সবজি বাজারে অস্থিরতা কদমে কদমে বাড়ে দাম
কিশোরগঞ্জের কৃষক বেগুনে পাচ্ছেন ১ টাকা ২৫ পয়সা ঢাকার মানুষ খাচ্ছেন ৬০-৭০ টাকায়
কিশোরগঞ্জের হাওরের কৃষক এক কেজি বেগুন বিক্রি করে পাচ্ছেন মাত্র ১ টাকা ২৫ পয়সা। সেই হিসাবে এক মণের দাম ৫০ টাকা। আর ঢাকার বাজারে সেই বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা। বগুড়ায় এক কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ১ টাকা ২৫ পয়সা, বেশি হলে দেড় টাকায়। সেই মুলার কেজি ঢাকায় ৪০ টাকা। ভোক্তা তো দূরে থাক, খোদ ঢাকার সব্জি বিক্রেতারাই বিশ্বাস করতে পারছেন না, ‘দামের এত ফারাক কেমনে!’ রাজধানীর গোপিবাগ এলাকার সব্জি বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বললেন, ‘শুনছি কৃষক দাম পায় না। সব্জি রাস্তায় ফেইলা দেয়। বাগুন ৪-৫ টাকায় কেজি পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা আড়তে গেলে তো কম দামে পাই না।’ নজরুল জানান, আড়ৎ থেকে যে দামে কেনেন তার চেয়ে ৫-১০ টাকা কেজিতে লাভ করেন তারা। এর মধ্যে ১০ কেজি সব্জি কিনে পরিবহনের সময় ২ কেজি রাস্তায় নষ্ট হয়ে যায়। আবার ভ্যান ভাড়া-গাড়ি ভাড়া রয়েছে।
রাজধানীর বাজারে প্রতিটি সব্জির দামই এখন সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। অনেকেই বর্তমান পরিস্থিতিতে চাহিদার তুলনায় কম সব্জি কিনে ঘরে ফিরছেন। পকেটের সাথে সঙ্গতি রেখে তাদের কাটছাঁট বাজার করতে হচ্ছে। এরা কৃষক পর্যায়ের সব্জির দাম শুনে অবাক হচ্ছেন। অনেক সময় কৃষক পর্যায়ের দাম তারা বিশ্বাসই করতে চান না। ক্ষেত থেকে কেনা ১০-১২ টাকার মিষ্টি কুমড়া ঢাকায় এসে কিভাবে ১০০ টাকা হয়ে যায় তা শুনে অবাক গোপীবাগের বাসিন্দা শহিদুল। তিনি বলেন, এটা কিভাবে সম্ভব। কত লাভ দরকার! বিক্রেতারা রাস্তায় খরচের কথা বলেন। কিন্তু রাস্তায় একটি কুমড়ার পেছনে কত টাকা খরচা হয়! দ্বিগুণ হোক, ব্যবসায়ীরা আরো দ্বিগুণে বিক্রি করুক। তাতেও তো একটি কুমড়ার দাম হওয়ার কথা ৫০ টাকা। ওয়ারীর কে এম দাস লেনের সব্জি বিক্রেতা ছাইদুর রহমান জানান, একটি মিষ্টি কুমড়া তারা ৪ ভাগ করে বিক্রি করেন। প্রতি ভাগ ৩০ টাকা। সেই হিসাবে একটি কুমড়ার দাম পড়ে ১২০ টাকা। আর কেউ গোটা কিনতে চাইলে তার কাছে ১০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি সব্জি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়, উচ্ছে ৫০ টাকা, করলা ৪০-৫০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, সজনে ২০০-২৫০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, লাউ এক পিস ৫০-৭০ টাকা, শিম ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা আর কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকায়। মতিঝিল দিলকুশা এলাকার অস্থায়ী সব্জি বাজার এই এলাকার চাকরিজীবীদের কাছে প্রিয়। এখানে অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে বাজার করতে পারেন। বিশেষ করে বিকেলের দিকে কম মূল্যে সব্জি পাওয়া যায় এই বাজারে। কামরুল নামের এক ক্রেতা গতকাল ওই বাজারে বসে বলেন, এখন আর স্বস্তি নেই। টমেটোর ভরা মৌসুম এখন। আগের বছরও এই সময়ে টমেটোর কেজি ছিল ৮-১০ টাকা। এবার ৪০ টাকার নিচে কোনো দিন টমেটো কিনতে পারেননি। তিনি বলেন, অথচ শুনেছি যেসব এলাকায় টমেটো উৎপাদন হয় সেখানে গরুতেও টমেটো খায় না! সব্জি বিক্রেতা নজরুল বলেন, তাদের লাভ সীমিত। আর মোটা দাগের লাভের জন্য তারা অপেক্ষাও করতে পারেন না। আজকের সব্জি কালকে কেউ কিনতে চান না। তাজা সব্জিই কিনতে মানুষ পছন্দ করেন। যে কারণে যা লাভ পান তাতেই বিক্রি করে দিতে হয়।
যশোর থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, যশোরের চুড়ামনকাটিতে প্রতি কেজি বেগুন পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৫-১৮, কাঁচকলা ১০-১৫, লাল শাক ৭-৮, মিষ্টি কুমড়া ২০, পেঁপে ১৫-১৬, কচুরলতি ৪০-৪২, ঢেঁড়স ৪০, উচ্ছে ৩৫, বাঁধাকপি ৭-৮ টাকা পিস, চিচিঙ্গা ১৫, লাউ ৭-৮, টমেটো ১৫-২০, ডাটা ১০, শসা ৫০-৫৫, গাজর ১৫-১৬ টাকায়।
এছাড়া সাতমাইল বাজারে প্রতিটি সবজি কেজিতে এক-দুই টাকা কমে বিক্রি হয়েছে।
আমাদের বগুড়া অফিস থেকে আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, বগুড়া তথা উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শাকসবজির পাইকারি বাজার মহাস্থান হাট । এখান থেকে ঢাকা ও চট্টগামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা শাকসবজি কিনে দেশের বিভিন্ন এলকায় বিক্রি করেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা আনিছুর রহমান দুলাল গতকাল মহাস্থান হাটে ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানান, কৃষক মুলা ও বেগুন পানির দামে বিক্রি করছেন। বেগুন প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১০০ টাকা এবং মুলা প্রতি মণ ১০০-১২০ টাকা। আবার অনেক কৃষক ভালো দাম না পেয়ে মুলা রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন। এ ছাড়া অন্যান্য সবজির মধ্যে সজনা প্রতি কেজি ৫০- ১০০ টাকা, পটোল ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ ৩৫-৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৬০ টাকা, মিষ্টি লাউ ১২-১৫ টাকা, স্টিক আলু ৩০-৩২ টাকা, পাকড়ি আলু ৪০-৪২ টাকা দরে বেচাকেনা হয়।
এ দিকে পাইকারি বাজারে সবজির দাম কম হলেও বগুড়া শহরের বড়বাজার রাজাবাজারে দাম অনেক বেশি। যেমন বেগুন খুচরা বাজারে ১০-১৫ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, মুলা ১০ টাকা , লাউ প্রতি পিচ ২০-২৫ টাকা দরে বেচাকেনা হয়। অবশ্য গত কয়েক দিন দাম নাগালের মধ্যে থাকায় ক্রেতারা স্বস্তি প্রকাশ করেন।