সমুদ্রের কত গভীরে প্রাণ বাঁচতে পারে

পৃথিবীর বেশির ভাগ অংশজুড়ে থাকলেও গভীর সমুদ্র নিয়ে বিজ্ঞানীদের জানার পরিধি বেশ কম। আর তাই সমুদ্রের কত গভীরে প্রাণ বাঁচতে পারে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা করছেন তাঁরা। এবার সমুদ্রের ৩১ হাজার ফুটের বেশি নিচে প্রাণের সন্ধান পেয়েছেন চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, সমুদ্রের ৩১ হাজার ফুটের বেশি নিচে সূর্যালোক ছাড়াই প্রাণীরা বসবাস করছে। কেমোসিন্থেসিস নামের একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবনের জন্য শক্তি সংগ্রহ করে এসব প্রাণী।
উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের ৩১ হাজার ফুটের বেশি নিচে এমন বিস্ময়কর বাস্তুতন্ত্র দেখে বেশ বিস্মিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে গভীর কেমোসিন্থেটিক জীবনের আবাসস্থল দেখা গেছে সেখানে। সম্পূর্ণ অন্ধকার ও প্রচণ্ড চাপের মধ্যে বেঁচে থাকা প্রাণী আবিষ্কারের বিষয়টি অনেকটা ভিন্ন গ্রহে প্রাণের খোঁজের মতো। ৩১ হাজার ফুট নিচে প্রাণের আবিষ্কার পৃথিবীতে প্রাণের জৈবিক সীমাকে চ্যালেঞ্জ করছে। এটিকে চরম পরিস্থিতিতে জীবনের অভিযোজন যোগ্যতার অনন্য এক উদাহরণ বলা হচ্ছে।
নেচার সাময়িকীতে সমুদ্রের ৩১ হাজার ফুট নিচের প্রাণীদের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, চীনের ফেন্ডৌজে সাবমার্সিবল নামের ডুবোজাহাজের মাধ্যমে সমুদ্রের গভীরে অনুসন্ধান চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ডুবোজাহাজের উচ্চ রেজল্যুশনের ক্যামেরা ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে দেখা গেছে, ৩১ হাজার ফুটের বেশি নিচে থাকা প্রাণীরা সূর্যালোক ছাড়াই কেমোসিন্থেসিস নামের একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় বেঁচে থাকে। সেখানে বিভিন্ন প্রাণী ও জীবাণু মিথেন ও হাইড্রোজেন সালফাইডের মতো রাসায়নিক পদার্থকে জীবনের উপযোগি শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
প্রশান্ত মহাসাগরের ৩১ হাজার ফুটের বেশি নিচে বসবাসকারী প্রাণী ও জীবাণু সম্পূর্ণ অন্ধকারে একটি অনন্য খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করেছে। সেখানকার চাপ সমুদ্রপৃষ্ঠের তুলনায় এক হাজার গুণ বেশি ও তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি হতে পারে। মনুষ্যসৃষ্ট মেশিন ও পানির নিচের যানবাহন এ ধরনের চরম পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে পারে না।