Trending

সরকারি বন্ড জামানত রেখে ধার পাবে শরিয়াহ ব্যাংক

শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকগুলোকে ‘কর্জে হাসানা’ হিসেবে মুনাফাবিহীন বিশেষ ধার দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের কাছে সার ও বিদ্যুতের পাওনার বিপরীতে ইস্যু করা বন্ড জামানত রেখে ৯০ ও ১৮০ দিনের জন্য এ ধার দেওয়া হবে। এই বন্ডের জন্য সরকার থেকে ব্যাংকগুলো কোনো মুনাফা পাবে না। এ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে শিগগিরই নীতিমালাটি প্রকাশ হবে বলে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, সার ও বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির দায় বাবদ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো পাবে। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোর পাওনা রয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো। সরকার ব্যাংকের এ পাওনার বিপরীতে বিশেষ বন্ড ইস্যু করছে। এরই মধ্যে সোনালী, জনতা, আইএফআইসি, পূবালী, সিটি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশসহ কয়েকটি ব্যাংকের নামে বন্ড ইস্যু করেছে সরকার। প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে বন্ডের বিপরীতে রেপো রেট তথা ৮ শতাংশ সুদে এ বন্ড দেওয়া হচ্ছে। তবে শরিয়াহ নীতিমালার আলোকে ইসলামী ব্যাংকগুলো এ ধরনের বন্ডের বিপরীতে মুনাফা নিতে পারে না। যে কারণে ইসলামী ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হচ্ছে বিনা মুনাফার বন্ড। এখন ইসলামী ব্যাংকগুলোর এসব বন্ড জামানত রেখে ধার নিতে যদি মুনাফা দিতে হয়, তাতে বড় লোকসানে পড়বে। যে কারণে কর্জে হাসানা পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কর্জে হাসানা হিসেবে বিশেষ তারল্য সহায়তা (এসএলএস) দেওয়া হবে কেবল গত জুন পর্যন্ত সরকারের কাছে সার ও বিদ্যুৎ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ভতুর্কি বাবদ দায়-দেনা নিষ্পত্তির জন্য ইস্যু করা বন্ডের বিপরীতে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে ‘এসএলএস কোয়ার্ড অ্যাকাউন্ট’ নামে আলাদা একটি হিসাব খোলা হবে। কোয়ার্ড হলো, কর্জে হাসানার সংক্ষিপ্ত রূপ। এ উপায়ে বন্ড ইস্যু ও বিশেষ তারল্য সুবিধা দেওয়া শরিয়াহসম্মত হবে কিনা, সে বিষয়ে মতামত ও পরামর্শের জন্য এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কমিটির একটি বৈঠক হয়েছে। 

গত ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে এ পদ্ধতিকে শরিয়াহসম্মত হিসেবে মত দিয়ে বলা হয়, শরিয়াহভিত্তিক স্পেশাল বন্ড জামানত (রাহান) বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ধরনের মুনাফা নেওয়া ছাড়া ‘কর্জে হাসানা’ পদ্ধতিতে তারল্য সুবিধা দিতে পারবে। তবে মুনাফা ছাড়া শরিয়াহ ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে।
নীতিমালা জারির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, সার-বিদ্যুতের পাওনার বিপরীতে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে সুদবাহী বন্ড দিচ্ছে সরকার। তবে শরিয়াহ ব্যাংকগুলো যেহেতু সুদ নিতে পারে না, ফলে তাদের শূন্য মুনাফার বন্ড ইস্যু করা হচ্ছে। এখন এই বন্ড জামানত রেখে শূন্য মুনাফায় বিশেষ ধার পাবে ব্যাংক। এর মানে প্রচলিত ব্যাংক ও শরিয়াহ ব্যাংকের ধারের সুবিধা একই। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেহেতু প্রথমবারের মতো এ উপায়ে ধার দেবে, সুতরাং পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নেওয়া লাগবে।

দেশে বর্তমানে ৬১টি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক ১০টি। এর বাইরে প্রচলিত ধারার ১৫টি ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখা এবং ১৬টি ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ভর্তুকি বাবদ দায়-দেনা নিষ্পত্তির জন্য ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের অনুকূলে ২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকার মুনাফাবিহীন ‘শরিয়াহভিত্তিক স্পেশাল বন্ড’ ইস্যুর নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সে আলোকে ইসলামী ব্যাংকের অনুকূলে প্রমিজরি নোট আকারে বন্ড ইস্যু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বন্ডের বিপরীতে ব্যাংকটি কোনো ধরনের মুনাফা পাবে না। তবে এ বন্ড বিধিবদ্ধ তারল্য সম্পদের আবশ্যকতার (এসএলআর) উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। এ ছাড়া ওই বন্ডের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য সুবিধা দিতে পারবে। এসব ব্যাংকের অনুকূলে ইস্যু করা বন্ডের অভিহিত মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ ‘হেয়ারকাট’ আরোপ তথা সম্পদের মূল্য হ্রাস বিবেচনা করে বাকি অংশের বিপরীতে বিশেষ ধার দেওয়া যাবে। এর মানে সরকার থেকে ইস্যু করা প্রতি ১০০ টাকা বন্ডের বিপরীতে ৯৫ টাকা ধার পাবে ব্যাংক। বাকি টাকা সম্পদের হ্রাস ঝুঁকি বিবেচনা করা হবে।

Show More

7 Comments

  1. I like the valuable information you provide in your articles.
    I will bookmark your weblog and check again here regularly.
    I’m quite certain I will learn many new stuff
    right here! Best of luck for the next!

    Feel free to surf to my page: vpn deal

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button