Hot

সারা দেশে এখন লোডশেডিং বাড়ছে, গ্রামাঞ্চলে চরম ভোগান্তি

সারা দেশে এখন লোডশেডিং বাড়ছে। গরম বাড়লেই তীব্রতা বাড়ে লোডশেডিংয়ের। গরমে প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি উঠছে বিদ্যুতের চাহিদা। যদিও এ চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে হচ্ছে না বিদ্যুৎ উৎপাদন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ভোগান্তির মাত্রা এখন চরমে। এর বিপরীতে রাজধানী ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে লোডশেডিং তুলনামূলক কম বলে গ্রাহক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে 
জানা গেছে। 

গ্যাস সংকটে একদিকে গ্যাসভিত্তিক বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বড় কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। এতে বিদ্যুতের বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে দেশব্যাপী হঠাৎ করে কয়েকদিন ধরে লোডশেডিং বেড়েছে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে।

অন্যদিকে আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। কেন্দ্রটির দুইটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব এলাকায় দিনে ও রাতে অন্তত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলেও গভীর রাতে লোডশেডিং ভয়াবহ। বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে গ্রামাঞ্চলে জনভোগান্তি আরও তীব্র হয়ে ওঠার বড় আশঙ্কা রয়েছে।

নোয়াখালী জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা। দিনে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না অনেক এলাকায়। কোথাও আবার সারাদিন বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার মধ্যেই থাকে। এর মধ্যেই তীব্র লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে মঙ্গলবার রাতে নোয়াখালীর সেনবাগ পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে হামলা চালান স্থানীয়রা। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলায় মোট চাহিদার অর্ধেকের কম সরবরাহ থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রীষ্মের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে না পারায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় বিতরণ কোম্পানিগুলোকে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। দেশের সিংহভাগ বিদ্যুতের গ্রাহক বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) আওতাধীন এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় সেখানেই গ্রাহক ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি।
বিদ্যুৎ বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুতের উৎপাদন কম হওয়ার কারণে সরবরাহ কম। তাই লোডশেডিং করতে হচ্ছে তাদের। তারা বলেন, উপর থেকে তাদেরকে জানানো হয়েছে জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদনে ঘাটতি। তাই রেশনিং বা লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে। 

হবিগঞ্জ জেলার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, গরমে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে সদর উপজেলায়। চাহিদা ১৮ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ১০ মেগাওয়াট। ওই জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানায়,  গরমে দুই-তিন দিন ধরে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গরমে সর্বোচ্চ ১৭০ মেগাওয়াটের চাহিদা উঠেছিল এবার। ঘন ঘন লোডশেডিং। গ্রাহকদের এমন  অভিযোগের বিষয়ে জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এক কর্মকর্তা বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অনেক সময় ফিডার লাইন বন্ধ করতে হয়। তখন গ্রাহকরা এ ধরনের অভিযোগ সামনে আনেন। কর্মকর্তারা এমন দাবি করলেও এখানে বাস্তবতা ভিন্ন। জেলার বানিয়াচং উপজেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানিয়েছেন, দিনে-রাতে অর্ধেকের বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকে না। অল্প বৃষ্টি বা বাতাস হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকে না। কেন এই লোডশেডিং তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেন না সংশ্লিষ্টরা। 

ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলার গ্রাহকরা বলেন, দিন-রাত মিলিয়ে পাঁচ-সাতবার লোডশেডিং হচ্ছে। একবার বিদ্যুৎ বন্ধ হলে কখনো দেড়-দুই ঘণ্টার আগে আসছে না। লোডশেডিং তীব্র হচ্ছে রাতের বেলায়। 
এদিকে, ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় নির্মিত আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। হঠাৎ এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রটির দু’টি ইউনিট থেকে গড়ে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেতো। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট আগে থেকেই বন্ধ। এর মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটে ত্রুটি দেখা দেয়ায় শুক্রবার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। দু’টি ইউনিটের প্রতিটির উৎপাদন সক্ষমতা ৮০০ মেগাওয়াট করে। হঠাৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। 

বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ প্রসঙ্গে পিডিবি’র সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুইটি ইউনিটই বন্ধ। আজ (১লা জুলাই) প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা। আর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে হঠাৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে আগামী ৫ই জুলাই আসবে বলেও উল্লেখ করেন। ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রয়েছে। তা ঠিক হলে লোডশেডিংয়ের সামস্যা কেটে যাবে বলে তিনি আশা করেন।

সূত্র জানায়, বর্তমানে কয়লাভিত্তিক বড় ৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি করে ইউনিট বা আংশিক বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রার একটি ইউনিটও পুরোপুরি বন্ধ। কেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট। তবে এর একটি ইউনিট বন্ধ থাকায় অন্য ইউনিট থেকে গড়ে ৬০০ থেকে ৬২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। দ্বিতীয় বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপালের একটি ইউনিটেরও রক্ষণাবেক্ষণে কাজ চলছে। ফলে এক হাজার ২৩৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটি থেকে গড়ে ৮০০ থেকে ৮১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। দেশের তৃতীয় বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এসএস পাওয়ার। চট্টগ্রামের এ কেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। তবে এ কেন্দ্রটিরও একটি ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রয়েছে। এতে গড়ে ৬০০ থেকে ৬১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। অন্যদিকে দেশের গ্যাসভিত্তিক দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউনিট মেঘনাঘাটে। গ্যাস সংকটে ৫৮৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটি বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ।

যদিও গ্যাস সংকটে শুধু এই একটি নয় বরং ২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় ২৩২ কোটি ঘনফুট। এ খাতে গ্যাস সরবরাহ করা হয় ১০০ কোটি ঘনফুট উঠানামা করছে। মূলত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস তথা এলএনজি বিদ্যুৎ খাতে বড় অংশ সরবরাহ করা হয়। তবে বেসরকারি একটি কোম্পানির ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোয় গ্যাস সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। 
সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ৩০শে জুন সন্ধ্যা ৭টায় ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রাক্কলন করা হয়। এতে লোডশেডিং ধরা হয়েছে ১ হাজার ১০৮ মেগাওয়াট। ২৯শে জুন রাত ১২টায় বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ১ হাজার ২৫৮ মেগাওয়াট।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাসের সংকট থাকায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া আরইবি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হ্রাস ও লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে দুর্বল বিতরণ ব্যবস্থা। এ দুর্বল বিতরণ ব্যবস্থার কারণেই বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। আরইবি’র কর্মকর্তারা বলেন, বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। আরইবি চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম পাচ্ছে। তবে গ্রাহক বেশি থাকায় বিদ্যুৎ বিতরণে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের আরেকটি বড় কারণ বিতরণ ব্যবস্থার দুর্বলতা।

পাওয়ার সেলের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্যসহ)। বর্তমানে গড় চাহিদা সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৭১ লাখ। গ্যাসের অভাবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অর্ধেক সক্ষমতা বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য ও ডলার সংকটের কারণে সেখান থেকেও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সময়মতো বিল পরিশোধ না করায় কমেছে আমদানিকৃত বিদ্যুতের পরিমাণও।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d