USA

সাজা হলে ট্রাম্পকে কি কারাগারে যেতে হবে

আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফৌজদারি মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার দোষী সাব্যস্ত করেছেন নিউইয়র্কের ম্যানহাটান আদালতের জুরি বোর্ড। শিগগিরই বিচারক এই মামলার ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করবেন। এখন একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কি কারাগারে পাঠাবেন আদালত?

১২ সদস্যের জুরি বোর্ড ফৌজদারি মামলায় ৩৪টি অভিযোগের সব কটিতেই সাবেক প্রেসিডেন্টকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। বিচারক মার্চেন আগামী ১১ জুলাই এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে আইনজীবী মাইকেল কোহেনের মাধ্যমে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ব্যবসায়িক নথিপত্রে জালিয়াতির মাধ্যমে এই ঘুষের তথ্য গোপন করেন তিনি। এই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে।

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ব্যবসায়িক নথিপত্রে জালিয়াতির মামলায় কোনো ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে খুব কমই তাঁকে কারাগারে যেতে হয়। ছয় সপ্তাহ ধরে শুনানি শেষে ট্রাম্পও এমন এক অভিযোগে দায়ের করা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

নিউইয়র্কের বিবাদীর আইনজীবী অ্যান্ড্রু ওয়েনস্টেইন বলেন, অতীতের নজির বিচারক মার্চেনকে ট্রাম্পের এই ফৌজদারি মামলায় সাজার রায় ঘোষণায় হয়তো সহায়তা করবে। আদতে এটা এমন কোনো মামলা নয় যে দেশের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে সাজা দিয়ে আদালত কারাগারে পাঠিয়ে দেবেন।

এই অ্যান্ড্রু ২০০৯ সালে এমন একটি মামলার আইনজীবী ছিলেন, যে মামলায় ব্যবসায়িক নথিপত্রে জালিয়াতির অভিযোগে এক ব্যক্তির তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। তবে শর্ত সাপেক্ষে ওই ব্যক্তিকে কারাভোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

ওয়েনস্টিন বলেন, ‘কিন্তু ট্রাম্পের মামলা পুরোপুরি ভিন্ন। সুতরাং আমি মনে করি না, ঐতিহাসিকভাবে আপনি এই মামলার দিকে তাকাতে পারেন। কারণ, তিনি ছিলেন ভিন্ন আরেক মানুষ।’

ট্রাম্প ২০১৬ সালে স্টর্মিকে ঘুষ দিতে তাঁর নিউইয়র্কভিত্তিক আবাসন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু সেই ঘুষের অর্থ দেওয়ার বিষয়টি জালিয়াতির মাধ্যমে নথিপত্রে গোপন রেখেছিলেন। স্টর্মি অভিযোগ তুলেছেন, এক দশক আগে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর যৌন সম্পর্ক হয়েছিল।

আইনজীবীরা বলছেন, এই ঘুষের অর্থের বিষয়টি গোপন রেখে ট্রাম্প আয়কর আইন লঙ্ঘন করেছেন। তাঁর সম্পর্কে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা জন্মাতে পারে, এমন আশঙ্কায় তিনি কাজটি করেছেন।

বিবাদীর আইনজীবী ও সাবেক কৌঁসুলিসহ ছয় আইনবিশেষজ্ঞ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলছেন, কোনো দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অতীতে কোনো ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড না থাকলে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা খুবই বিরল।

মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগই তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি স্টর্মির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে আপিল করবেন, সেটা অনেকটা নিশ্চিত।

ব্যবসায়িক নথিপত্র জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে কারও সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

বিবাদীর আইনজীবী ও সাবেক কৌঁসুলিসহ ছয় আইনবিশেষজ্ঞ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলছেন, কোনো দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অতীতে কোনো ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড না থাকলে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা খুবই বিরল। আর নিউইয়র্ক রাজ্যে  ট্রাম্পের অতীত কোনো ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড নেই। সুতরাং তাঁর ক্ষেত্রে আর্থিক দণ্ড হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের সাজা অসম্ভব নয়। ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর কী ধরনের সাজা হবে, এখনই তা নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।

এই মামলায় দণ্ডের ক্ষেত্রে বিচারক মার্চেন ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের ভূমিকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে পারেন। আবার ট্রাম্প দোষ স্বীকার না করে মামলায় লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রেখেছেন, সেটিও তিনি বিবেচনায় রাখতে পারেন।

জুরি বোর্ড ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করার পর ম্যানহাটান ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্যাগ অবশ্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালতে কারাদণ্ডে মতো রায়ের আবেদন করবেন কি না, সে বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।

ব্র্যাগের কার্যালয় গত নভেম্বরে আদালতে জমা দেওয়া আবেদনে জানিয়েছিল, ব্যবসায়িক নথিপত্রে জালিয়াতির অভিযোগসহ তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৪৩৭টি অভিযোগ এনেছিলেন। তবে রয়টার্স সব অভিযোগ যাচাই করে দেখতে পারেনি। সেখানে ব্যবসায়িক অনেক অভিযোগ রয়েছে, যাতে কারাভোগের মতো সাজা দেওয়ার অভিযোগ তেমন নেই।

তবে ম্যানহাটন ফোজদারি আদালতের কিছু রেকর্ড থেকে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছর বা তারও কম সময়ের মধ্যে এই আদালতে অন্তত চার বিবাদীর কারাদণ্ড হয়েছে, ফলে তাঁদের কারাগারে যেতে হয়েছে। এই চারজনের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে আবার প্রতারণা ও বড় ধরনের জোচ্চুরির অভিযোগ ছিল।

এখনই কোনো অনুমান করা কঠিন। তবে আমি অসম্ভব কিছু দেখছি না। দণ্ড কোনো বিজ্ঞান নয়, এটি এক ধরনের শিল্প

রেবেকা রোইফে, নিউইয়র্ক ল স্কুলের অধ্যাপক

চতুর্থ বিবাদীর বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক ঘুষের অভিযোগ ছিল। সেই ব্যবসায়িক জালিয়াতির অংশ হিসেবে তাঁকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য এই আসামি দুই দিন কারাভোগর পর জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।

ম্যানহাটান ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির কার্যালয়ের সাবেক কৌঁসুলি টানিশা পালভিয়া বলেন, এ ধরনের বিশেষ অভিযোগে কারও খুব বড় ধরনের কারাদণ্ড হয়ে যাবে, এমনটা নয়। তবে ট্রাম্পের মামলার ক্ষেত্রে অনেক বিষয় বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। সুতরাং তাঁর যে কারাদণ্ড হবে না, এমনটা আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি না। হ্যাঁ, বিষয়টি সবার জানা যে ট্রাম্পের কোনো ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড নেই।

দণ্ড একধরনের শিল্প

মার্চেন ট্রাম্পের কারাদণ্ডের সম্ভাবনার কথা আগেই স্বীকার করেছেন। গত ১৬ এপ্রিল জুরি নির্বাচনের সময় এই বিচারক বলেছিলেন, প্রত্যেকেই জানেন, ট্রাম্প এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর সম্ভাব্য কারাদণ্ড হতে পারে।

ট্রাম্প সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট, আবার আগামী নির্বাচনে তিনি রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রার্থী। এই নির্বাচনে তাঁর জয়ের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পকে কারাগারে পাঠানোর মতো রায় এলে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্যান্য দেশও বিরাট সমস্যার মুখে পড়বে।

৬ মে ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলা হয়েছিল, আদালতের জুরি বোর্ড ও সাক্ষীদের নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে আর কোনো মন্তব্য করলে তাঁর জেল হতে পারে।

মার্চেন বলেন, এ ধরনের কথায় আদালতের কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থা সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনো ক্ষতি হয় কি না, সেটা নিয়ে তিনি চিন্তিত।

মার্চেন বলেন, ‘কারাদণ্ড দেওয়া আমার কাছে শেষ আশ্রয়। আমি তাঁদের নিয়ে চিন্তিত এবং এ ধরনের মামলা চালাতে গিয়ে যা হচ্ছে, সেটিও আমাকে ভাবাচ্ছে।’

আদালতের জুরি ও কৌঁসুলিদের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়ে আদালতের আদেশ অমান্য করায় ১০ বার ট্রাম্পকে ১ হাজার ডলার করে জরিমানা করেছেন জুরি বোর্ড। এটা নিশ্চিত, ট্রাম্পকে কারাদণ্ড দেওয়া হলে সেটির প্রভাব হবে অনেক সুদূরপ্রসারী।

আরেকটি বিষয় মার্চেন ভাবতে পারেন—ট্রাম্প দোষ স্বীকার না করে মামলায় আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেকোনো অপরাধীর মামলায় লড়ার অধিকার আছে। তবে কোনো অপরাধী দোষ স্বীকার করলে তখন বিচারক আসামির প্রতি কিছুটা নমনীয় থাকেন।

নিউইয়র্ক ল স্কুলের অধ্যাপক ও ম্যানহাটান ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি কার্যালয়ের সাবেক কৌসুলি রেবেকা রোইফে বলেন, ‘এখনই কোনো অনুমান করা কঠিন। তবে আমি অসম্ভব কিছু দেখছি না। দণ্ড কোনো বিজ্ঞান নয়, এটি একধরনের শিল্প।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d