International

সম্পর্কের অবনতিতে ফের যুক্তরাষ্ট্রকে দুষল ভারত

সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেতে ভারতের কর্মকর্তাদের ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানিকে অভিযুক্ত করেছেন মার্কিন আদালত। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের দূরত্ব বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির জন্য আবারও ওয়াশিংটকে দোষ দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির দাবি, একদল তদন্তকারী সাংবাদিক ও বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে নিয়ে ভারতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। 

যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) অভিযোগ, ভারতের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজের জন্য ঘুষ দিয়েছে আদানি গ্রুপ। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এ প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের বিনিয়োগ পাওয়ার চেষ্টা করেছে তারা। এ কারণে মার্কিন আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ  করেন।

গত দুই দশক ধরে নয়াদিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ভালো থাকলেও সম্প্রতি তাতে বড় ধরনের ফাটল দেখা যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি ইস্যুতে দুই দেশে একে অপরকে দোষারোপে নেমেছে। ভারতে সংখ্যালঘু নিপীড়ন, ধর্মীয় স্থাপনার ওপর হামলা নিয়েও একাধিকবার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে এক শিখ নেতাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একজন ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়েও চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি হয় নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে।

এদিকে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ ওঠার পর সোচ্চার হন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি গ্রুপটির প্রধান গৌতম আদানিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠজন দাবি করেন। পাশাপাশি আদানিকে গ্রেপ্তারেরও দাবি জানান। রাহুল গান্ধীর বলেন, যদি আদানির দুর্নীতির অনুসন্ধান হয়, তবে মোদির দুর্নীতিও সামনে চলে আসবে। গতকাল শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি মোদিকে খোঁচা মেরে বলেন, ‘মোদিজি সংসদে আসুন। আদানির বিরুদ্ধে তদন্ত নিয়ে ভয় পাবেন না।’

এসব অভিযোগের বাইরে কিছু অভিযোগ তুলেছেন ভারতের সরকারবিরোধীরা। অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট বা ওসিসিআরপি নামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের তৈরি প্যাগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সরকারবিরোধীদের টার্গেট করা হচ্ছে। তবে ভারতের সরকার বারবার বলে আসছে, তারা এ ধরনের কোনো কাজে জড়িত নয়। 

এর আগে বিজেপি অভিযোগ করে, মার্কিন ধনকুবের ও মানবহিতৈষী জর্জ সরসের মদদে রাহুল গান্ধী আক্রমণ করছেন মোদিকে। বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া একাধিক বার্তায় বিজেপি বলেছে, ভারতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওসিসিআরপি সেখানে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। একই দিনে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পত্রও আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে একই অভিযোগ করেন। সব মিলিয়ে সম্প্রতি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। 

আদানি গ্রুপের ওপর ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠলে তার ধাক্কা লাগে ভারতের অর্থনীতিতেও। শেয়ারের দরপতনসহ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে আদানি গ্রুপ। সম্প্রতি গ্রুপটির সঙ্গে একটি বড় চুক্তি বাতিল করে কেনিয়া। এ বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠছে, যুক্তরাষ্ট্রে কি আদানির বিচার করা আদৌ সম্ভব?

মার্কিন বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে আদানির বিচার করা সম্ভব। তবে ভারতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিকাশ পাহওয়া আলজাজিরাকে বলেন, দুর্নীতিবিরোধী আইনে ভারতের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত সিবিআইয়ের মতো ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকেই করতে হবে। যদি দুর্নীতি-সংক্রান্ত কোনো বিচার হয়, সেটিও ভারতের বিচার বিভাগের আওতায় পড়বে। যদি ভারতীয় বিচার বিভাগ বলে, আদানি তাদের দুর্নীতিবিরোধী আইন অমান্য করেননি; তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে যুক্তি দিতে পারবেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি।

এ ছাড়া পরবর্তী ধাপ হিসেবে ভারত সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রকে আদানির প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিক আবেদন করতে হবে। তবে ভারত তাঁকে প্রত্যর্পণ করবে কিনা, সেটি  বড় প্রশ্ন থাকবে। বলা হচ্ছে, আদানির যুক্তরাষ্ট্রে বিচার করার বিষয়টি বেশ জটিল হবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় আদানি ভারতে এ অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি নিতে পারেন। পরবর্তী সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বিষয়টি দেখাতে পারবেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button