International

সন্ত্রাসের আশ্রয়দাতাকে ছাড় দেবে না ভারত, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত পাকিস্তান

জম্মু-কাশ্মীরে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাক্যুদ্ধ বাড়ছে। দুই দেশই প্রতিশোধ এবং পালটা প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছে। ভারত এই হামলার জন্য কাউকে ছাড় দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। আর পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত রাখার কথা জানিয়েছে।

এই বাক্যুদ্ধের মধ্যে দুই দেশের সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। পহেলগামে হামলায় জড়িত দুই অভিযুক্তের বাড়ি বিস্ফোরণে উড়ে গেছে। পাকিস্তানিদের খুঁজে বের করে তাড়িয়ে দিতে মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যদিও তার মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে নিরাপত্তা গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে এবং সরকার সেটি স্বীকারও করেছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে তারা ভারতের পাশে আছে। তবে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে দুই দেশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

ছাড় দেবে না ভারত

গতকাল শুক্রবার ভারত স্পষ্ট ভাষায় আমেরিকাকে জানিয়ে দিয়েছে যে, নিরীহ মানুষকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় দায়ী দেশের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব দেখানোর আর কোনো দায়িত্ব নয়াদিল্লির নেই। ওয়াশিংটনস্থিত ভারতীয় দূতাবাস মার্কিন প্রশাসনকে জানিয়ে দেয়, পাকিস্তান পুরোপুরি এবং সরকারি মদতে সন্ত্রাসবাদে সাহায্য করে চলেছে। ফলে এখন আর ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ভারত ও পাকিস্তান ২০২১ সালে এই অঞ্চলে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। তবে এর পরেও একাধিকবার এই চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়েছে।

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের এক কর্মকর্তাও রাতভর দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ঝিলম উপত্যকা জেলার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা সৈয়দ আশফাক গিলানি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘লিপা উপত্যকায় রাতভর পোস্ট-টু-পোস্ট গুলিবর্ষণ চলছে।’ গিলানি বলেন, ‘বেসামরিক জনগণের ওপর কোনো গুলিবর্ষণ হয়নি। জীবনযাপন স্বাভাবিকভাবে চলছে। স্কুল খোলা রয়েছে।’ পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রশাসনিক কেন্দ্র মুজাফ্ফরাবাদ শহর থেকে প্রায় ৯৫ কিলোমিটার পূর্বে ভারতের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর অবস্থিত লিপা উপত্যকা।

পর্যটকদের ওপর হামলায় জড়িত দুই সন্দেহভাজনের বাড়ি গতকাল বোমা মেরে দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে এএফপি। ভারতীয় পুলিশের দাবি, পহেলগামের হামলাকারীরা পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) সদস্য। তিন সন্দেহভাজনের স্কেচসহ পোস্টার প্রকাশ করেছে ভারতীয় পুলিশ। তারা হচ্ছেন-ভারতীয় নাগরিক আদিল হুসেইন থোকার, পাকিস্তানি নাগরিক আলি ভাই ও হাশিম মুসা। এর বাইরে আশিফ শেখ নামের আরেক ভারতীয় নাগরিককেও খোঁজা হচ্ছে।

হামলার পর থোকার ও শেখের পরিবারের সদস্যদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শেখের বোন ইয়াসমিনা এএফপিকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বাড়ি ঘেরাও করে সেনাবাহিনী। কাশ্মীরে হামলার স্থলে নিরাপত্তা গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভারত সরকার সেটি স্বীকারও করেছে। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভারতে থাকা সমস্ত পাকিস্তানিকে খুঁজে বের করে তাড়িয়ে দিতে গতকাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ফোন করে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় যে কোনো ব্যবস্থা নিতে ভারতের সর্বদলীয় সমর্থন পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী গতকাল কাশ্মীরে গিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

‘যুদ্ধের জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত’

সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করাকে পাকিস্তান যুদ্ধের শামিল বলে তুলনা করায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ভারত-পাকিস্তান নতুন করে উত্তেজনার দিকে গড়াচ্ছে। যুদ্ধের শামিল শব্দবন্ধকে সামরিক ও রাজনৈতিক মহলেও চিরাচরিত অথবা অ-চিরাচরিত সংঘর্ষের ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে। যার অর্থ স্পষ্ট করলে দাঁড়ায় সিন্ধুর পানি সুনিশ্চিত করতে পাকিস্তান সরাসরি সংঘর্ষের পথ ধরতে পারে। সম্ভাবনা রয়েছে যে পাকিস্তান সরকার সিন্ধু পানিচুক্তির মান বাঁচাতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারে পিছপা নাও হতে পারে। কারণ এই পানির ওপরই পাকিস্তানের কৃষিকাজের ৮০ শতাংশ নির্ভর করে।

পহেলগামে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। গতকাল দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে এ বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে। পাকিস্তান এ বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ আছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৃহস্পতিবার ২৬টি দেশকে ব্রিফ করা হয়েছে। বাকিদের আজ (শুক্রবার) ব্রিফ করা হবে। অতীতের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে ভারতকে সতর্ক করে ইসহাক দার বলেন, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ‘সম্পূর্ণ প্রস্তুত’। যে কোনো শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ডের চূড়ান্ত জবাব দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করা যাবে না, কারণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই চুক্তি স্থগিত করতে হবে। পানি ২৪ কোটি পাকিস্তানির জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি এরই মধ্যে পানি স্থগিতের হুমকিকে যুদ্ধের শামিল বলে ঘোষণা করেছে। এদিকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে পূর্ণ মাত্রার সংঘাতের আশঙ্কা নিয়ে বিশ্বকে চিন্তিত হওয়া উচিত।

ব্রিটিশ স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে খাজা আসিফ সতর্ক করে বলেছেন, ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে প্রাণঘাতী গুলিবর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটির সঙ্গে (পাকিস্তানের) উত্তেজনা ‘সর্বাত্মক যুদ্ধে’ রূপ নিতে পারে। এই সাক্ষাত্কারে এক প্রশ্নের জবাবে খাজা আসিফ স্বীকার করেন যে, পাকিস্তান সরকার পশ্চিমাদের কথামতো সন্ত্রাসবাদী দলকে সমর্থন দেওয়ার মতো ভুল একসময় করেছিল। আসিফ বলেন, আমরা দীর্ঘ তিন দশক যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমাদের হয়ে এসব নোংরা কাজ করেছি। তবে আমাদের সরকারের সেই ভুলের কারণেই এখনো এই অপবাদ বইতে হচ্ছে।

‘ভারতের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র’

ভারত-পাকিস্তানের পালটাপালটি পদক্ষেপ নিয়ে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় গতকাল পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই হামলায় যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা। যারা আহত হয়েছেন তাদের আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করি। এই ভয়াবহ হামলায় যারা জড়িত তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানাই।’

এ সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে শান্তি স্থাপনের প্রস্তাব সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ব্রুস বলেন, আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। আমি সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে আর কিছু বলব না। তিনি আরো বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু কথা বলেছেন। তারা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। আমি এই ধরনের কোনো বিষয়ে অবস্থান নিতে চাচ্ছি না।’ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টায় ভূমিকা পালন সম্পর্কে এক পাকিস্তানি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখাপাত্র বলেন, ‘এটি দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি এবং আমরা এটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। অবশ্যই, আমরা এখন কাশ্মীর বা জম্মুর অবস্থা সম্পর্কে কোনো অবস্থান নিচ্ছি না।’ তবে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto