সবুজ জ্বালানি উৎপাদনে নাটকীয় অগ্রগতি
যুক্তরাষ্ট্রে সৌর বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে অবিশ্বাস্যভাবে
ব্যতিক্রম এক চিত্র দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে। এই যেমন, পেনসিলভানিয়ার শহর পিটসবার্গে ডেলিভারি ভ্যান, মিলওয়াকিতে বাস, লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরে ক্রেনে মালপত্র লোড, আর হিউস্টনের পৌর এলাকার প্রতিটি ভবনে আলোর সবই হচ্ছে সূর্য, বায়ু বা নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ দিয়ে। এই চিত্রই বলে দিচ্ছে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরিবর্তে অবিশ্বাস্যভাবে বায়ু, সৌর আর অন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে দেশটিতে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
সাধারণ এলাকা তো বটেই, তেল, গ্যাস ও শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চলেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার বাড়ছে সবুজ জ্বালানির। এর উৎপাদন খরচ অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। ফলে চলতি বছর দেশটির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ২৩ শতাংশই নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে ক্রেতা বেড়েছে ব্যাটারিচালিত গাড়ির। টেসলাসহ বিভিন্ন কোম্পানি ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরিতে তোড়জোড় চালাচ্ছে রীতিমতো।
এক শতাব্দীরও বেশি সময় কয়লা, তেল এবং গ্যাস পুড়িয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে দূষণকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম এই দেশ। এখন এর লাগাম টেনে ধরে দ্রুত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসছে।
এ অবস্থায় বায়ু ও সৌরশক্তি রেকর্ড ভঙ্গ করছে। নবায়নযোগ্য উৎস ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম বিদ্যুতের উৎস হিসেবে কয়লাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে ব্যবসার ধারণায়ও পরিবর্তন আনছে কোম্পানিগুলো। তেল-গ্যাসের গাড়ির পরিবর্তে বৈদ্যুতিক যানবাহনের উৎপাদন বাড়াচ্ছে। বেড়েছে বিক্রিও। সূর্য ও বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ দ্রুত কমছে। এই খাতে বিপুল বেসরকারি বিনিয়োগ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল বলেন, আমরা প্রতিদিনের জ্বালানির পরিসংখ্যান দেখি। আসলে যা ঘটছে তা একেবারেই বিস্ময়কর। অনেকের ধারণার চেয়ে দ্রুত বেগে বিস্তার ঘটছে পরিচ্ছন্ন শক্তির।
চলতি বছর বিশ্বব্যাপী বায়ু, সৌরশক্তি, বৈদ্যুতিক যান এবং ব্যাটারির মতো প্রযুক্তিতে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর বিপরীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে ব্যয় হতে পারে মাত্র ১ ট্রিলিয়ন ডলার। চীন এরই মধ্যে বায়ু এবং সৌরশক্তি দ্বারা উৎপাদিত বিদ্যুতে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে। দেশটি ২০২৫ সালের মধ্যে তার সক্ষমতা দ্বিগুণ করবে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ বায়ু, সৌর এবং জলবিদ্যুৎ দ্বারা উৎপন্ন হয়। যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছর ২৩ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সবুজ জ্বালানির উদ্যোক্তারা বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। ওকলাহোমায় একটি ১ লাখ বর্গফুটের ব্যাটারি কারখানা এবং ট্রাকের জন্য একটি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে একটি কোম্পানি। হিউস্টনে ৫০০টিরও বেশি তেল, গ্যাস কোম্পানি এবং ১৩০টিরও বেশি সৌর এবং বায়ুভিত্তিক কোম্পানি রয়েছে। অন্যান্য রাজ্যেও গড়ে উঠছে এমন প্রতিষ্ঠান।
পাশাপাশি নাটকীয়ভাবে কমছে এ-সংক্রান্ত জিনিসের দাম। এক দশক আগেও সৌর প্যানেল, বায়ু টারবাইন এবং ব্যাটারিচালিত যানবাহনগুলোকে ব্যয়বহুল বলে মনে করা হতো। কিন্তু এখন এসবের দাম ব্যাপক কমেছে। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সৌরবিদ্যুতের খরচ ৮৩ শতাংশ এবং বায়ুশক্তি উৎপাদনের খরচ অর্ধেকেরও বেশি কমেছে।