‘সবাই একসঙ্গে কাজ করলে ধরণী হবে সুন্দর’
‘অ্যালোন উই গো ফাস্টার, টুগেদার উই গো ফার্দার’। অর্থাৎ ‘একা একা আমরা জোরে যেতে পারি, সংঘবদ্ধভাবে আমরা অনেক দূর যেতে পারি’। বিশ্বের সব মানুষ একসঙ্গে কাজ করলে ধরণীকে কত সুন্দর করে তোলা যায়, সেই বার্তা দিয়ে শুরু হচ্ছে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিক গেমস। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় শুরু হবে গেমসের উদ্বোধন সেইন নদীতে। সব আয়োজন সম্পন্ন। গেমসে অংশ নিতে আসা ২০৬ দেশের প্রায় ১০ হাজার ক্রীড়াবিদ উঠেছেন গেমস ভিলেজে। এই ভিলেজ গেমস কয়েকদিন অ্যাথলেটদের ঘরবাড়ি। মূল ভিলেজ সেন্ট ডেনিস ছাড়াও আরও পাঁচটি সাব ভিলেজ রয়েছে। এই মূল ভিলেজে বাংলাদেশের আরচার এবং সাঁতার দলের সদস্যরা রয়েছেন। ই/২২ বিল্ডিংয়ের দোতলায় থাকছেন সাঁতারু সোনিয়া। তিনতলায় জায়গা হয়েছে পুরুষ সাঁতারু, আরচার ও কর্মকর্তাদের। অ্যাথলেট ইমরানুরের বুধবার দুপুরে লন্ডন থেকে প্যারিস আসার কথা। ইমরানুর থাকবেন মূল ভিলেজে। তাদের কোচ-কর্মকর্তারা সেন্ট ডেনিসের বিল্ডিং নাম্বার ই-বাইশে থাকছেন। শুটার রবিউল ইসলাম ও ইরানি কোচ মোহাম্মেদ রেজার জায়গা হয়েছে সেন্ট ডেনিস থেকে তিন কিলোমিটার দূরের সাতায়ু সাব ভিলেজে।
মঙ্গলবার সকালে বৃষ্টি হওয়ায় প্যারিসের আবহাওয়া এখন বেশ উপভোগ্য। তবে ভিলেজের নড়বড়ে খাট নিয়ে রসালো গল্প হচ্ছে। বাংলাদেশ শিবিরে খোঁজ করে জানা গেল, কার্ডবোর্ডের তৈরি বিছানা যথেষ্ট আরামপ্রদ। প্রতিবছর গেমস ভিলেজে থাকা নিয়ে প্রচুর অসুবিধের কথা উঠে এলেও প্যারিসের ব্যবস্থা যেন কবিতার মতো মসৃণ। কোন দেশ কোন টাওয়ারে আছে সেটা বোঝা যাচ্ছে জানালা বা বারান্দায় ঝোলানো সেদেশের পতাকা দেখে। বাংলাদেশের পতাকাও শোভা পাচ্ছে ই/২২ টাওয়ারে। ২২ গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের মালিক রাফায়েল নাদালের সঙ্গে ছবি তুলতে মরিয়া সব দেশের ক্রীড়াবিদরাই। তাকে দেখলেই সবাই ঘিরে ধরছেন। ৩৮ বছরের স্প্যানিশ মহাতারকা ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে স্বর্ণ পেয়েছিলেন। অবসরের আগে রোঁলা গাঁরোয় ফের সাফল্য পেতে মরিয়া রাফায়েল। ভারতের হয়ে অলিম্পিকে ব্যক্তিগত ইভেন্টে প্রথম স্বর্ণজয়ী শুটার অভিনব বিন্দ্রা প্যারিসে এসেছেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির আমন্ত্রণে। সারা দিন ধরে ভিড় ভিলেজের বিশাল ডাইনিং হলে। বিশ্বের নানা দেশের উপযোগী নানা ধরনের বাহারি খাবারের সম্ভার এখানে। আফ্রিকা-ইউরোপের ক্রীড়াবিদরাও ভিড় জমাচ্ছেন এশিয়ান ফুড কাউন্টারে। রাইস, গ্রিলড ফিশ, চিকেন কারি আর বহু ধরনের স্যালাদ মিলছে এই কাউন্টারে। ভিলেজে করোনা আঘাত হানায় অনেকে শঙ্কিত। অস্ট্রেলিয়ার ওয়াটারপোলো দলের এক ক্রীড়াবিদ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সেদেশের অলিম্পিক দলের প্রধান আনা মিয়ার্স তা নিশ্চিত করেছেন। সেই ক্রীড়াবিদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফ্রেডেরিক ভালেতোর আশ্বাস, ‘কোভিড ধরা পড়লেও আমরা ২০২০, ২০২১ বা ২০২২ এ দাঁড়িয়ে নেই। ঝুঁকি এড়াতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চিন্তার কিছু নেই।’ সোমবার সকালে গেমস ভিলেজে গিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাসি-গল্পে মাতোয়ারা ছিলেন। স্বদেশি খেলোয়াড়দের চাঙ্গা করার জন্য সেলফি তুলেছেন। সন্ত্রাসবাদী হামলা সৃষ্টি হওয়ার উদ্বেগে আশ্বস্ত করে ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ‘ভয়ের কোনো কারণ নেই। ফ্রান্স এই গেমস আয়োজনের জন্য সম্পূর্ণ তৈরি। শুধু প্যারিস নয়, গোটা দেশ এই গ্রহের সবচেয়ে বড় ক্রীড়ানুষ্ঠান আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে।’ ডেপুটি হেড অব ভিলেজ অগাস্টিন ট্রান ভ্যান চাউ জানিয়েছেন, ‘আমরা সম্পূর্ণভাবে তৈরি রয়েছি অ্যাথলেটদের স্বাগত জানাতে। ভিলেজে এয়ার কন্ডিশনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে এর ইন্টিরিয়র এমনভাবে করা হয়েছে যাতে বাইরের তাপমাত্রার থেকে ভেতরের তাপমাত্রা এই গরমে অন্ততপক্ষে ছয় ডিগ্রির কম থাকে। এরপরও কিছু কিছু দেশের স্কোয়াড নিজেদের আরামের জন্য এসির ব্যবস্থা করেছে।’
প্যারিস অলিম্পিক গেমসের প্রতীক ‘দ্য অলিম্পিক ফ্রাইরেজ’র আকৃতি দেওয়া হয়েছে টুপির মতো। মূলত স্বাধীনতা, ঐক্য এবং সামাজিক ও মানবিক কাজে সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রতীক এই ফ্রাইরেজ হ্যাট। ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসের কথা মাথায় রেখে তৈরি হয়েছে এই প্রতীক। লাল-সাদা এবং নীল রঙে রাঙানো হয়েছে প্রতীককে।