Bangladesh

সহজ শর্তের বৈদেশিক ঋণে জোর দিতে চায় সরকার

ডলার সংকটের বাস্তবতায় বিদেশি ঋণ ও অনুদানে আরও গুরুত্ব দিতে চায় সরকার। বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ঠিক রাখা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিদেশি ঋণ ও অনুদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিবেচনায় বিদেশি ঋণ ও অনুদান বাড়ানো এবং সঠিক ব্যবহার কৌশল খোঁজা হচ্ছে। বৈদেশিক ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করার সুপারিশ রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের। এই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। 

এ ছাড়া পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বার্ষিক প্রক্ষেপণের চেয়ে চলতি অর্থবছর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রকৃত কম বরাদ্দ এবং তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে মনে করে পরিকল্পনা বিভাগ। খাতভিত্তিক এ রকম অসামঞ্জস্যপূর্ণ বরাদ্দের একটি তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাতে বছরের মাঝপথেও নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হতে পারে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এমন আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে পুনর্গঠিত পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম বৈঠকে। 

দীর্ঘ আট বছর পর আজ বুধবার অনুষ্ঠেয় পরিকল্পনা কমিশনের এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও কমিশনের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা কমিশন পুনর্গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চেয়ারপারসন পুনর্নির্বাচিত করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে সর্বশেষ কমিশন পুনর্গঠন করা হয়। আজকের বৈঠকে বিদেশি ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। এ-সংক্রান্ত কার্যপত্রে বলা হয়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ছিল ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ। বিদেশি ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করার সুপারিশ রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের। 

সুদাসল পরিশোধ বেড়েছে ৫১ শতাংশ

বিদেশি ঋণপ্রাপ্তিতে সরকারের পক্ষে গুরুত্ব দেওয়ার দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে ২০২৬ সালে উত্তরণের পর এখনকার মতো আর সহজ শর্তে স্বল্পসুদে ঋণ পাওয়া যাবে না। তাই এখন যত বেশি ঋণ আনা সম্ভব, সেই চেষ্টা থাকবে। অন্য কারণ হচ্ছে, এ ধরনের ঋণের সুদাসল পরিশোধে ক্রমেই বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বাড়ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণের সুদাসল পরিশোধ বেড়েছে ৫১ শতাংশ।  ইআরডির প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ৩৫৮ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হবে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর যা ছিল ২৭৪ কোটি ডলার।

জানা গেছে, নতুন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়ার ধারণাপত্র তৈরির কাজ চলছে। এরই মধ্যে অর্থনীতিবিদদের একটি প্যানেল করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বাড়াতে দক্ষ প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের স্বার্থে ‘প্রকল্প পরিচালক পুল’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বৈঠকে। 

উন্নয়ন বরাদ্দে অসামঞ্জস্য

সভার কার্যপত্রে এডিপিতে বরাদ্দের দুর্বলতার বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, চলতি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বার্ষিক প্রক্ষেপণের চেয়ে চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রকৃত বরাদ্দ কম। যেমন– স্বাস্থ্য খাতে ১১ দশমিক ১ শতাংশ প্রক্ষেপণের বিপরীতে প্রকৃত বরাদ্দ মাত্র ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং কৃষিতে ১১ দশমিক ৫ শতাংশের বিপরীতে মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বার্ষিক প্রক্ষেপণের চেয়ে এবারের এডিপিতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু খাতে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে বার্ষিক ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ প্রক্ষেপণের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ রকম বেশ কিছু খাতভিত্তিক অসামঞ্জস্যের তথ্য তুলে ধরা হবে বৈঠকে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button