সর্বত্রই আলোচনা আতঙ্কে দুর্নীতিবাজরা
সর্বত্রই আলোচনা বেনজির-আজিজ-মিয়া-মতিউরের পর কে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-বির্তক-শেয়ার-লাইক-কমেন্টের ছড়াছড়ি প্রশাসনে কর্মরত নীতিবান-সৎ-দলবাজি না করায় প্রমোশন থেকে বঞ্চিত কর্মকর্তারা খুশি
জাতীয় সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনে ২০ জুন বক্তৃতায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি বলেছেন, ‘আমলাদের একটি অংশ দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে উঠেছে, এতে জনগণের হয়রানি বাড়ছে। অল্পসংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ আমলার জন্য সারা আমলাতন্ত্র বদনামের ভাগীদার হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বার্ষিক হিসাব বাধ্যতামূলক করা এখন সময়ের দাবি। কিছুসংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এসব ব্যাপারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করলে দুর্নীতি কমবে।’ এর আগে ড. আব্দুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘বিদেশে বেশি অর্থ পাচার করেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
কানাডার টরন্টোয় বাড়ি করা বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে। কানাডায় টাকা পাচারের যে ২৮টি ঘটনার তথ্য জানা যায় তার মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীই বেশি।’ ড. মোমেনের ২০২০ সালে ‘আমলাদের কানাডায় বেশি টাকা পাচার’ এবং গত বৃহস্পতিবার সংসদে দেয়া বক্তব্য কোথাও তেমন গুরুত্ব পায়নি। তবে তার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে খুবই গুরুত্বসহকারে আলোচনা, মন্তব্য, শেয়ার, লাইক দেয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছর ‘গণমাধ্যমগুলো’ স্বকীয়তা হারিয়ে ক্ষমতাসীনদের তল্পীবাহকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও দেশের নানান নিবর্তনমূলক আইনের মধ্যে থেকে গত কয়েক মাসে গণমাধ্যমগুলো সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান আবদুল আজিজ, ঢাকা মহানগরের সাবেক পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, ডিআইজি জামিল হাসান, এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রশাসনের উচ্চপদকে অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের যে চিত্র তুলে ধরেছে তা দু:সাহসী ভুমিকা পালনের নামান্তর। রাষ্ট্রের চতুর্থস্তম্ভ গণমাধ্যম ঝুঁকি নিয়েই দেখিয়ে দিয়েছে প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কিভাবে দেখকে দুর্নীতির শ্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছেন।
দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে চলছে আলোচনা, সমালোচনা ও তীব্র বিতর্ক। এর সঙ্গে পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের বিবৃতি দিয়েছে। পুলিশ এসোসিয়েশনের সেই বিবৃতির পক্ষে অবস্থান নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথ্য ও সম্প্রদার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে যেন গণমাধ্যমে পুলিশের খবর প্রচারে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে সম্পাদক পরিষদ বিবৃতি দিয়ে পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের বিবৃতিকেক স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য হুমকিসরুপ বলে উল্লেখ করেছে। সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয় (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি (ডিআরইউ) পাল্টা বিবৃতি পরিস্থিতি আরো গরম হয়ে গেছে। বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, পুলিশের সাবেক কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার লুটপাট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞপ্তির ভাষা দেখলে মনে হয়, স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে হুমকি দিয়েছে পুলিশ। এ ধরনের হুমকি কেবল পুলিশি রাষ্ট্রেই দেখা যায়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের এ ধরনের ঔদ্ধত্য রাষ্ট্রীয় শৃংখলাভঙ্গের শামিল।
এ প্রসঙ্গে গতকাল টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিকে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি সংবিধান পরিপন্থি হুমকি। এটা ফাঁস হওয়া সাবেক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাশাপাশি পুলিশ বাহিনী একাংশের দুর্নীতির সুরক্ষা প্রদানের অপচেষ্টার নামান্তর।
এ অবস্থায় গত ৪ জুন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বেনজির আহমেদ ও আবদুল আজিজ আওয়ামী লীগের লোক নয়। সিনিয়রিটি ও মেধার ভিত্তিতে বেনজীর আইজিপি হয়েছিলেন। তেমনি আজিজ আহমেদও তার যোগ্যতায় ও সিনিয়রিটিতে সেনাপ্রধান হয়েছেন। এখন ভেতরে তারা যদি কোনো অপকর্ম করে এটা যখন সরকারের কাছে আসে, তখন এদের বিচার করার সৎ সাহস সরকারের আছে। দুর্নীতিবাজ যত বড় প্রভাবশালী হোক তার বিচার হবে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে অত্যান্ত প্রভাবশালী এবং দলদাস আমলাদের অবৈধভাবে গড়ে তোলা সম্পদের চিত্র জনসন্মুখে উঠে আসা, দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়ায় বর্তমান প্রশাসনে কর্মরত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের কেন্দ্রীয় সদর দফতর সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভন্ন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, কর্পোরেশন, শাখা এমনকি জেলা উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এই ভীতি ছড়িয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রতি কর্মদিবসে যান এমন একাধিক সাংবাদিক জানান, কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঈদের ছুটির পর থেকে অফিসে এসে প্রথমেই নিজেদের মধ্যে আজিজ, বেনজির, আসাদুজ্জামান মিয়ার মতো আর কার কার অবৈধ সম্পদ প্রকাশ পেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেন।
এমনকি কাজের ফাঁদে নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করেন দুর্নীতি দমন কমিশন কার কার সম্পদের খোঁজখবর করছেন; দুদক কর্মকর্তারা কাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করছেন। এমনকি যে সব মন্ত্রণালয়ে ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না হিসেবে সবার কাছে চিহ্নিত ও পরিচিত সে সব কর্মকর্তাদের মধ্যে ভীতি আতঙ্ক বেশি। যারা এরোই মধ্যে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন তারা নিজেরা নিজেরাই অস্বস্থিতর মধ্যে সহকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। এতোদিন যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে ক্ষমতাসীন দলের দলদাস ও চাটুকার হিসেবে নিজেদের জাহির করে প্রমোশন নিয়েছেন, অবৈধ পথে অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তাদের মধ্যে আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি। কারণ সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে প্রশাসনে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি’ দেখাতে কঠোর অবস্থায় গেছে। সে জন্য এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে একটি ছাগলকা-ে এনবিআর থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া ওই সরকারি কর্মকর্তাকে একই সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
সুত্রের দাবি মতিউর রহমানকে সরিয়ে দেয়ার পর সিভিল প্রশাসনে যারা গত কয়েক বছরে বিরোধী দল বিএনপির ওপর জুলুম নির্যাতনের পুরস্কার হিসেবে প্রমোশন এবং বিশেষ সুবিধা ভোগ করে দুর্নীতির সাগরে নিজেদের ভাসিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, ‘রাতেই ভোট করে আমরাই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছি’ বলে দম্ভোক্তি করেছেন এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক মেগা প্রকল্পের পরিচালনায় সময় ক্ষেপন করে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি এবং লুটপাট করেছেন সেই চিহ্নিত কর্মকর্তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। অন্যদিকে সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে যারা নিবেদিতপ্রাণ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত, দুর্নীতির সুযোগ পাননি এবং দুর্নীতির শ্রোতে নিজেদের ভাসিয়ে দেননি তাদের মধ্যে খুশির আমেজ। এতোদিন তারা নিজেদের অবহেলিত মনে করলেও নিজেদের সততার জন্য নিজেরাই একে অপরকে বাহবাব দিচ্ছেন। মূলত যারা ক্ষমতাসীন দলের দলদাস না হওয়ায় প্রমোশন পাননি এবং সম্পদের পাহাড় গড়াতে পারেননি তারা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে খুশি।
সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, সাবেক সেনা প্রধান আব্দুল আজিজ, সাবেক ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান, পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি জামিল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস, অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুলের যে সম্পদের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বাদশাদের পরিবারের সম্পদকে হার মানায়। দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা এমনকি থানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনেকের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে যারা অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজনের নামে তাদের মধ্যে ভীতি বেশি। এ ছাড়া প্রশাসনের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর এবং মেগা প্রকল্পের দায়িত্বপালন করা কর্মকর্তাদের মধ্যে ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। একাধিক কর্মকর্তার মতে ‘চোরের মন পুলিশ পুলিশ’ প্রবাদের মতোই তারা দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তোলায় এখন ‘এই বুঝি গণমাধ্যমে আমার সম্পদের বিবরণ প্রক্শা হলো’ ভীত সন্ত্রস্ত। তবে যারা দুর্নীতির শ্রোতে নিজেদের ভাসিয়ে দেননি তারা বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন।
এদিকে দীর্ঘদিন ঘুমিয়ে থাকার পর দুর্নীতি দমন কমিশন এখন জেগে উঠেছে। পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদকে সংস্থাটি আইনের জালে আটকে ফেলেছে। দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের বিবরণ গণমাধ্যমে আসার পর তদন্তের চিন্তা করা হচ্ছে। বাহিনীর প্রধান হিসেবে ‘অতি বিশ্বস্ত’ এবং ২০১৪ সাল থেকে নির্বাচনের সময় ‘সেবাগ্রহিতা’ এই দুই কর্মকর্তার কোনো দায়িত্বই এখন সরকার গ্রহণ করছে না। ওয়ান টাইম ব্যবহৃত টিস্যুর মতোই বেনজির, আজিজ, মতিউরদের ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। এনবিআরের মতিউর রহমানকে গতকাল এনবিআর ও সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য পদ থেকে ‘তালাক’ দেয়া হয়েছে। পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুলের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে গত ১৩ মে মাঠে নেমেছে দুদক। এতে মধ্যে তার ও স্ত্রী ফারজানা রহমানের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে। গত ৭ মে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাকাডেমি সারদায় কর্মরত পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদক চার্জশিট দিয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের হয়।
দুদকে প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন সুব্রত ঝুলিয়ে রেখেছিলেন অনুসন্ধান। শেষ পর্যন্ত কাজ হয়নি কোনো তদবিরে। চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের ডিভিশন বেঞ্চ জয়পুরহাটের তৎকালীন পুলিশ সুপার মো. নূরে আলম এবং তার সহোদর ডিএমপির সাব-ইন্সপেক্টর সারে আলমের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়। আদেশে ৩ মাসের মধ্যে দুই সহোদরের অবৈধ সম্পদের অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে বলেন। গত ৩০ মে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাসের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগরের সিনিয়র বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এই আদেশ দেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। দুদক কার্যালয়ে তাঁকে তলব করা হলেও তিনি দুদকে আসেননি। তাঁকে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
দুদক সূত্র জানায়, চাকরিরত বেশ কয়েকজন ডিআইজি, পুলিশ সুপার, ওসি, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর, পুলিশ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তা, আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তাসহ আইনশ্ংখলা বাহিনীর অন্তত দুই শতাধিক কর্মকর্তার একটি ‘শর্টলিস্ট’ ধরে এগোচ্ছে সংস্থাটি। বিভিন্ন জনের দায়েরকৃত অভিযোগ, বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়েছে এ তালিকা। আনসার-ভিডিপির পরিচালক (অপারেশন্স) সৈয়দ ইফতেহার আলীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান চলছে। এছাড়া ইতঃপূর্বে দুদক থেকে দায়মুক্তি প্রাপ্ত ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত ডিআইজি মো: গাজী মোজাম্মেল হকসহ ১৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পুন: অনুসন্ধানেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নামে- বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের অভিযোগ ছিল।
অন্যদিকে সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন সচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। পৃথক পৃথক দুর্নীতির অভিযোগে এদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সুত্রের দাবি, গত ২০১৪ সালে দায়িতত্বে থাকা সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন (সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব), স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিঞা (এমএম নিয়াজ উদ্দিন), মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব কে. এইচ. মাসুদ সিদ্দিকী, যুগ্ম-সচিব আবুল কাসেম তালুকদার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (ভারপ্রাপ্ত) সচিব এ. কে. এম. আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব (বর্তমানে বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান) মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব তাপস কুমার রায় ও যুগ্ম-সচিব আনোয়ার হোসেন।
এছাড়া বর্তমান স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু, সাবেক বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব তাপস কুমার রায় ও সাবেক যুগ্ম-সচিব আনোয়ার হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আবুল কালাম আজাদ,, সাবেক ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের একান্ত সচিব (পিএস) আবুল কালাম আজাদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও কর্মসংস্থান ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম সরকার, সাবেক জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করছে।