Bangladesh

সবুজ পাহাড় এখন আতঙ্কের নাম

► টেকনাফে থামছে না – অপহরণ বাণিজ্য ► জড়িত ১২ গ্রুপের – শতাধিক ডাকাত

বঙ্গোপসাগর, নাফ নদ ও সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্যে ঘেরা টেকনাফ উপজেলায় এখন বড় আতঙ্কের নাম অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্য। কিছুদিন এখানকার বাসিন্দারা মিয়ানমারে যুদ্ধের কারণে গোলাবারুদের বিস্ফোরণজনিত আতঙ্কে থাকত। এখন এর চেয়ে বড় আতঙ্কের নাম এই অপহরণ-মুক্তিপণ। দিন দিন এ ধরনের ঘটনা বেড়ে চললেও কোনো স্থায়ী সমাধান এখনো মিলছে না।

জানা গেছে, এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৮৫ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক ছাড়া অপহরণের শিকার হয়েছেন রোহিঙ্গা নাগরিকও। অধিকাংশই মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

টেকনাফের বাহারছড়া, জাহাজপুরা, লেদা, মুছনি, হ্নীলা, রইক্ষং, জাদিমুড়া ও হোয়াইক্যং এলাকায় বেশি অপহরণের ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর টেকনাফে অপহৃত হয়েছেন জাদিমুড়ায় এক ফরেস্টারসহ বন বিভাগের অধীনে কর্মরত ১৯ জন শ্রমিক, বাহারছড়ায় এক দোকানদার, চালকসহ আট সিএনজি যাত্রী। এর মধ্যে র‌্যাবের অভিযানে ১৮ জন উদ্ধার হলেও এখনো ৯ জনের খোঁজ মেলেনি।

এ অবস্থায় ঘুরেফিরে সবার মনে প্রশ্ন, কারা করছে এসব অপকর্ম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমারের কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে স্থানীয় কিছু ডাকাত মিলে এসব অপহরণ বাণিজ্য করছে। তাদের প্রধান টার্গেট মুক্তিপণ আদায়।

অপহরণ বাণিজ্যে ১২ গ্রুপের শতাধিক ব্যক্তি জড়িত উল্লেখ করে বাহারছড়ার একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় কিছু ডাকাত মিলে এসব অপহরণ বাণিজ্য করছে। এসব ডাকাত দলের কাছে ভারী অস্ত্রও রয়েছে। এদের সঙ্গে মানব পাচারকারীদের যোগসূত্র রয়েছে। মুক্তিপণ দিতে না পারলে অনেককে মানব পাচারকারীদের কাছে অর্থের বিনিময়ে তুলে দেয়। পরে অপহৃতদের পাচার করে ভুক্তভোগী পরিবার থেকে অর্থ আদায় করে। পাহাড়ি-রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় উপজেলার হ্নীলা ও বাহারছাড়া ইউনিয়নে অপহরণের ঘটনা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা। তাঁদের ভাষ্যমতে, গত বছরের তুলনায় এ বছর অপহরণের ঘটনা বেশি। যদিও পুলিশের খাতায় কম।

হ্নীলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল হুদা বলেন, সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কে কখন অপহরণের শিকার হয়, তা নিয়ে ভয় সবার। এসব ঘটনার পেছনে রয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঝিমিয়ে পড়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘প্রযুক্তির সহায়তায় অপহৃতদের অবস্থান জানার চেষ্টা করে পুলিশ। অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে উদ্ধারসহ আটক করা হয় কয়েকজন অপহরণকারীকে। তবে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে চলাচলের সুযোগ বন্ধ না হলে অপহরণের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না। সেটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে নিশ্চিত করতে হবে।’

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, দুর্গম পাহাড়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি অভিযানে অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর দীর্ঘ অভিযানে বনে অপহৃত ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি অপহৃতদেরও উদ্ধারের অভিযান চলছে।

Show More

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button