সাজা দিয়েও সামলাতে হিমশিম বিএনপি
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দল ও নেতাদের ভাবর্মূতি আরও বাড়িয়ে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে চায় বিএনপি। তবে দলের হাইকমান্ডের এ আশা পূরণে ‘পথে কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন মাঠপর্যায়ের কিছু নেতাকর্মী। তাদের দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে দলের ভাবমূর্তি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না দলটি। আড়াই মাসে সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কারসহ নানা সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও লাগাম টানা যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে কতিপয় নেতাকর্মী দলের কঠোর অবস্থানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। এ পরিস্থিতিতে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে দলটির হাইকমান্ড। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে লাগাম টানার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
অবশ্য বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের ‘জিরো টলারেন্সে’র কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কারণ অপকর্ম ও বিরোধে জড়িয়ে এরই মধ্যে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী দল থেকে বাদ পড়ছেন। একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব–কোন্দল থাকলেও প্রকাশ্যে বিরোধে জড়াতে ভয় পাচ্ছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে নিজের এবং দলের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা করে ‘গোপনীয়তা ও সর্তকতা’ অবলম্বনের মাধ্যমে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন। দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মনে করেন, সারাদেশের মুষ্টিমেয় নেতাকর্মীর নেতিবাচক কাজের দায় দলের সবাইকে নিতে হচ্ছে। নানা কায়দায় যারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা নিয়েছেন এখনও তারাই চাঁদাবাজি ও দখলদারিতে জড়িয়ে পড়ছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। কোনো অপকর্মে বিএনপি কর্মীদের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ চাঁদাবাজি করতে গেলে তাকে পুলিশে দিতে বলেছি।’ তবে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে অনেক অপপ্রচার চলছে বলে মনে করেন তিনি।
বিএনপি কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পর সারাদেশে ১ হাজার ৪৪ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫২৭ জনকে কারণ দর্শানোর নেটিশ, ৪৫১ জনকে বহিষ্কার, ২৫ জনের পদ স্থগিত, ৩৬ জনকে সতর্ক এবং ৫ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও থানা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী সাংগঠনিক শাস্তির মুখে পড়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ সমকালকে বলেন, ‘অনিয়ম, নৈরাজ্য ঠেকাতে বিএনপির কঠোর অবস্থানের পরও কিছু কিছু জায়গায় দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে। মোহের কাছে অনেক সময় নীতি, আদর্শ পরাজিত হয়। যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠছে, তাদের ক্ষেত্রে হয়তো এ কথাই প্রযোজ্য।’
জেলায় জেলায় বহিষ্কার, পদ স্থগিত
আলোচিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের গাড়ি সরানোর ঘটনায় জড়িত থাকায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ওই কমিটি। ‘দলীয় আদর্শের পরিপন্থি’ বক্তব্যের জন্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরিয়ে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে। ফরিদপুরের নগরকান্দায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এক কর্মী নিহতের ঘটনায় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে। দখল-হামলার ঘটনায় স্থগিত করা হয়েছে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের দলীয় পদ। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কারের পর দলের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে ময়মনসিংহের বিএনপি নেতা ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর বিরুদ্ধে। সাইফুল আলম নিরবের নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে একই অভিযোগে। ফ্ল্যাট উদ্ধারে গিয়ে এক ব্যক্তিকে মারধর এবং পরে তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় স্থগিত করা হয়েছে শেখ রবিউল আলম রবির নির্বাহী সদস্য পদ।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূলের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন, খোঁজখবর রাখছেন। তবে ৫ আগস্টের পর যাদের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি, তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এসব ঘটনা দলীয় পদ-পদবি প্রদান এবং মনোনয়নে ‘আমলনামা’ হিসেবে দেখা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে শীর্ষ কয়েক নেতার দাবি, আওয়ামী লীগ শাসনামলে বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্ছেদ হওয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা সেগুলো উদ্ধারে গেলেও দখলের অভিযোগ আসছে। আবার কোথাও কোথাও ঘাট, বাসস্ট্যান্ড ও হাটবাজারে শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্যোগ নিলেও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দখলের কথা বলা হচ্ছে। তারা বলেন, সম্প্রতি ঢাকা মহানগর প্রজেক্টে একটি ফ্ল্যাট নিয়ে বিরোধের জেরে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলমের বিরুদ্ধে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু আসলে ফ্ল্যাটটি তিন বছরের বেশি একজন অবৈধভাবে দখল করে ছিলেন। কোম্পানির লোকজন সেটি উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন।
বিএনপি নেতারা জানান, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় দৃশ্যমান শাস্তির বাইরেও অনেককে কঠোর ভর্ৎসনা ও সতর্ক করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি, মহানগর, জেলা-উপজেলা সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর ব্যাপারে একই মনোভাব দেখাচ্ছেন শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে। কোনো লোভ-লালসার সঙ্গে বিএনপির আদর্শ যায় না। গত ১৭ বছরে দলের নেতাকর্মীরা সেটাই প্রমাণ করেছে। বিএনপির বিরুদ্ধে এখন যেটা ঢালাওভাবে বলা হচ্ছে সেটা অপপ্রচার। কারণ যখনই কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, সেটা যত বড় নেতার বিরুদ্ধেই হোক, তাৎক্ষণিক যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
শাস্তির পরও বেপরোয়া অনেকে
দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দখল-হামলার ঘটনায় শাস্তির মুখে পড়েন বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন। গত ৭ আগস্ট তাঁর দলীয় পদ স্থগিত করে বিএনপি। কিন্তু স্থানীয় লোকজন বলছেন, বিলকিস আক্তারের শাস্তি হলেও বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর দখলদারিত্ব থেমে নেই। খেয়াঘাট, হাটবাজার, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড ও চর দখল করেছেন তারা। কৌশলে আগের ইজারাদার হটানো হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগপন্থি ইজারাদার থাকলেও টাকা তুলছেন বিএনপির লোকজন।
অপকর্মে জড়িয়ে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি রুহুল আমিন দুলাল ও বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মফিদুল মোল্লা। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘অনেক ঘটনা অতিরঞ্জিত করে প্রচার করা হচ্ছে। দখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধার করতে গেলেও দখল করার অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে রয়েছে অনেক নৌকাঘাট ও হাটবাজার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেগুলোতে চাঁদাবাজি শুরু করেন বিএনপির কিছু নেতা। সিলেটের পাথর কোয়ারি, বালুমহাল ও বাসস্ট্যান্ডেও চাঁদাবাজি শুরু হয়। এসব ঘটনায় এরই মধ্যে সিলেট বিভাগে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১০ নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরানের দলীয় পদ স্থগিত হয়। জাফলং পাথর কোয়ারির সরকারি সম্পদ, বালু ও পাথর লুটের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, জাফলং পাথর কোয়ারি থেকে বালু ও পাথর লুটের নেপথ্যে রফিকুল ইসলাম শাহপরান ছাড়াও রয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও গোয়াইনঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপন, জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বকস, সেলিম জমিদারসহ বেশ কয়েকজন।
সিলেট জেলা বিএনপি যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলুর বিরুদ্ধে গত ৮ আগস্ট জমি দখল ও মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ করেছেন শাহপরান রয়েল সিটি প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলী আশরাফ খান মাছুম। কোম্পানীগঞ্জ বিএনপির সাবেক নেতা ও পাথর ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা-হামলার অভিযোগ তুলেছেন সুবিদবাজারের এক নারী। মৌলভীবাজার যুবদল সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গলের কালাপুর গ্যাস ফিন্ডের কাজ বাগিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষকে হুমকি অভিযোগ উঠেছে। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও ভারতীয় চিনির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণেও অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির অনেক নেতার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জিকে গউছ সমকালকে বলেন, ‘ব্যক্তির দায় দল নেবে না। ব্যক্তি অন্যায় করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণের কাছে এবার বিএনপিকে ভিন্ন মাত্রায় উপস্থাপন করতে চাই।’
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে খুলনা বিভাগে গত দুই মাসে ৫৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত ১৯ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এর আগে গত ১০ আগস্ট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল, ১৭ আগস্ট জেলা ও মহানগর ছাত্রদল এবং ১৯ আগস্ট জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু তারপরও নেতাকর্মীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।
গত ১৪ আগস্ট নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সদস্য মঈদুল হক টুকু, সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সদস্য খায়রুল ইসলাম হিরু ও নুর আলম নুরু এবং মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদ হাসান বিপ্লবকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ব্যবসায়ী শিবপদ মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে পাইকগাছা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম এনামুল হক ও সদস্য কিশোর মণ্ডলকে দলীয় পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গত ৫ অক্টোবর সুধী সমাবেশে দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ জনকে একসঙ্গে বহিষ্কার করে মহানগর বিএনপি। এ ছাড়া চাঁদাবাজির অপরাধে বেশ কয়েকজন বহিষ্কার হন।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের এক বিন্দু ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগ সেল খোলা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই শোকজ এবং তদন্ত সাপেক্ষে বহিষ্কার করা হচ্ছে।’
বগুড়ায় দখল ও চাঁদাবাজির ঘটনায় সম্প্রতি ১৭ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) রাজশাহী আঞ্চলিক পরিচালককে হত্যার হুমকির অভিযোগে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছেন মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট। তবে তাঁর দাবি, তিনি দলীয় প্রতিহিংসা ও গ্রুপিংয়ের শিকার হয়েছেন। রাজশাহী মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদার বিরুদ্ধে নগরীর মালোপাড়ায় ৬ কাঠা সরকারি জমি দখলের অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। আদালত ওই সম্পত্তিতে ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন।
সরকার পরিবর্তনের পর ময়মনসিংহের গফরগাঁও এবং পাগলা থানা বিএনপির পাঁচটি গ্রুপ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা চাঁদাবাজি শুরু করে, হামলা-ভাঙচুরে জড়ায়। দুটি হত্যার ঘটনাও ঘটে। এসব কারণে এখানে তিনটি কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
মাদারীপুরের শিবচরে হাট-ঘাট, বালুমহাল, বাসস্ট্যান্ড, নদীমহাল ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন বিএনপির চার নেতা। হত্যা মামলায় আসামি না করার শর্তে লাখ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। ওই চারজন হলেন– উপজেলা বিএনপি নেত্রী নাদিরা মিঠু চৌধুরী, বিএনপি নেতা শামিম চৌধুরী, শাজাহান মোল্লা ওরফে সাজু মোল্লা এবং শাহাদাত হোসেন (শাহাদাত কমিশনার)। তারা এলাকা ভাগ করে নিয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা। এর মধ্যে পাচ্চর বাসস্ট্যান্ডসহ পদ্মা সেতু এক্সপ্রেসওয়ের সব বাসস্ট্যান্ড ও কাউন্টার নিয়ন্ত্রণ করছেন নাদিরা মিঠু, শামিম চৌধুরী ও শাজাহান মোল্লা। পৌর এলাকা রয়েছে কমিশনার শাহাদাত হোসেনের নিয়ন্ত্রণে। নদী থেকে বালু উত্তোলনে তাদের আধিপত্য দৃশ্যমান। এ ছাড়া, ঐতিহ্যবাহী মাদবরের চর হাটের মজু মেম্বার ও শহীদ খালাসীর বালুমহাল দখলের অভিযোগ উঠেছে নাদিরা মিঠু চৌধুরী ও শামিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তারা হাটের কয়েকটি দোকানে তালা দিয়ে ২ লাখ টাকা আদায় করেছেন বলে জানান স্থানীয়রা। এখনও অনেক দোকানে ঝুলছে তাদের দেওয়া তালা।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, জেলা, মহানগর, থানা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন হাইকমান্ড। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এ ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের আস্থা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।