা। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, এটাই আমরা বলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব কিছু বলেছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, তিনি কোনো কমেন্ট (মন্তব্য) করেননি। এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, আসলে এই গোলটেবিলটা… আমি ঠিক বোঝেননি আর কি..। 
নির্বাচন নিয়ে কোনো টাইম ফ্রেমের কথা বলেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কোনো টাইম ফ্রেমের কথা বলার প্রয়োজন নেই। সংস্কার আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমরা সংস্কার কমিশনগুলোর সঙ্গে কথা বলছি, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। তারা যা চাইছে আমরা সব দিয়ে দিচ্ছি। ইতিমধ্যে আমাদের সঙ্গে একটা বৈঠক হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমরা আমাদের টাইম ফ্রেমটা দিতে যাবো কেন? নির্বাচন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বৈঠকে উপস্থিত থাকা দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতিসংঘের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আপনারা বসে রিফর্মস কী নেবেন, সেটা ঠিক করেন। উনি বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীর মধ্যে একটা নজির সৃষ্টি করবে আগামী নির্বাচন, এমনটা উনি আশা করেছেন। অন্যদিকে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সংস্কার, সুষ্ঠু নির্বাচন, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। 

বৈঠক শেষে দলটির নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলেছি। একটা ফেয়ার নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের অধিকাংশ বক্তব্য সমর্থন করে বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তিনি আশাবাদী। আর নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিচার ও সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বৈঠকে বক্তব্য রেখেছে। এ ছাড়া, জুলাই সনদ, গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ৫ই আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশের গণতন্ত্র যে একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে সেটাতেই আলোকপাত করা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের প্রধানরা তাদের স্ব স্ব সংস্কার রিপোর্টের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছেন। সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা তাদের দলীয় অবস্থান তুলে ধরেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষে আমরা মনে করি, বিচার ও সংস্কার জনগণের কাছে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের অন্যতম কমিটমেন্ট। তিনি বলেন, মৌলিক সংস্কারের ভিত এই সরকারের সময়েই রচনা করতে হবে। এ ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দল মিলে ঐকমত্য পোষণ করতে হবে। জনগণের কাছে আমাদের সংস্কারের যে কমিটমেন্ট, সংস্কারের যে ধারাবাহিকতা সেটা বাস্তবায়নের জন্য জুলাই সনদের দ্রুত বাস্তবায়নের কথা বলেছি। সংবিধান সংস্কার নিয়ে এনসিপির অবস্থান তুলে ধরেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার গণপরিষদের মাধ্যমেই করতে হবে। সংসদে সংবিধান সংস্কার টেকসই হবে না, বাংলাদেশের ইতিহাস থেকেও এটাই দেখতে পাই। আমরা আমাদের এই দলীয় অবস্থান সংক্ষেপে বলেছি। জাতিসংঘ মহাসচিবও তার জায়গা থেকে বলেছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যেন সমঝোতায় আসে, একটা ঐকমত্যে আসে সেটা চেয়েছেন। গণতন্ত্রের ট্রু এসেন্স সেটাকে মাথায় রেখেই যেন আমরা একসঙ্গে কাজ করি, একটি ঐক্যে আসতে পারি সেটাই তিনি তার জায়গা থেকে বলেছেন। এনসিপি’র শীর্ষ এই নেতা বলেন, আমরা মনে করি, নির্বাচনকে আমরা একটি সংস্কারের প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি, সংস্কারের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখি। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন কোনো কাজে দেবে না। অন্য সব রাজনৈতিক দলও এই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে। এখানে মতপার্থক্য হচ্ছে কোন সংস্কারটা কখন হবে, নির্বাচনের আগে কতোটুকু হবে, নির্বাচনের পরে কতোটুকু হবে। আমরা মনে করি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে, মতপার্থক্যগুলা কেটে যাবে। আমরা ঐকমত্যে আসতে পারবো। তিনি বলেন, আমরা জাতিসংঘের কাছে বিচার ও সংস্কার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি, ধন্যবাদ জানিয়েছি। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, আমরা যেন নিজেরা এক হতে পারি। আমরা যদি নিজেরা ঐকমত্যে আসতে পারি তারা তাদের জায়গা থেকে সহযোগিতা করবেন।
ওদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে তরুণদের সঙ্গেও গোলটেবিল বৈঠক করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বৈঠকে তিনি জুলাই আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ও নতুন বাংলাদেশ নিয়ে তরুণদের ভাবনা জানতে চান। বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, আমাদের একেকজন একেক বিষয়ে অভিজ্ঞ। কেউ আইনের বিষয়ে, কেউ অর্থনীতির বিষয়ে বলেছে। ইয়ুথদের পক্ষ থেকে আমরা জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছি। আন্দোলনে বাংলাদেশের রাস্তা ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন থেকে একটি রিপোর্ট করা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক জানিয়েছেন, সাইকেল অব রিভেঞ্জ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া প্রয়োজন। নির্দিষ্ট করে আমরা প্রথমত বলেছি, আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের বিচার আন্তর্জাতিক  ট্রাইব্যুনালে নেয়া যায় কিনা। দ্বিতীয়ত, ছাত্রদের পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বর্তমানে ডব্লিউএইচও-এর সাউথ ইস্ট রিজিয়নের হেড হিসেবে আছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেব্রিকেট করে তাকে বসিয়েছেন। পুতুলের আপয়েন্টটা (নিয়োগ) রিভিউ করার বিষয়ে। তৃতীয়ত, সোশ্যাল মিডিয়াতে বর্তমানে ভয়াবহ পরিমাণে ফেইক নিউজ, মিস ইনফরমেশনসহ নানাভাবে বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা মব ভায়োলেন্স হয়েছে বাংলাদেশে। মব জাস্টিস করে তাদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলছেন। এই বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। নারীর নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায় নিয়ে মহাসচিবকে অবহিত করা হয়েছে। অ্যান্তনিও গুতেরাঁ আমাদের বলেছেন শেখ হাসিনার বিষয়ে অন্যান্য দেশের মতামত ও রিভিউ করলে হয়তো বিচার করা সম্ভব আন্তর্জাতিক আদালতে। বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে দেয়ার কথা ভারতের। তারপরও এটা দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয়। রুপাইয়া বলেন, আন্দোলনের পর আদিবাসীদের ওপর হামলার বিষয়ে আমরা অ্যান্তনিও গুতেরাঁ স্যারের কাছে বিষয়টা তুলে ধরেছি। অনলাইনে সাইবার বুলিং, আদিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত। আদিবাসীদের বৈশাবী সংক্রান্ত ছুটির বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে মহাসচিব যাতে উৎসাহিত করেন সে বিষয়ে জানিয়েছি। 
এদিকে সকালে গুলশানে জাতিসংঘের নতুন ভবনে মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের কথা স্মরণ করেন। বলেন, তারা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গুতেরাঁ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করেন। এদিন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখতে এবং জাতিসংঘের পতাকা উত্তোলন করতে গুলশানে জাতিসংঘের নতুন ভবন পরিদর্শনে যান তিনি। বাংলাদেশে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের শেষে তিনি ভবন পরিদর্শন করেন। গুতেরাঁ এবং শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান যৌথভাবে গুলশানে ‘ইউএন হাউস ইন বাংলাদেশ’ উদ্বোধন করেন। এ সময় সেখানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা ও সংস্কার প্রচেষ্টাকে আমরা স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ। বাংলাদেশের এ সংকটময় পরিস্থিতিতে পাশে থাকবে জাতিসংঘ। বাংলাদেশ যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, সেজন্য বাংলাদেশের জনগণের উদারতার প্রশংসা করি। ঢাকার জাতিসংঘের কর্মীদের উদ্দেশ্যে গুতেরাঁ বলেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘের নিজস্ব কোনো এজেন্ডা নেই। বাংলাদেশ ও এ দেশের জনগণকে সহযোগিতা করাই আমাদের এজেন্ডা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor