Bangladesh

সরকারের কাঁধে মামলার পাহাড় নিষ্পত্তি করতে চার সিদ্ধান্ত

দিনের পর দিন মামলার পাহাড় জমেছে সরকারের কাঁধে। এর সব মামলাতেই রাষ্ট্রপক্ষ বিবাদী। স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর মধ্যে সর্বশেষ গত ৩০ জুন পর্যন্ত কেবল উচ্চ আদালতেই ৯২ হাজার ৫১৯টি মামলা চলমান। মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করতে নেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ চার সিদ্ধান্ত। সেগুলো হলো– দেড় হাজারের বেশি মামলা থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগে আইন শাখা খোলা, মামলাগুলোর শ্রেণিবিভাজন করে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো, বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে কোনো কোনো মামলায় বেসরকারি আইনজীবী নিয়োগ এবং মামলাগুলোর তথ্য সংরক্ষণ করতে স্মার্ট কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এসসিএমএস) সফটওয়্যার প্রাথমিকভাবে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চালু করা।
 মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এসব মামলার মধ্যে ১ হাজার ৯৬৬টি মামলা সরকারের বিবেচনায় ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’। এ মামলাগুলোর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা ৪০টি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ১০০ কোটি টাকার বেশি সরকারি অর্থের সংশ্লেষ রয়েছে এমন অতি গুরুত্বপূর্ণ মামলা রয়েছে ৬৫টি। দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অতি গুরুত্বপূর্ণ মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন ১ হাজার ৫৭টি। আর আট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন সময়ে হওয়া আরও ৮০৪টি অতি গুরুত্বপূর্ণ মামলা রয়েছে। বছরের পর বছর ঝুলে থাকা এসব মামলার নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগী হয়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এসব মামলার নিষ্পত্তিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মাধ্যমে মামলাগুলোর শ্রেণিবিন্যাস করে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে শুনানির উদ্যোগ নিয়েছে।

জমে থাকা বিপুল সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তির উপায় খুঁজতে আজ বুধবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এতে সভাপতিত্ব করবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, সভায় অ্যাটর্নি জেনারেল, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব তাতে অংশ নেবেন। এ ছাড়া আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, স্থানীয় সরকার, আইন ও বিচার বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সমন্বয় ও সংস্কার এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইংয়ের সলিসিটররা অংশ নেবেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গতকাল মঙ্গলবার সমকালকে বলেন, সাড়ে ৯২   হাজার মামলার সবই সরকারের বিরুদ্ধে করা। বিচারাধীন এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আমরা উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আমাদের জায়গা থেকে আমরাও চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চলমান মামলাগুলো যদি তারা বিভিন্ন শ্রেণিবিন্যাস করে আমাদের কাছে দিতেন, তাহলে আমাদের সেগুলোর নিষ্পত্তি করতে সুবিধা হতো। যেমন– কোন মন্ত্রণালয়ের কতগুলো মামলা উচ্চ আদালতে এবং কতগুলো আপিল বিভাগে। উদাহরণ দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বন বিভাগের ২৭৫টি মামলা আদালতে বিচারাধীন ছিল। তারা আমাদের শ্রেণিবিন্যাস করে দেওয়ায় এরই মধ্যে বিপুল মামলা শুনানি শেষে নিষ্পত্তি করা গেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আজকের সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত আসতে পারে। যেমন– যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিরুদ্ধে অন্তত ১ হাজার ৫০০ মামলা বিচারাধীন, সেখানে আইন শাখা খুলতে হবে। একই বিষয়ে একাধিক মামলা বিচারাধীন থাকলে সবক’টি একসঙ্গে চিহ্নিত করে শুনানির উদ্যোগ নিতে হবে। আর উচ্চ আদালতে সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলার তথ্য সংরক্ষণ ও মামলা পরিচালনাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা অনলাইন/ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পাদনের জন্য এসসিএমএস সফটওয়্যার প্রাথমিকভাবে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চালু করা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অতিগুরুত্বপূর্ণ ৪০টি মামলার একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজকের সভায় তা উপস্থাপন করা হবে। মামলাগুলোকে আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগওয়ারি আলাদা করে বিন্যস্ত করা হয়েছে এবং মামলার হালনাগাদ তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে। এর বাইরেও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আওতাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্কসংক্রান্ত ১১৫টি, করসংক্রান্ত ৫৯১টি, বৃহৎ করদাতা ইউনিট-মূসক এবং কাস্টমস এক্সাইজ ভ্যাটসংক্রান্ত ২২৪টি মামলাকে ‘উচ্চ আর্থিক মূল্য’ বিবেচনায় ও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব জড়িত থাকায় গুরুত্বপূর্ণ মামলা হিসেবে ধরা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ হতে ১০০ কোটি টাকার বেশি সরকারি অর্থের সংশ্লেষ রয়েছে এমন ৬৫টি মামলাকে অতিগুরুত্বপুর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আজকের সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

দেশের ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনারদের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যে ১ হাজার ৫৭টি মামলাকে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়েছে। এর বাইরে ঢাকা বিভাগে ৪২৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫০, খুলনা বিভাগে ১০০, বরিশাল বিভাগে ৭৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৫, সিলেট বিভাগে সাত এবং রংপুর বিভাগে ২৮টি; মোট ৮০৪টি মামলাকে অতিগুরুত্বপূর্ণ মামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোও আজ আলোচনা আসবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্য বলছে, উচ্চ আদালতে চলমান সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট সবচেয়ে বেশি মামলা আছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ১৪ হাজার ২৮৪টি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৩৬৮টি এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ মামলা রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগে ৭ হাজার ৩২০টি। এ ছাড়া জননিরাপত্তা ও অর্থ বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে বিপুল মামলা আছে।

এসব মামলা মূলত কী ধরনের জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বেশির ভাগ মামলা সরকারি ট্যাক্স, ভ্যাট না দিতে অথবা কম দিতে, সরকারি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে, সরকারি ভূমি নিয়ে। চাকরি ও নিয়োগসংক্রান্ত মামলাও কম নয়। এর বাইরে কেউ পদোন্নতি না পেয়ে, কেউ জমির মালিকানা পেতে, কেউ আবাসন প্রকল্পে এবং কেউ বা ক্ষতিপূরণ পেতে মামলা করেছেন।  

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button