Bangladesh

সর্বজনীন পেনশন: সরকার অনড়, আন্দোলন চালিয়ে যাবেন শিক্ষকেরা

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিরোধিতা করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার।

১ জুলাই চালু হওয়া প্রত্যয়ের বিরুদ্ধে ওঠা শিক্ষকদের আপত্তিগুলো খণ্ডন করে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা এসব যুক্তি মানছেন না।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২ জুলাই আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন। শিক্ষকদের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এ সপ্তাহে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

১ জুলাই চালু হওয়া প্রত্যয়ের বিরুদ্ধে ওঠা শিক্ষকদের আপত্তিগুলো খণ্ডন করে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা এসব যুক্তি মানছেন না।

ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, বুয়েটসহ দেশের ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রত্যয় বাতিলসহ মোটাদাগে তিন দাবিতে ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আন্দোলনে শরিক হয়েছেন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীরাও। প্রতিবাদ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি করছেন তাঁরা। ছুটি থাকায় গতকাল শুক্রবার নিয়মিত কোনো কর্মসূচি ছিল না, আজ শনিবারও নেই। কাল রোববার থেকে কর্মসূচি চলবে। শিক্ষকেরা বলছেন, এ সপ্তাহের যেকোনো দিন প্রত্যাশিত বৈঠকটি হবে। সরকারের একটি সূত্র গতকাল জানায়, বৈঠকটি হতে পারে রোববার বা সোমবার। তবে সময় এখনো নির্ধারিত হয়নি।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান গতকাল মুঠোফোনে বলেন, ‘প্রত্যয় শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, ৪০৩টি সংস্থায় নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের ওপর কার্যকর হবে। শিক্ষকেরা শ্রদ্ধেয় মানুষ। গণতান্ত্রিক দেশে আন্দোলন তাঁরা করতেই পারেন। তবে বেশির ভাগ সংস্থায় যেহেতু পেনশন ব্যবস্থাই ছিল না, ফলে তাঁদের জন্য এটা একটা ভালো উদ্যোগ।’

অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই যাতে সুফল পান, সে জন্যই প্রত্যয়সহ অন্য পেনশন কর্মসূচি চালু করা হয়েছে এবং জনগণের কল্যাণে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির বাস্তবায়ন হবেই। একে নেতিবাচকভাবে দেখার কিছু নেই এবং এ থেকে পিছু হটারও কোনো প্রশ্ন আসে না।’

পুরো বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখতে পাচ্ছি। আমি মনে করি, লম্বা সময় নিয়ে এ ব্যাপারে মতবিনিময় ও পর্যালোচনার দরকার ছিল।

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার, সাবেক সচিব

মোট ৪০৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ ইত্যাদি সংস্থায় ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের ওপর প্রযোজ্য প্রত্যয়। এসব সংস্থার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব সরকারি ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, পেট্রোবাংলা ইত্যাদি। ৯০টি সংস্থার কর্মীরা পেনশন পেয়ে থাকলেও বাকি ৩১৩টির কর্মীরা পেনশনের বাইরে আছেন।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি, কোনো টাকা না দিয়েই তাঁরা বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় অবসরে যাওয়ার সময় এককালীন আনুতোষিক পাচ্ছেন প্রায় ৮১ লাখ টাকা। অবসরের পর প্রতি মাসে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা করে পেনশন পাচ্ছেন। তা ছাড়া উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি পাচ্ছেন। হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো ১ জুলাই বা এরপর থেকে চাকরিতে যোগ দেওয়া কেউই এসব সুবিধা পাবেন না। মাসে মাসে চাঁদা দিলে তাঁরা পেনশন পাবেন, তবে নমিনি আবার একটা নির্দিষ্ট সময় পর পেনশন পাবেন না। পুরো বিষয়টি তাঁদের কাছে অগ্রহণযোগ্য।

সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ অবশ্য ভিন্ন বক্তব্য দিলেন। তিনি বলেন, ‘বাজেটের একটা বড় অংশ পরিচালন ব্যয় হয়ে যায় বলে একধরনের সমালোচনা আছে। সমালোচনাটা একভাবে ঠিকও। এ কারণে উন্নয়ন ব্যয় বেশি করা যায় না। বাজেট থেকে পেনশনারদের জন্য বড় ব্যয় করার দিন ফুরিয়ে আসছে। এটা কোনো টেকসই ব্যবস্থাও নয়। তা ছাড়া সরকারের সক্ষমতাও তো দেখতে হবে। বৃহত্তর স্বার্থে সর্বজনীন পেনশনের কর্মসূচিগুলো ঠিক আছে বলে আমি মনে করি।’

শিক্ষকেরা বলছেন, এ সপ্তাহের যেকোনো দিন প্রত্যাশিত বৈঠকটি হবে। সরকারের একটি সূত্র গতকাল জানায়, বৈঠকটি হতে পারে রোববার বা সোমবার। তবে সময় এখনো নির্ধারিত হয়নি।

অন্য সংস্থাগুলোতেও অসন্তোষ

প্রত্যয় চালু হওয়ায় পেনশনের মধ্যে থাকা ও বাইরে থাকা সবাই ভেতরে–ভেতরে অসন্তুষ্ট। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো দপ্তর এ নিয়ে কিছু বলছে না। ছয়টি সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে গতকাল প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তাঁদের মূল কথা হচ্ছে টাকার মূল্যমান, মূল্যস্ফীতি— এসবসহ ৩০ বছর পরে প্রত্যয়ের আওতায় একজন গ্রাহককে যা দেওয়া হবে, তা বিদ্যমান সুবিধার তুলনায়ও কম হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বর্তমান পদ্ধতির মতো এককালীন মোটা অঙ্কের আনুতোষিক আর পাওয়া যাবে না।

আনুতোষিকের পাশাপাশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৯০টি সংস্থা পেনশনও পাচ্ছে বিদ্যমান ব্যবস্থায়। এতে পেনশনারের পাশাপাশি নমিনিদেরও আজীবন পেনশন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রত্যয়ে নমিনিদের আজীবন পেনশনের সুযোগ নেই। মূল পেনশনার মারা গেলে নমিনি পেনশন পাবেন, তবে সেটা মূল পেনশনারের ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি, কোনো টাকা না দিয়েই তাঁরা বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় অবসরে যাওয়ার সময় এককালীন আনুতোষিক পাচ্ছেন প্রায় ৮১ লাখ টাকা। অবসরের পর প্রতি মাসে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা করে পেনশন পাচ্ছেন। তা ছাড়া উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আলোচনাটা চাচ্ছি। আশা করছি, বসতে পারলে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বোঝাতে পারব যে ঘোষিত প্রত্যয় কতটা অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক।’ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি।

প্রত্যয়ের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলন এখন আর শুধু প্রত্যয় বাতিলে সীমাবদ্ধ নেই। তাঁরা চান ‘সুপার গ্রেডে’ অন্তর্ভুক্তি এবং স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো। সরকারের সচিব পদমর্যাদায় আছেন ১০০ জনের কিছু বেশি কর্মকর্তা। আর জ্যেষ্ঠ সচিব আছেন ১০ থেকে ১৫ জন। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো ৫০০ জন অধ্যাপক আছেন, তাঁরা সবাই সচিব বা জ্যেষ্ঠ সচিবের মর্যাদা চান। ওই কর্মকর্তার প্রশ্ন, ‘এটা কি বাস্তবসম্মত?’

আনুতোষিকের পাশাপাশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৯০টি সংস্থা পেনশনও পাচ্ছে বিদ্যমান ব্যবস্থায়। এতে পেনশনারের পাশাপাশি নমিনিদেরও আজীবন পেনশন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রত্যয়ে নমিনিদের আজীবন পেনশনের সুযোগ নেই।

সরকার যা বলছে

শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হওয়ার পর ২ জুলাই সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে সরকারি পেনশনে ‘আনফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনিফিট’ পদ্ধতির পেনশন-ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, যার ব্যয় বাজেট থেকে মেটানো হয়। এ পদ্ধতির পেনশন ব্যবস্থায় সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ ক্রমাগত বাড়ছে। এটি দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই ব্যবস্থা নয়। এখন চালু করা হয়েছে ‘ফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনিফিট’ পদ্ধতির পেনশন ব্যবস্থা। এর আওতায় ধীরে ধীরে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর মধ্যে আনা সম্ভব হবে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, কোনো অসংগতি থাকলে টুকটাক কিছু সংশোধনীর কাজ সব সময়ই করা হবে। তবে প্রত্যয়সহ সব কর্মসূচিই চলবে। কারণ, জনগণের জন্য সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি সরকারের একটা বড় কাজ।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যেহেতু ৬৫ বছর থেকে অবসরে যান, তাই প্রত্যয় কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর তাঁরা ৬৫ বছর থেকেই আজীবন পেনশন পাবেন। সরকার এ জন্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করবে বলেও জানিয়েছে। সরকার আরও বলেছে, অংশগ্রহণকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এককালীন আনুতোষিকের বদলে মাসিক পেনশনের যুক্তিসংগত পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতন থেকে কর্তন করা হলে এবং একই পরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠান জমা করলে ৩০ বছর পর একজন পেনশনার প্রতি মাসে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা হারে আজীবন পেনশন পাবেন।

সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার এ নিয়ে বলেন, ‘পুরো বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখতে পাচ্ছি। আমি মনে করি, লম্বা সময় নিয়ে এ ব্যাপারে মতবিনিময় ও পর্যালোচনা করার দরকার ছিল। সে সুযোগ এখনো আছে।’

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যেহেতু ৬৫ বছর থেকে অবসরে যান, তাই প্রত্যয় কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর তাঁরা ৬৫ বছর থেকেই আজীবন পেনশন পাবেন। সরকার এ জন্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করবে বলেও জানিয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d