Trending

সরকার ব্যবসা বন্ধ করবে না পরিচালন ব্যয় কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস নীতিনির্ধারকদের

অন্তর্বর্তী সরকার দেশের কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করেনি, করবে না। বরং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা কম্পানি বাঁচিয়ে রাখা হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা ঘুরেফিরে এই মন্তব্যই করেছেন।

গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত ‘বৈষম্য, আর্থিক অপরাধ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির নিরাময়’ শীর্ষক তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন তাঁরা। সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।

বক্তারা বলেন, দেশে বৈষম্য দূর করে পরিবর্তন আনতে হলে ব্যবসার সুযোগ বাড়াতে হবে। আর বিদ্যমান পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে স্থবির থাকা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়।

সম্মেলনের প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো ব্যক্তিগত এজেন্ডা নেই, আমাদের এজেন্ডা হলো দেশের স্বার্থ। আমরা চেষ্টা করছি। একটা ফুটপ্রিন্ট আমরা রেখে যেতে চাই, যেটা ভবিষ্যতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তারা যাতে তা বাস্তবায়ন করে। ফুটপ্রিন্ট যেটা রেখে যাব সেটাতে যেন জনগণ সন্তুষ্ট হয়।

তখন রাজনৈতিক সরকারকে জনগণ প্রেশার দেবে, আপনারা এটা করছেন না কেন।’

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি। এর মধ্যে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারব। দীর্ঘমেয়াদিগুলো নির্বাচিত সরকার এসে বাস্তবায়ন করবে।’

নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি দেন। বলেন, ‘আমার ক্ষমতা ও সক্ষমতা দিয়ে ব্যবসার পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনব। আপনাদের যে সম্পদ আছে তার দায় আছে। আপনারা সম্পদের ব্যবহার করে পর্যাপ্ত পণ্য উৎপাদন করেন। ভোক্তার জন্য সহজলভ্য করেন।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরের বড় সমস্যা। যেভাবে সবাইকে ক্রিমিনালাইজেশন করা হয়েছে তা দূর করতে হবে। আমরা ব্যবসাকে যেভাবে রাজনীতিকরণ করেছি, তাতে মাঝে মাঝে ব্যবসায়ী পরিচয় দিতে লজ্জা হয়। বেসরকারি খাতের প্লেয়ার (উদ্যোক্তা) হিসেবে বাস্তবায়ন করা আমার দক্ষতার জায়গা। আমার কাজ কষ্ট অব ডুইং বিজনেস নিয়ে ব্যবসায়ীদের হতাশা দূর করা।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘দেশের কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়নি। রিসিভার নিয়োগ দেওয়া মানে বন্ধ করা নয়। যেকোনো কম্পানি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বেক্সিমকোতে রিসিভার দেওয়া মানে বন্ধ নয়, বরং এটা সচল করা হচ্ছে। কারণ, গত কয়েক মাস বেক্সিমকোর বেতন-ভাতা সরকার থেকে দেওয়া হয়েছে। তারা কয়েক মাস শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারছিল না। এখন রিসিভার বসানোয় কম্পানিটি সচল হবে। একই সঙ্গে বেক্সিমকোর রপ্তানির টাকা যেন বেহাত না হয়, তা যেন দেশেই ফিরে আসে সেটিও দেখা হবে।’

বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না। আমাদের গ্রোথ কমেনি। চার মাস পার করছি, মূল্যস্ফীতি কমাতে আমাকে আরো আট মাস সময় দিতে হবে। এরপর মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারব। বর্তমান বাস্তবতায় দেশে প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে যাবে। কিন্তু স্থিতিশীলতা অর্জনে ব্যাংক ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দফায় দফায় আলোচনা করেছে। এখন সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে হবে। এটা না হলে কোনো বিনিয়োগ হবে না। এ জন্য ব্যবসায়ীদেরও ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য, যারা ব্যাংকের টাকা মেরেছে তারা যেন তা ফেরত দেয়। বাইরে যে টাকা চলে গেছে তা কিভাবে ফেরত আনা যায় সেই চেষ্টা চলছে।  পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিসহ সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, অগ্রগতিও হয়েছে।’

গভর্নর বলেন, ‘বিগত সময়ে ব্যাংক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দ্রুত সব সমাধান হবে না। কারণ এক ব্যাংকের ২৭ হাজার কোটি টাকার অ্যাসেটের ২৩ হাজার কোটিই নিয়েছে একটি পরিবার। সেখানে আমার হাতে তো ম্যাজিক নেই। তবে কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না এটা বলতে পারি। দুর্বল ব্যাংকে টাকা তুলতে পারছে না এ কারণে তাদের তারল্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, সব সমস্যার সমাধান হবে।’

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংক রেগুলেশন অ্যাক্ট করা হবে, যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে সব ক্ষমতা চলে আসবে, আইনগতভাবেই তা হবে। ফলে ব্যাংক একীভূতকরণ, অধিগ্রহণসহ সব কিছুই করা সম্ভব হবে। কিছু ব্যাংকে পুঁজি সঞ্চার করা হবে, কিছু ব্যাংকে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে আসতে হবে। এসব করার জন্য আইনি কাঠামো প্রয়োজন; সেই কাজ এখন করা হচ্ছে। আর্থিক খাতের এই দুর্বলতার ছাপ দেশের অর্থনীতিতে পড়েছে। তার জের টানতে হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যে এখন পর্যন্ত ভবিষ্যত্মুখী কিছু করা সম্ভব হয়নি; বরং অতীতের জের টানা ও সংশোধনমূলক কাজ করতে হচ্ছে।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘পলিসি তৈরিতে এনবিআর জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। এ কারণে গত তিন মাসে নিত্যপণ্যের কর ও শুল্কে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। কোনো পলিসির কারণে রাজস্ব সংগ্রহে ভাটা পড়লেও রাষ্ট্রীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের ৪০ শতাংশ বেকারের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করার জন্য দ্রব্যমূল্যের দিকে নজর দিতে হবে। দেশের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে নতুন খাত খুঁজে বের করতে হবে। বিশেষ করে গার্মেন্টস খাতের পাশাপাশি কৃষি খাতের আগামীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে ব্যাক টু ব্যাক এলসি ও বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছরে বাস্তবায়িত হয়েছে ভ্যানিটি প্রজেক্ট। এসব প্রকল্পের বাস্তবিক প্রয়োজন নেই। সামষ্টিক অর্থনীতির দুর্বলতা কাটাতে এবং দেশের কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ সমস্যার সমাধান করতে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। বর্তমানে দেশে বড় কোনো বিনিয়োগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে অস্থিরতা বিরাজ করছে।’

তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার তেমন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সরকারের কার্যক্রম শুধু ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মাঠে তাঁদের কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।’

বিএনপি সরকারের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার আফগানিস্তানের চেয়েও বেশি। অথচ বিপুল পরিমাণ টাকা মেগাপ্রকল্পে বিনিয়োগ হচ্ছে। দেশে গণতান্ত্রিক জবাবদিহি থাকতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে চান। বিদেশিরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য এক ধরনের স্থিতিশীল পরিবেশ আশা করেন। সরকারের বাজেটের রিসোর্স অ্যালোকেশন ভুল হচ্ছে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পেতে হলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব দিতে হবে।’

ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘দেশে বেসরকারি খাতে সংকুচিত মুদ্রানীতি নেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি খাতে খরচের সময় সম্প্রসারিত নীতি চলেছে। এই বৈষম্যের কারণে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এই সংকুচিত মুদ্রানীতি বেসরকারি খাতকে গলা টিপে ধরছে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। আমাদের সমাজে অনেক বৈষম্য, যা কমাতে সম্পদ সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু যে ব্যবসায়ীরা দেশের সম্পদ সৃষ্টি করেন, সেটা বিলি বণ্টনের ক্ষমতা তাঁদের নেই। আবার এক শ্রেণি এটা বিলি বণ্টন করছে, তারা আবার সেটা লুণ্ঠন করছে।’

বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই সমাজে দুটি দল সৃষ্টি হয়েছে। একটি সম্পদ সৃষ্টিকারী, আরেকটি লুণ্ঠনকারী। লুণ্ঠনকারীরা সব সময় ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করে, এটা ঠিক নয়। এগুলো ঠিক করতে আমাদের সামাজিক মূলধন দরকার। আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার। এ সমাজে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। একে অপরকে শত্রু মনে করে। এ দেশে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা অর্থনীতি নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের বিরোধী মনে করেন। আবার অর্থনীতির লোকগুলোও সেটা করেন।’

ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী বলেন, ‘জ্বালানির সরবরাহ ও উৎপাদনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। জ্বালানি দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। জ্বালানির সরবরাহ ও উৎপাদনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব না দিলে শিল্প, অর্থনৈতিক, ব্যবসা খাত সব ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে যথেষ্ট ভালো আইন আছে। তবে আইনের প্রয়োগ হয় না।’

সিটি ব্যাংকের এমডি এস এম মাশরুর আরেফিন বলেন, ‘ব্যাংকের লুটপাট শেষ। এখন ব্যাংকের অবস্থা আর খারাপ হবে না। খেলাপি ঋণ এখন ভয়াবহ অবস্থায় আছে। এখন ব্যবসায় গতি আনতে সরকারকে নজর দিতে হবে। ব্যবসা ধীর হলে খেলাপি ঋণ আরো বাড়বে।’

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘গত ১৫ বছর আমাদের ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, অরাজকতা, দুর্নীতির জোয়ার চলেছে। গত কয়েক বছর সেটা সুনামির আকার ধারণ করেছিল। তবে এই সুনামি প্রতিরোধ করা গেছে। গত তিন মাসে সামষ্টিক অর্থনীতিতে সঠিক নীতি নেওয়া হয়েছে।’

ইনস্টিটিউট অব ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, ‘দেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আয় বৈষম্য, আয়করে বৈষম্য, সুযোগের বৈষম্য, নীতিকাঠামো, উন্নয়ন বৈষম্য কমানো, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন বৈষম্য দূর করতে পারলে সামগ্রিকভাবে সরকারের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।’

ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোহাম্মদ জাভেদ আখতার বলেন, ‘ভিয়েতনাম গত আট মাসে ১৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। বাংলাদেশে গত ছয় মাসে মাত্র এক বিলিয়ন ডলার এসেছে। যারা বিনিয়োগ নিয়ে আসবেন তাঁদের ওই দেশের প্রতি আস্থা আসতে হবে। এই জায়গা তৈরি না করতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব হবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘সার্বিক বৈষম্য ও লিঙ্গ বৈষম্য কমাতে হবে। এ দেশে নারীরা বিভিন্ন খাতে পিছিয়ে আছেন। তাঁদের সামনের দিকে তুলে আনতে না পারলে বৈষম্যমুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে না।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button