Bangladesh

সরকারের টানাপোড়েন সংসার, ঘাটতি মেটাতে বন্ড ও ট্রেজারি বিলে নজর

সরকারের কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আয় বাড়ছে না। যতটুকু হচ্ছে এর মধ্যেই বড় অংশ চলে যাচ্ছে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। বাকিটা দিয়ে চাকরিজীবীদের বেতন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামাল দিতে ঋণের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু নানা কারণে খুব বেশি সাড়া মিলছে না। গেল ছয় মাসে প্রতিশ্রুতির মাত্র ১০ শতাংশ পাওয়া গেছে বিদেশি ঋণ। আবার যেটুকু মিলছে তার বড় একটি অংশ চলে গেছে বকেয়া পরিশোধে। সঞ্চয়পত্র থেকে দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত এক টাকাও ঋণ আসেনি। ফলে অভ্যন্তরীণ ঋণের জন্য নজর দেওয়া হয়েছে বন্ড ও ট্রেজারি বিলের দিকে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার সবচেয়ে বেশি ঋণ করছে বন্ড ও ট্রেজারি বিল থেকে। সব মিলে এক ধরনের টানাপোড়েন সংসার চলছে সরকারের। অর্থ বিভাগের বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিদ্যুৎ খাতে ৪৩ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি পরিশোধ করতে সরকারি ও বেসরকারি ২৭টি ব্যাংকের মাধ্যমে বন্ড ইস্যু করা হয়। এর মাধ্যমে বাজার থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। এতে আর্থিক খাতের টানাপোড়েনের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। এই মোটা অঙ্কের দায় মেটাতে আগামী ১০ বছর বন্ডের আসল ও সুদ পরিশোধের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। এছাড়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রথম ছয় মাসে যেখানে এক লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকার ব্যয়ের কথা। সেখানে শ্লথগতিতে মোট বরাদ্দের মাত্র ১৫ শতাংশ খরচ করা হয়।

অর্থ বিভাগের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার রাজস্ব খাত থেকে আয় করে এক লাখ ৮৭ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। এই অর্থের মধ্যে ৫০ হাজার ২২৩ কোটি টাকা গেছে শুধু দেশি এবং বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। বাকি আয়ের মধ্য থেকে বিদেশ থেকে খাদ্য (চাল ও গম) আমদানিতে ২ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এর বাইরে সীমিত পরিসরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পেছনে ব্যয় করা হয়েছে ৪৩ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। বাকি আয় দিয়ে চারকিজীবীদের বেতন-ভাতা, আসবাবপত্র কেনা, মেরামত ও সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে আরও সাত হাজার ৬০ কোটি টাকার ঋণ করতে হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব মোট আয় থেকে জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ, সেক্ষেত্রে আদায় ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ হয়। আয় কম হওয়ায় ব্যয়ের ক্ষেত্রে একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে সরকারকে।

জানতে চাইলে সাবেক অর্থ সচিব (সিনিয়র) মাহবুব আহমেদ জানান, সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ কমিয়ে ট্রেজারি বন্ড ও বিল থেকে ঋণ নিচ্ছে। কারণ এ খাতে সুদের হার বেশি থাকায় অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কিনছে। আমরা (অর্থনীতিবিদ) ব্যাংক ঋণ কমানোর পরামর্শ আগেই দিয়েছি সরকারকে। এছাড়া বর্তমান সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি সুদ দিচ্ছে আমানতকারীদের অনেক ব্যাংক। যে কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে। এ খাত থেকে ঋণ কম নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয় আরও বাড়াতে হবে। না হলে আগামীতে ঋণ ও সুদ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। সেটি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বিআইডিএস’র সাবেক মহাপরিচালক ও অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরী জানান, কতগুলো ব্যয় আছে তা করতেই হয়। এর মধ্যে রয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধ। বিশেষ করে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যর্থ হলে খেলাপি হবে বাংলাদেশ। এটি হলে বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সক্ষমতার মান হারাবে। ফলে বিদেশ থেকে আর ঋণ পাওয়া যাবে না। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ভাতার ক্ষেত্রেও ব্যয় কম করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, বিগত কয়েক বছরে ঋণের অঙ্ক অনেক বেড়েছে। আগামী কয়েক বছর ঋণ ও সুদ পরিশোধের চাপ আরও থাকবে। সমাধান হচ্ছে এখন রাজস্ব আয় আরও বাড়াতে হবে। সেটি না হলে ঋণ ও সুদ পরিশোধসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সমস্যা হবে।

জানা গেছে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি তেলসহ বিশ্বব্যাপী পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক ধারা চলছে। বিশেষ করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকের তারল্য সংকট, বাজেট বাস্তবায়নে নিম্ন ও শ্লথগতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নগামী, ডলার সংকট, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স নিচের দিকে বিরাজ করছে। ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হারিয়ে ফেলছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ সাধন করছে। কারণ আয় সেভাবে বাড়ছে না-এমনটি ধরেই সরকার ব্যয়ের পথ সংকুচিত করেছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ২৫.৫ শতাংশ।

এদিকে সরকারের আয়ের চেয়ে ব্যয় সব সময় বেশি হয়। আর সেটি সামাল দিতে নেওয়া হয় ঋণ। কিন্তু এবার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আয় না হওয়ায় ঋণের খোঁজে নামলেও বিদেশ থেকে সাড়া মিলছে কম। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ মিলছে ২৩ হাজার ১১২ কোটি টাকা। এই অর্থ দিয়ে আগের নেওয়া ঋণের ১২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা পরিশোধে চলে গেছে। হাতে থাকা বাকি ১০ হাজার ৩৪৭ টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করা হয়েছে।

ঋণের অন্য খাত ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বন্ড ইস্যুর বিক্রির মাধ্যমে ১০ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। আবার এই ঋণের অর্থ থেকেই বকেয়া স্বল্প মেয়াদের ঋণের দুহাজার ৬০৯ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়।

অর্থ সংকট সামাল দিতে গিয়ে মূলধনী ব্যয় কম করা হচ্ছে। মূলধনী ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় ভবন নির্মাণ, জ্বালানি ব্যয় নির্বাহ, মেরামত ও সংস্কার, আসবাবপত্র, সরঞ্জাম ও কম্পিউটার এবং পরিবহণের যন্ত্রাংশ কেনা। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এসব খাতে ছয় মাসে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এটি মোট বরাদ্দের মাত্র ৮ শতাংশ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d