Trending

সমুদ্র দিয়ে ঢুকছে ইয়াবা-আইস

♦ রাখাইনে ব্যাপক সংঘাতের ফলে মাদক পাচারের পুরোনো রুটগুলো ব্যবহার করতে পারছে না মাফিয়ারা ♦ বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিন হয়ে ইয়াবার চালান প্রবেশ করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায়

বাংলাদেশে ভয়ংকর মাদক ইয়াবা ও আইস আসে মিয়ানমান থেকে। মূলত দেশটির রাখাইন রাজ্য দিয়েই এ মাদক বাংলাদেশে  ঢোকে। এ জন্য প্রশাসন থেকে নানা উদ্যোগের পরও মাদক প্রবেশ কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। এখন রাখাইন রাজ্যে চলছে চরম সংঘাত। আর এর প্রভাব পড়েছে মাদকের পাচার রুটেও। গত বছরের  শেষ দিকে সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে আরাকান রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা দখলে নেয় আরাকান আর্মি। এতে করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে। এতে মূলত সমস্যায় পড়ে গেছে মাদক মাফিয়ারা।

কারণ এক সময় মাদকের বড় অংশ ঢুকত স্থল দিয়ে। কিন্তু রাখাইনে ব্যাপক সংঘাতের ফলে মাদক পাচারের পুরোনো রুটগুলো ব্যবহার করতে পারছে না মাফিয়ারা। ফলে তারা বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করছে। মাদকের রাজধানী খ্যাত মিয়ানমারের সান স্টেট থেকে মাফিয়ারা ইয়াবার চালান তুয়াঙ্গী-ইয়াঙ্গুন নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশি জলসীমানায় পাঠিয়ে দেয়। বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীরা জেলে সেজে মাছ ধরার ট্রলারে করে গিয়ে ওই জলসীমানা থেকে গ্রহণ করে মাদকের চালান।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বর্তমান প্রচলিত রুটের একটি হচ্ছে সান স্টেট-সিত্তে নৌপথ। এ পথে ইয়াবা আইসের চালান সান থেকে নৌপথে আসে তুয়াঙ্গী। এরপর ইয়াঙ্গুন হয়ে নৌপথে যায় সিত্তেই। অতঃপর বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিন হয়ে ইয়াবার চালান প্রবেশ করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায়। এ পথে আসা ইয়াবার চালান সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সীতাকুন্ড, ফিশারিঘাট, ব্রিজঘাট, মাঝিরঘাটে কিছু কিছু চালান প্রবেশ করে। কিছু চালান যায় বরিশাল, খুলনা, বরগুনা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন নৌবন্দর এলাকায়। মিয়ানমার থেকে মাদক চালানের অপর রুট হচ্ছে সান স্টেট-মংডু রুট। 

মাদক মাফিয়াদের এ সাম্প্রতিক তৎপরতা সম্পর্কে সজাগ কোস্ট গার্ডসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা ও আইনপ্রয়োগকারী বাহিনী। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কমান্ডার সিয়াম উল হক বলেন, ‘সাগরের কিছু কিছু পয়েন্টে কোস্ট গার্ডই তৎপরতা বাড়িয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও। নিয়মিত চালানো হচ্ছে অভিযান। অভিযানে মাদক উদ্ধার এবং পাচারকারীরা গ্রেপ্তারও হচ্ছে।’

সীমান্ত এলাকার অপরাধ গবেষক ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপপরিচালক হুমায়ন কবির খন্দকার বলেন, ‘রাখাইন রাজ্য সংঘাতপূর্ণ হওয়ায় স্থলপথে আগের মতো ইয়াবা ও আইস পাচার হচ্ছে না। এক্ষেত্রে মাদক মাফিয়ারা সাগর পথকেই নিরাপদ মনে করছে এমন তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। এরই মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের শেষের দিকে এসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এ ছাড়া রাখাইনে বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের ইয়াবা এবং আইস অনুপ্রবেশের অন্যতম প্রবেশদ্বার সংঘাতপূর্ণ হয়ে পড়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা পরিবর্তন করে মাদক পাচারের রুট। ফলে ইয়াবা-আইস পাচারের একমাত্র রুটে পরিণত হয় সাগরপথ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto