Bangladesh

সন্দেহের বশে গ্রেপ্তার, স্বজনদের জানানো হচ্ছে না

রাজধানীতে গত ২৮ জুলাই থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কাউকে বাসস্থান বা কর্মস্থল ছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় নেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে পরিবারের সদস্যদের জানাতে হবে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।

রাজধানীর তিতুমীর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ হেলাল থাকেন কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। গত ২৮ অক্টোবর সকালে লালবাগ এলাকায় আসার পর তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় লালবাগ থানা পুলিশ। সেদিনই তাঁকে ভবঘুরে ও অভ্যাসগত অপরাধে জড়িত অভিযোগে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

৯ দিন কারাভোগের পর গত ৬ নভেম্বর আদালত হেলালকে জামিন দেন। পরদিন তিনি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তাঁর আইনজীবী ফজলুল হক শেখ বলেন, যে ছেলেটির সুনির্দিষ্ট পরিচয় আছে, যে ছেলেটি সেদিন বারবারই বলেছিল, তিনি তিতুমীর কলেজে লেখাপড়া করেন। তার পরও পুলিশ বিনা পরোয়ানায় তাঁকে ভবঘুরে হিসেবে গ্রেপ্তার করল। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।

লালবাগ থানার পুলিশ আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, হেলালের বিরুদ্ধে বিরূপ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তাহলে একজন নিরপরাধ ছাত্রকে ভবঘুরে হিসেবে গ্রেপ্তার করা হলো কেন? এ প্রশ্নের জবাবে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সন্দেহের ভিত্তিতে হেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।

শুধু হেলাল নন, গত ২৮ জুলাই থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে অন্তত ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের অভিযোগ হলো, এরা ভবঘুরে, অভ্যাসগত অপরাধী ও আমলযোগ্য অপরাধের ষড়যন্ত্রে জড়িত।

গ্রেপ্তার হওয়া অন্তত ৫০ জন ব্যক্তির আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা জানান, সুনির্দিষ্ট পেশা থাকার পরও ভবঘুরে হিসেবে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় সন্দেহের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের পর তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও জানানো হয়নি।

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে রাজনৈতিক নেতা–কর্মী গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৬৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা তিন হাজার ১৪০ জন। বিএনপি নেতা–কর্মীদের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অন্তত ১৫ জন আইনজীবীর দাবি, গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের অপব্যবহার রোধে ২০০৩ সালে হাইকোর্ট যে ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তার একটি হচ্ছে, বাসস্থান বা কর্মস্থল ছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনার এক ঘণ্টার মধ্যে পরিবারের সদস্যদের জানাতে হবে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা মানছে না পুলিশ।

আমার আব্বাকে বনানীর স্টার কাবাব হোটেল থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর চারদিন কোনো খোঁজ পাইনি। পরে সিসিটিভির ফুটেজ থেকে আমরা ঘটনা জানতে পারি।

ইয়াজিম হোসেন, গ্রেপ্তার আলী আকবরের ছেলে, উত্তরা, ঢাকা


আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্না বলেন, গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের অপব্যবহার রোধে ২০০৩ সালে হাইকোর্ট ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগও হাইকোর্টের নির্দেশনা বহাল রেখেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, হাইকোর্টের বেশির ভাগ নির্দেশনা মানছেন না সংশ্লিষ্টরা। যেমন, কাউকে গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তির স্বজনেরা অভিযোগ করছেন, গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনেককে আদালতে তোলা হয় না। আবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আগে সরকারি চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করাতে হয় এবং চিকিৎসকের প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করতে হয়। এসব নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা নিয়ে ২০০৩ সালে হাইকোর্ট যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, তার প্রত্যেকটি নির্দেশনা পুলিশ মেনে চলে। শুধু সুনির্দিষ্ট ও আমলযোগ্য অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগেই পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করছে। গ্রেপ্তার করার পর তাঁদের স্বজনদের জানানো হয়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কাউকে গ্রেপ্তার করার পর তাঁকে গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে হবে। রাস্তা থেকে কাউকে বিনা পরোয়ানায় ধরে ভবঘুরে হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো সরাসরি সংবিধানের মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। এটা আদালত অবমাননার শামিল। গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো যারা মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

গ্রেপ্তার অন্তত ৫০ জন ব্যক্তির আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা জানান, সুনির্দিষ্ট পেশা থাকার পরও ভবঘুরে হিসেবে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় সন্দেহের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করেছে।

১৯৯৮ সালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী থেকে বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই বছরের ২৩ জুলাই মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে একটি বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে।

সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টসহ (ব্লাস্ট) অন্যরা হাইকোর্টে রিট করে। শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট এ বিষয়ে কয়েক দফা নির্দেশনাসহ রায় দেন। এই রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে প্রচলিত বিধি সংশোধন করার পাশাপাশি ওই ধারা সংশোধনের আগে ১৫ দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর ২০১৬ সালের ২৪ মে আপিল বিভাগ রায় দেন। হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন সেটি বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। রিভিউ আবেদনটি এখন বিচারাধীন। ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা ও সাবেক জেলা জজ এস এম রেজাউল করিম বলেন, ৫৪ ও ১৬৭ ধারা নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় ও নির্দেশনা আপিল বিভাগ বহাল রেখে রায় দেন। ফলে ওই রায় সবাই মানতে বাধ্য।

তুলে নেওয়ার চার দিন পর আদালতে

বাসে আগুন দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা আলী আকবর। তাঁর আইনজীবী সালাম খান ঢাকার সিএমএম আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে আলী আকবরকে গত ৫ নভেম্বর বিকেলে বনানীর স্টার কাবাব হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের চারদিন পর তাঁকে বাসে আগুন দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আলী আকবরের স্ত্রী সালমা আক্তার বলেন, ‘ডিবি পরিচয়ে স্বামীকে বনানীর হোটেল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর চারদিন ধরে থানায়, ডিবি অফিসে ঘুরেছি। কিন্তু কোনো পুলিশ সদস্য স্বীকার করেননি যে, তাঁরা আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছেন। এমনকি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) নেয়নি পুলিশ।’

তবে উত্তরা-পূর্ব থানার পুলিশ লিখিতভাবে আদালতকে জানিয়েছে, আলী আকবরকে গত ৭ নভেম্বর উত্তরার কসাইবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর ছেলে ইয়াজিম হোসেন বলেন, ‘আমার আব্বাকে বনানীর স্টার কাবাব হোটেল থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর চারদিন কোনো খোঁজ পাইনি। পরে সিসিটিভির ফুটেজ থেকে আমরা ঘটনা জানতে পারি।’
 
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা পুলিশসহ সকলে মানতে বাধ্য। কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি এসব নির্দেশনা না মানা হয়, সে ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ব্যক্তি আদালতের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে পারেন।

কারাভ্যানে আসামিদের নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ (ছবিতে নেই)। এক পলক দেখা পাওয়ার চেষ্টা তাঁদের স্বজনদের। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা ছবি

কারাভ্যানে আসামিদের নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ (ছবিতে নেই)। এক পলক দেখা পাওয়ার চেষ্টা তাঁদের স্বজনদের। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা ছবিদীপু মালাকার

সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার

কুষ্টিয়ার খাতের আলী ডিগ্রি কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইউসূফ আলী গ্রেপ্তার হন গত ২৮ অক্টোবর লালবাগ এলাকা থেকে। তাঁর আইনজীবী লিখিতভাবে আদালতকে জানান, কলেজ শিক্ষক ইউসুফ কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে এলে পুলিশ তাঁকে রাস্তা থেকে আটক করে।

এ ছাড়া ঢাকার কোতয়ালি এলাকা থেকে গত ২৭ অক্টোবর মোস্তাকিম ও নাহিদ ভূঁইয়া নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে তাঁদের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আদালতকে জানান, মোস্তাকিম পেশায় ব্যবসায়ী। আর নাহিদ চাকরি করেন। হয়রানি করার জন্য তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ২ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফাহেয়াত উদ্দিন আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তাতে বলা হয়, মোস্তাকিমের নাম-ঠিকানা সঠিক আছে। তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। পরে মোস্তাকিম জামিনে মুক্ত হন।

পুলিশ ও ঢাকার আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত ২৮ জুলাই নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের দিন ৪৪৭ জনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে ৯৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারায়। অভিযোগ হলো, ভবঘুরে, অভ্যাসগত অপরাধী বা কোথাও একত্র হওয়ার বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারা। এ ছাড়া গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের দিন ৭৪৩ জনকে আদালতে তোলা হয়। তাঁদের মধ্যে ২০৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় ৫৫ ধারায়।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী, সন্দেহের বশবর্তী হয়ে পরোয়ানা ছাড়া যেকোনো ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে। ৫৫ ধারা অনুযায়ী, ভবঘুরে, অভ্যাসগত অপরাধে জড়িত ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় পুলিশের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা রয়েছে। ১৫১ ধারার ভাষ্য হলো, আমলযোগ্য অপরাধের ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারলে পরোয়ানা ছাড়াই যেকোনো ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে।

কারাভ্যানে থাকা আসামিকে দেখার চেষ্টা এক স্বজনের। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা ছবি

কারাভ্যানে থাকা আসামিকে দেখার চেষ্টা এক স্বজনের। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা ছবিদীপু মালাকার

হাইকোর্টের যেসব নির্দেশনা মানতে হবে

হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশ দেবার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে না। কাউকে গ্রেপ্তারের আগে পুলিশকে তাঁর পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। থানায় আনার পর দ্রুত গ্রেপ্তারের কারণ লিখতে হবে। গ্রেপ্তার হওয়া  ব্যক্তির শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলে তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। বাসা বা কর্মস্থল থেকে গ্রেপ্তার না করলে গ্রেপ্তারের এক ঘণ্টার মধ্যে স্বজনকে জানাতে পুলিশ বাধ্য। গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে। গ্রেপ্তারের যুক্তিসঙ্গত কারণ আদালতকে কেস ডায়েরি আকারে জানাতে হবে। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যুক্তিসঙ্গত না হলে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে মুক্তি দেবেন আদালত। আদালতের অনুমতি নিয়ে আসামিকে কাঁচের দেয়ালের কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদের পর আসামিকে চিকিৎসকের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। চিকিৎসকের প্রতিবেদনে নির্যাতনের প্রমাণ পেলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেবেন আদালত।

হাইকোর্টের নির্দেশনা এবং বাস্তবতা

গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের বিষয়ে হাইকোর্টের ১৫ দফা নির্দেশনা সব যে মানা হচ্ছে না, সেটি ব্লাস্টের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ব্লাস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিকে অনেক সময় গ্রেপ্তারের কারণ জানানো হয় না। আবার গ্রেপ্তার করার পর পরিবারের সদস্যদের জানানো হয় না গ্রেপ্তার করার কথাও। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, তদন্তের প্রয়োজনে রিমান্ডের সময় এক পাশে কাঁচের দেয়াল ও গ্রিল দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদের রেওয়াজ নেই। আবার রিমান্ডে নেওয়ার আগে কিংবা পরে চিকিৎসা সনদও আদালতের কাছে জমা দেওয়া হয় না।

তবে ব্লাস্টের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, হাইকোর্টের নির্দেশনার পর ২০১৩ সালে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন পাস হয়েছে। আর রিমান্ডের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশনা দিচ্ছেন নিম্ন আদালত।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, গ্রেপ্তার ও রিমান্ড বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা বছরের পর বছর মানা হচ্ছে না। রিমান্ডে নিয়ে স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখানো হয়। রিমান্ডে নিয়ে অনেককে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

পুলিশভ্যানে থাকা আসামির দিকে হাত নাড়ছেন এক স্বজন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা ছবি

পুলিশভ্যানে থাকা আসামির দিকে হাত নাড়ছেন এক স্বজন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা ছবিদীপু মালাকার

সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ বলছে, কোনো অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না। কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না কিংবা কারও সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না। 

টিআইবির চেয়ারপারসন ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, গ্রেপ্তার ও রিমান্ড নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা যাঁরা মেনে চলছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ প্রত্যেক নাগরিকের সমান আইনগত সুরক্ষা ও বিচার দণ্ড নিয়ে রক্ষাকবচ হিসেবে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। সংবিধান পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d