Bangladesh

সারা দেশে ফিটনেসহীন গাড়ি ৫ লাখ ৭১ হাজার: সড়কের বড় ‘সংকট’ ফিটনেসহীন গাড়ি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজট, বায়ুদূষণ ও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ফিটনেসহীন গাড়ি

দেশের সড়ক-মহাসড়কে নির্বিঘ্নে চলছে ফিটনেসহীন গাড়ি। এসব গাড়ির দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত সড়কে ঝরছে প্রাণ। সড়কে বিকল হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। বছরের পর বছর এসব ফিটনেসহীন গাড়ি সড়কে চললেও এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফিটনেসহীন গাড়ির পাশাপাশি অনেক চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। অনেকে আবার হালকা যানবাহনের লাইসেন্সে চালাচ্ছেন ভারী যানবাহন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিটনেসহীন গাড়ি সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট ও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণে পরিণত হয়েছে। এসব গাড়ি সড়কে চলা একটি রাজনৈতিক সমস্যা। রাজনৈতিক নেতা, পরিবহণের মালিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের একটি বড় সিন্ডিকেট এসব গাড়ি চলাচলে কাজ করে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এর সমাধান হবে না। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যারা আছেন, তাদের সর্বোচ্চ সদিচ্ছায় পারে এ ধরনের যানবাহন সড়ক থেকে তুলে দিতে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৭ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে মোটরযান রয়েছে ৫৭ লাখ ৭২ হাজার ৮৪৬টি। এর মধ্যে ফিটনেসহীন ৫ লাখ ৭১ হাজার ৪৮৪টি। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে আটোরিকশার সংখ্যা ১ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৯টি। এছাড়া পিকআপ ৬৮ হাজার ৭৪৭টি, প্রাইভেটকার ৫৬ হাজার ৭১২টি, ট্রাক্টর ৩৫ হাজার ৬৬টি, মাইক্রোবাস ২৫ হাজার ৬৩৭টি, বাস ২০ হাজার ৮৯৯টি। আর চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরযানের সংখ্যা ৫৭ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫৩টি। এসব মোটরযানের প্রায় ২০ লাখের চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান বলেন, ফিটনেসহীন গাড়ি আমরা ডাম্পিং করি। ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন করলে আমরা গাড়ি দিই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে আমরা মামলা করি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফিটনেসহীন গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কেননা এসব গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ খুবই দুর্বল থাকে। ফলে এসব গাড়ির চেসিসে এবং ব্রেকিং সিস্টেমে দুর্বলতা থাকে। এগুলো সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশেই দায়ী।

বিআরটিএ সূত্র বলছে, শুধু ঢাকায় সড়ক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হলে ১০০ ম্যাজিস্ট্রেটের প্রয়োজন। অথচ তাদের অধীনে আছেন মাত্র পাঁচ-ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট। ফলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, সারা দেশে ৫ লাখেরও বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসহীন গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ রাস্তায় চলে। এসব গাড়ির কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। প্রতিদিন দেশে ১২ থেকে ১৫ জন সড়কে মারা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সড়ক তদারকিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা যথেষ্ট নয়। একই সঙ্গে ছয় বিভাগীয় শহরে ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হবে। ওভারস্পিড, দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন অপরাধে ড্রাইভারদের মার্কিংয়ে ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ করা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ফিটনেসহীন গাড়ির যে সংখ্যাটা বলা হয়েছে সেটির প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে আমি মনে করি। যেসব যানবাহনের কাগজে-কলমে ফিটনেস সনদ আছে তার মধ্যে অনেক যানবাহনের প্রকৃত ফিটনেস নেই, সেগুলো সড়কে দেখলেই বোঝা যায়। এসব যানবাহন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যানজটেরও একটি বড় কারণ। বায়ুদূষণেও একটি বড় নেতিবাচক ভূমিকা রাখে এসব যানবাহন।

তিনি আরও বলেন, ফিটনেস সনদ দেওয়ার প্রক্রিয়াটা বৈজ্ঞানিক মনে হয় না। সনদ দেওয়ার সময় ৪০টি আইটেম পরীক্ষা করে দেখতে হয়, এখানে খুব বেশি হলে পাঁচ থেকে ছয়টি আইটেম আছে চোখে দেখে দেওয়ার মতন। বাকিগুলো অবশ্যই যান্ত্রিক বা মেকানিক্যালভাবেই করতে হবে। ফলে এসব গাড়ি অনেক সময় বিকল হয়ে সড়কে যানজটের সৃষ্টি করে। ব্রেক ফেইল করে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। অন্য যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৫৪২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৭৪৪ জন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ শেষ করে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাত্রা করছি। কিন্তু ফিটনেসহীন গাড়ি শনাক্ত করা যাচ্ছে না। যে গাড়িটা রাস্তায় দুর্ঘটনায় পতিত হয় তদন্ত কমিটি ওই গাড়িতে ফিটনেস পায় না। তাহলে কি শুধু দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পরই কেবল ফিটনেসহীন গাড়ি শনাক্ত করা যায়।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, মোটরযানের ফিটনেস নবায়নে বিআরটিএ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছে। যার মধ্যে রয়েছে ফিটনেস নবায়নের সময় মোটরযান সরেজমিন পরিদর্শনের সচিত্র ছবি ধারণ করে আর্কাইভিং করে রাখা হচ্ছে। ফিটনেস নবায়নের জন্য মোটরযান মালিকের মোবাইলে ফিটনেসের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই প্রযোজ্য নবায়ন ফি উল্লেখ করে এসএমএস পাঠানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d