Bangladesh

সাবেক প্রতিমন্ত্রীর হৃদয় পৃথিবী

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। কিন্তু মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করত তার স্বজনদের একটি চক্র। এই চক্রটির বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া, বদলি বাণিজ্য, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন ও কেন্দ্রীয় তহবিলের অর্থ নয়ছয় করার অভিযোগ এখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে।

এ অভিযোগ থেকে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের গত মেয়াদে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের ভাই মো. সাহাবুদ্দিন, ভাতিজি শামীমা সুলতানা হৃদয়, ভাতিজির জামাই মুহাম্মদ মেহেরাব পাটোয়ারী ও ভাগ্নে ইয়াসিন আরাফাত পৃথিবীর (এএম ইয়াসিন) নেতৃত্বে চক্রটি গড়ে ওঠে। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা ও খুলনায় বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনসহ বিদেশে অর্থ পাচার করার অভিযোগ রয়েছে।

খুলনা থেকে করা একই অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও দেওয়া হয়েছে। মন্নুজান সুফিয়ান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে আত্মীয়স্বজনের অনিয়ম-দুর্নীতি মুখ্য ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন।

জানতে চাইলে শামীমা সুলতানা হৃদয় বলেন, তিনি নিয়োগ, বদলি বাণিজ্যসহ কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো ভুয়া ও মিথ্যা।

তিনি আরও বলেন, তিনি অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থে কোনো বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনেননি। তার বাবা-দাদার সম্পত্তির বাইরে নিজের কোনো সম্পদ নেই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল বিকেলে এএম ইয়াসিন পৃথিবীর মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। তার মোবাইলে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেননি তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, মন্নুজান সুফিয়ানের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর তার আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের মধ্যে ১৪ জনকে চাকরি দিয়েছেন। প্রথমে তার ছোট ভাই সাহাবুদ্দিনকে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর ভাইয়ের মেয়ে শামীমা সুলতানা হৃদয়কে সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপপরিচালক চলতি দায়িত্ব) নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরি দেওয়ার শর্তে হৃদয়কে বিয়ে দেওয়া হয় মেহেরাব পাটোয়ারী নামে এক যুবকের সঙ্গে। পরে তাকে সহকারী পরিচালক পদে চাকরি দেওয়া হয়। প্রতিমন্ত্রীর বোনের ছেলে পৃথিবী। তাকে সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের সবাইকে পোশাকশ্রমিকদের সহায়তায় গঠিত কেন্দ্রীয় তহবিলে নিয়োগ দেওয়া হয়। শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য এই তহবিল গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যেসব পণ্য রপ্তানি হয় প্রতিটি কার্যাদেশের বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থের শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের চালানের মাধ্যমে এই তহবিলে জমা হয়। দুদক ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মেহেরাব পাটোয়ারী ও হৃদয়কে চাকরি দেওয়ার পর প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। তারা মন্ত্রণালয়ে আসার পর থেকে প্রতিমন্ত্রীর প্রভাব ও ক্ষমতা খাটিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নেন। গত ৩-৪ মাস আগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে ৯৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়োগে বড় ধরনের বাণিজ্য হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ আছে, জেলাপর্যায়ে যেসব উপমহাপরিদর্শক আছেন, তাদের বদলি নিয়ন্ত্রণ করতেন ভাতিজি হৃদয়। এ ছাড়া পরিদর্শকদের কাকে কোথায় দেওয়া হবে, সেটিও তিনি ঠিক করতেন। একই অবস্থা শ্রম অধিদপ্তরের সহকারী ও উপপরিচালকদের বদলির ক্ষেত্রেও।

অভিযোগ আছে, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর ও শ্রম অধিদপ্তরের নিয়োগ বদলি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নে পৃথিবী। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ছাড়া অন্য যেসব বাণিজ্যিক কোম্পানি রয়েছে, সেগুলো বছরে যে পরিমাণ লাভ করে শ্রম আইন অনুযায়ী তার ৫ শতাংশ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করার নির্দেশনা আছে। এই ৫ শতাংশকে ১০০ ভাগ করে তার ১০ শতাংশ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিলে জমা করতে হবে। যার ৮০ ভাগ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়, সেখান থেকে একটি অংশ লোপাট করত পৃথিবীর নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট। তারা কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করত বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হৃদয় তার একজন বন্ধুর মাধ্যমে খুলনায় গাড়ির ব্যবসা, বাবার নামে খুলনার রেলগেট এলাকায় ফিলিং স্টেশনের ব্যবসা করছেন। তিনি কয়েক মাস আগে স্বামীর নামে মিরপুরে ফ্ল্যাট কিনেছেন। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর স্বামীকে খুলনার যে এলাকায় দাফন করা হয়েছে, সেখানে কবরস্থানের কাছে পৃথিবী পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করছেন। এর বাইরে তাদের আরও কী কী সম্পদ রয়েছে তার খোঁজ করছে দুদক।

জানা গেছে, দুদকে হৃদয় ও এমএ ইয়াসিনের বাবার নামে অর্জিত সম্পদের তথ্য তুলে ধরে গত ২৭ নভেম্বর খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার দপ্তর থেকে দুদকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, শামীমা সুলতানা হৃদয়ের বাবা মো. সাহাবুদ্দিনের নামে যশোর রোডের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৬৫০/২ নম্বর হোল্ডিংয়ে একটি দোতলা ভবন পাওয়া গেছে। একই ওয়ার্ডের কেদার নাথ মেইন রোডের ২০/৮ নম্বর হোল্ডিংয়ে পৃথিবীর বাবা আকতার হোসেনের নামে চারতলা ভবন পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মন্নুজান সুফিয়ানের ভাতিজি শামীমা সুলতানা হৃদয় ও ভাগ্নে ইয়াসিন আরাফাত পৃথিবীর বিরুদ্ধে জমা পড়া অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধান করে। এর দায়িত্বে ছিলেন সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ইকবাল হোসেন। তিনি অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু তথ্য পেয়েছে দুদক। এরপরই পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান শুরু করে সংস্থাটি। অনুসন্ধান টিম গত বছরের ১৭ অক্টোবর হৃদয় ও পৃথিবীর অভিযোগ-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা, এনবিআর, রাজউক, ভূমি অফিস, সিটি করপোরেশন ও রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে নোটিস পাঠায়।

অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত নোটিসে বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় ব্যবহার করে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। তার বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ থাকলে তা দুদকে জমা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হলো।

দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, হৃদয় ও পৃথিবীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। তাদের অনেকে বিষয়টি শুনেছেন বলে দুদককে জানিয়েছেন। অভিযোগ-সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ অব্যাহত আছে।

Show More

5 Comments

  1. Thanks for one’s marvelous posting! I genuinely enjoyed reading
    it, you can be a great author. I will ensure that I bookmark your blog and will often come back in the future.

    I want to encourage yourself to continue your great job, have a nice holiday weekend!

    My web-site what is vpn

  2. Hi! I know this is kinda off topic but I was wondering which blog
    platform are you using for this site? I’m getting tired of WordPress
    because I’ve had issues with hackers and I’m looking
    at alternatives for another platform. I would be fantastic if you could
    point me in the direction of a good platform.

    Also visit my web page: vpn coupon ucecf

  3. With havin so much written content do you ever
    run into any issues of plagorism or copyright infringement?
    My website has a lot of unique content I’ve either authored myself or outsourced but
    it seems a lot of it is popping it up all over the internet without my agreement.
    Do you know any ways to help protect against content from being
    stolen? I’d truly appreciate it.

    Here is my web site :: eharmony special coupon code 2024

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button