Uncategorized

সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী: গরিবের খাবারেও সিন্ডিকেটের থাবা

মাছ-মাংসের কাছে ঘেঁষতে পারছে না অনেকে * ডাল-আলুভর্তা ও ডিম জোগানো যেন দায়। পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দামও চড়া

গরিবের খাবারেও এখন সিন্ডিকেটের থাবা পড়েছে। উৎপাদন ও সরবরাহ ঠিক থাকলেও কারসাজি করে বাড়ানো হয়েছে ডাল, আলু ও ডিমের দাম। এক কেজি আলু কিনতে খরচ হচ্ছে ৫০ টাকা। ডালের কেজি ১৩৫ টাকা এবং প্রতি ডজন ফার্মের ডিমের দাম ১৫৫-১৬০ টাকা।

কোনো সবজি মিলছে না ৬০ টাকার নিচে। নিম্নআয়ের অনেকে মাছ-মাংসের কাছে ঘেঁষতে পারছে না। ফলে গরিবের খাবারের তালিকায় এখন ডাল-আলুভর্তা ও ডিমের জোগান দেওয়া যেন কঠিন হয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরানবাজার, মালিবাগ বাজার, নয়াবাজার ও শান্তিনগরসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। লাগামহীন দামের অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে যুগান্তরের কাছে ক্ষোভ-অসন্তোষ জানিয়েছে ক্রেতাদের অনেকে। তারা বলেন, ‘ভাই মিডিয়ায় লিখে কোনো লাভ হবে না। যারা ব্যবস্থা নেওয়ার তারা নেবে না। সিন্ডিকেট নিয়ে অনেক কথা শুনেছি। কিন্তু ওরা এতই প্রভাবশালী যে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।’

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই নিম্নআয়ের মানুষ কষ্টের মধ্যে আছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে একাধিক পণ্যের দাম হুহু করে বাড়ছে। এতে উচ্চশ্রেণির মানুষের ভোগান্তি না হলেও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে নিম্নআয়ের মানুষ। যারা তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় তা দিয়ে তাদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ফলে কেনার সময় অনেকে পরিমাণে কম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে, বাজারে তদারকি জোরদার করে অসাধুদের আইনের আওতায় আনা।

পাশাপাশি টিসিবি ও ওএমএসের মাধ্যমে বেশি করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা। এতে একটু হলেও কষ্ট দূর হবে। খুচরা বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি আলুর দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ৪০ টাকার আলু এখন ৫০ টাকা। অথচ গত বছর একই সময় বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বছরের ব্যবধানে ৬১.১১ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের ১০ টাকা ৫০ পয়সা খরচ হচ্ছে। কৃষক তো সর্বোচ্চ ১৫ টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। যা খুচরা বাজারে ৩২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিমাগার মালিক ও মজুতদাররা চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত পরিমাণ আলু বাজারে ছেড়ে দাম বাড়িয়েছে। এদিকে দাম বৃদ্ধির পেছনে কারা দায়ী তা সরকারি সংস্থাও জানে। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এক মাস ধরে বাড়তি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬০ টাকা। যা গত বছর ঠিক একই সময় প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২২০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম প্রতি ডজন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, যা আগে ১১৫ টাকা ছিল। আর ছোট দানার মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা।

রাজধানীর কাওরানবাজারে কথা হয় দিনমজুর মো. সালাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মালামাল বহন করে ৪৫০-৫০০ টাকা আয় করেছি। এই টাকা নিয়ে বাজারে এসেছি। কিন্তু বাজারে সবকিছুর দাম অনেক বেশি। তাই কী দিয়ে কী কিনব তা ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। আগের চেয়ে ডাল, ডিম, আলুসহ সবকিছুর দাম এখন বেশি। অথচ এগুলো দিয়ে আগে দুইবেলা পার করতাম।

তিনি বলেন, যে টাকা নিয়ে বাজারে এসেছি তা দিয়ে এগুলো এখন কীভাবে কিনব, সেটাই ভাবছি। আমাদের এই বোবাকান্না কেউ শোনে না। এখন বাধ্য হয়ে এই টাকার মধ্যে অল্প করেই চাল, ডাল ও ডিম কিনব। মাছ-মাংস আমাদের ভাগ্যে নেই।’

রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা। যা সাত দিন আগে ২৪০ টাকা ছিল। এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-১২০ টাকা, করলা ৬০-৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বরবটি ৮০, ধুন্দুল ৬০, চিচিঙ্গা ৬০, প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা, ধনেপাতার কেজি ৪০০ টাকা, ছোট বাঁধাকপি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা, ফুলকপি ছোট আকারের ৪০-৫০ টাকা। প্রতি কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকা, কচুরমুখি ৮০ টাকা এবং গাজর প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা। আর প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা। দেশি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি। যা সাত দিন আগে ৩৫০ টাকা ছিল। দেশি শুকনা মরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২০ ও আমদানি করা ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি ও আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা।

বাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ছিল ১৬৫-১৭৫ টাকা। কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা এবং লেয়ার ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি গচ্ছে ৭৮০-৮০০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি রুই মাছ ৩৫০-৪৫০ টাকায়, মৃগেল ২৫০-৩৫০, পাঙাশ ১৯০-২২০, ইলিশ প্রতি কেজি (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৬০০, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০-১০০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৮০০-১২০০ টাকা, কাতল ৩০০-৪০০, পাবদা ৪০০-৫০০ টাকায় এবং তেলাপিয়া ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মালিবাগ কাঁচাবাজারে কথা হয় ভ্যানচালক জাহিদুলের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেশি। গরুর মাংস কবে কিনেছি তা মনে নেই। মাসে একবার মুরগির মাংস খেতে পারলেও এখন দাম নাগালের বাইরে। ডাল-ভাত খেতেও বাড়তি টাকা গুনতে হবে। ডিমের দামও নাগালের বাইরে চলে গেছে। সব মিলে আমাদের মতো মানুষের অনেক কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, মা-বাবা, স্ত্রী এবং দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার ছয়জনের সংসার। সবার খাবারের জোগান আমাকেই করতে হয়। কিন্তু সীমিত আয় দিয়ে এখন সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এই কষ্ট দূর করার কেউ নেই।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d