Hot

সাঈদীর মৃত্যু: আমেরিকায় মিশিগান ছেলের স্ট্যাটাস, খুলনায় গ্রেপ্তার মা

আমেরিকায় মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি, পিএইচডি গবেষক পুত্রের ফেসবুক স্ট্যাটাসের জের ধরে খুলনায় মা’কে গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠেছে। খুলনার খালিশপুর থানা পুলিশ পিএইচডি গবেষক তানজিলুর রহমানের মা আনিছা সিদ্দিকাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে মামলা করেছে। গতকাল তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

জানা যায়, জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পরে গত ১৭ই আগস্ট আমেরিকার মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির ম্যাটেরিয়াল সাইন্সের পিএইচডি গবেষক তানজিলুর রহমানের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন- ‘আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালির ভূমিকা আমার কাছে ইতিহাসের বিরল ঘটনা বলে মনে হয়। তাকে আমি কোনো ছকেই ফেলতে বা বুঝতে পারি না। তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় ব্যাপারটা আরও অদ্ভুত। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে প্রথমে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং পরে হাইকোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন সুখরঞ্জন বালির ভাই বিসা বালির হত্যাকাণ্ডে।

এই মামলার রায় সঠিক হয়নি বলে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সুখরঞ্জন বালি আদালতে সাক্ষী দিতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে অপহৃত হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন ভারতের কারাগরে আটক ছিলেন। বিবেকের তাড়নায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় উপস্থিত হয়ে আইন বিচার এবং পুলিশের কর্মকাণ্ড মিডিয়ার কাছে তুলে ধরেন।’ এই স্ট্যাটাস দেয়ার একদিন পরই তানজিলুর রহমানের মা আনিছা সিদ্দিকাকে খুলনার খালিশপুর থানার বয়রা হাজী ফয়েজ উদ্দীন সড়কের মামা বাড়ি থেকে ২০শে আগস্ট আটক করে পুলিশ।

ওইদিনের অপর একটি স্ট্যাটাসে তানজিলুর রহমান উল্লেখ করেন- ‘সাঈদী সাহেবের জানাজায় সুখরঞ্জন বালির উপস্থিতি নিয়ে আমার লেখাটা অনেক জায়গা থেকে শেয়ার হওয়ায় রোববার, ২০শে আগস্ট খুলনার বয়রা এলাকার হাজী ফয়েজউদ্দীন সড়কে আমার নানাবাড়িতে স্থানীয় যুবলীগ নেতারা পুলিশ নিয়ে হাজির হয়ে তাণ্ডব চালায় ও লুটপাট করে। দুইটা ল্যাপটপ ও নগদ টাকা নিয়ে যায়। আমার ছোট মামা সিদ্দিক শহীদকে বেদম মারধর করে।

আমার মা আনিছা সিদ্দিকা এগুলো সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ জানানোয় তাকে খালিশপুর থানায় ধরে নিয়ে গেছে। দুইজন ভাড়াটিয়া এগিয়ে আসায় তাদেরকেও সঙ্গে নিয়ে গেছে। জি হুজুর শুনে অভ্যস্ত পুলিশ প্রতিবাদের কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার মা’কে সারারাত থানাহাজতে আটকে রেখে গোপন বৈঠকের অভিযোগে মামলা দিয়ে কোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছে।’

আবেগঘন এই স্ট্যাটাসে পিএইচডি গবেষক তানজিলুর রহমান বলেন, ‘আজ আমার মা গ্রেপ্তার হয়েছে, কাল আপনার মা’কে ধরে নিয়ে যেতেও পুলিশ দুইবার ভাববে না। আজকে আমার মা’কে খালিশপুর থানা থেকে যদি খুলনা কারাগারে যেতে হয়, এই লজ্জা বাংলাদেশে এখনো কোনো মানুষ যদি অবশিষ্ট থেকে থাকেন, তাদের সবার। আর যদি শুধু পা চাটা দালালেরাই অবশিষ্ট থাকে তাহলে আমার প্রিয় জন্মভূমির কাছে আপাতত কোনো আবেদন নেই।

এদিকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল গিয়াস জানান, গত ২০শে আগস্ট সকাল আনুমানিক ১২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খালিশপুর থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে বড় বয়রাস্থ হাজী ফয়েজ উদ্দিন রোড-এর জনৈক ব্যক্তির বাড়ি থেকে অন্তর্ঘাতমূলক ষড়যন্ত্র করার জন্য সমবেত হয়। এ অভিযোগে মো. রকিবুল ইসলাম (২৪), মো. তামিম ইকবাল (১৯) এবং আনিছা সিদ্দিকা (৪৫)কে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকালে ঘটনাস্থল থেকে আসামিদের হেফাজত থেকে বিপুল পরিমাণ ধর্মীয় উগ্রপন্থি বিভিন্ন বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিন, রেজিস্টার, লিফলেট এবং অন্তর্ঘাতমূলক ষড়যন্ত্র করার কাজে ব্যবহৃত ৩টি ল্যাপটপ, পাসপোর্ট এবং ৪টি মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button