সরকারের কৌশলে চাপ অনুভব করছে জাতীয় পার্টি
জাতীয় পার্টির সংসদ নির্বাচনে থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংশয় প্রকাশের পরও দলটির সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এখন বেশ চাপে আছেন।
দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর সংশয় এবং তাঁর সঙ্গে রওশন এরশাদের বৈঠক তাঁদের চাপে ফেলার কৌশল ছিল। সরকারের এই কৌশলে তাঁরা চাপ অনুভব করছেন। চাপটা এত বেশি যে আসন সমঝোতা নিয়ে দরকষাকষির জায়গাটা আগের অবস্থানে নেই।
পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সংশয়ের মধ্যে দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা গত মঙ্গলবার আসন সমঝোতা নিয়ে তৃতীয় দফায় আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। এতে আসন সমঝোতার বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। বৈঠকে জাপার রহস্যজনক ভূমিকার সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
তবে জাপা নেতারা নির্বাচনে থাকবেন বলে আওয়ামী লীগকে দৃঢ়ভাবে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন।
গতকাল বুধবার দলীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও নির্বাচনে থাকার বিষয়ে দলের অবস্থান আবারও স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর তাঁদের বিশ্বাস বেড়েছে। নির্বাচন থেকে চলে যাওয়ার জন্য বা নাটক করার জন্য আসেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সংশয় এবং রওশন এরশাদের বৈঠক—দুটি ঘটনা তাঁদের ওপর বিশাল চাপ তৈরি করেছে। আবার দলের সংসদ সদস্য প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ার নিশ্চয়তা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। দলের ভেতর ও বাইরের এমন চাপ সামলাতে জাপার করণীয় কী হতে পারে, সেই কৌশলের খোঁজে আছেন নীতিনির্ধারকরা।
এই পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আবার বৈঠক হতে পারে। আজই আসন সমঝোতার বিষয়ে এক ধরনের বোঝাপড়া হতে পারে।
দুই দলের নেতাদের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীকে লিখিতভাবে জানানো হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী দেবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার একজন নেতা বৈঠকের বিষয়ে বলেন, জাপার নির্বাচন বর্জনের সংশয় থেকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন আয়োজনে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন ক্ষমতাসীন নেতারা। আলোচনার এক পর্যায়ে জাপা মহাসচিব নির্বাচনে থাকবেন বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বারবার আশ্বস্ত করেন।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাপা নেতারা গতকাল দলের চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে বৈঠক করেন। তবে আসন সমঝোতার বিষয়ে দল থেকে তাঁদের সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি। ৪০ থেকে ৫০টি আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, এমনটিই জানতে পেরেছেন সংসদ সদস্য প্রার্থীরা।
গতকাল জাতীয় পার্টি নেতাদের আলোচনায় আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে কথা হয়েছে বেশি। তাঁদের বিশ্লেষণ, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বিজয়ী হওয়ার মতো যোগ্য অনেক প্রার্থী আছেন। যদি একটি বড়সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন, এতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে দল গঠন করে সংসদে বিরোধী দলের আসনেও বসতে পারেন।
জি এম কাদেরকে নিয়ে রহস্য বাড়ছে
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে জি এম কাদের এক ধরনের রহস্যময় ভূমিকায় আছেন। তফসিল ঘোষণার পর তিনি নিজেই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেবেন জাপা থেকে, এমন কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যমের সামনে তিনি আসেননি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়েও তাঁর প্রকাশ্য ভূমিকা দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘উনি তো এখনো পার্টি অফিসে আছেন। জি এম কাদের সাহেব মনে করেন সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর খুবই ভালো সম্পর্ক। তাই আমাকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন।’
নির্বাচন করব, চলে যাব না : চুন্নু
গতকাল দুপুরে বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘নির্বাচন করব। নির্বাচন থেকে চলে যাব না। নির্বাচন করে আগামী দিনে ক্ষমতায় যাব, সেই স্বপ্নেও আমরা বিভোর আছি।’
তবে বরাবরের মতো আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আসন সমঝোতার বৈঠকের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
জাপাকে আওয়ামী লীগ অবিশ্বাস করে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে চুন্নু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তারা নৈশ ভোজের আয়োজন করে আমাদের খেতে দিয়েছে। আমরা খেয়েছি। পেট ভরে খেয়েছি। বিশ্বাস না করলে কারো বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে এত আলাপ করে খাওয়াতেন না নিশ্চয়ই।’
আওয়ামী লীগের সন্দেহের বিষয়ে বৈঠকে জাপা কী বলেছে, জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, ‘তাদের কথাবার্তায় আমি এত খুশি ছিলাম যে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করিনি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রওশন এরশাদ দলের কেউ নন। তিনি দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি দলীয় কোনো পদ ধারণ করেন না।