Hot

সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো এখনও রিজার্ভ থেকে নেওয়া ২৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ ফেরত দেয়নি

সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপের চার প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আওতায় কয়েক বছর আগে ঋণ নিলেও এর ২৫.৪৩ মিলিয়ন ডলার এখনও ফেরত দেয়নি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্প্রিংফুল অ্যাপারেলসের কাছে ১২.২৫ মিলিয়ন ডলার, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টসের কাছে ৮.৫৩ মিলিয়ন ডলার, অটাম লুপ অ্যাপারেলসের কাছে ৪.৩৬ মিলিয়ন ডলার ও প্লাটিনাম গার্মেন্টসের কাছে ০.২৮ মিলিয়ন ডলার ইডিএফ ঋণের বকেয়া টাকা পাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

বেক্সিমকো গ্রুপের কাছে থেকে এসব ডলারের ঋণ ফেরত না আনতে পারার কারণে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ঋণ ইস্যুকারী হিসেবে জনতা ব্যাংকের অনুকূলে ইডিএফ ঋণ সুবিধা দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।

সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

তার বড় ভাই আহমেদ সোহেল ফসিহুর রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রাতে রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে সালমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে তিনি গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, রিজার্ভ থেকে নেওয়া ইডিএফ ঋণ রপ্তানি বাড়াতে সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা। তবে এ ঋণ থেকে করা রপ্তানি আয় ২-৩ বছর আটকে থাকার কোনো কারণ নেই। 

‘প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সন্তোষজনক কোনো জবাব না পেলে ধরে নিতে হবে, টাকাটা পাচার হয়ে গেছে। এর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং জনতা ব্যাংক, উভয়কেই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে,’ বলেন তিনি।

পণ্য রপ্তানির জন্য কাঁচামাল আমদানিতে রপ্তানিকারকদের কম সুদে ডলারে ঋণ দিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১৯৮৯ সালে গঠিত হয় ইডিএফ। ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ইডিএফের আকার ছিল ৩.৫০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু করোনা মহামারির প্রকোপ শুরুর পর ইডিএফের আকার দফায় দফায় বাড়িয়ে ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়।

তবে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পক্ষ থেকে ইডিএফ ফান্ড বাদ দিয়ে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা দেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইডিএফের বকেয়া কমাতে শুরু করে। সর্বশেষ ১৫ জুলাই দিনশেষে ইডিএফের বকেয়া ছিল ২.৪ বিলিয়ন ডলার।

রিজার্ভ থেকে নেওয়া ঋণের ডলার ফেরত আনতে কেন ব্যর্থ হলো, এ বিষয়ে জানতে জনতা ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস সালামের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে টিবিএস। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। 

মন্তব্যের জন্য বেক্সিমকো গ্রুপের কারও সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের  শর্তে বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রপ্তানিপণ্য তৈরির জন্য কাঁচামাল আমদানি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ইডিএফ ঋণ নেয়। শর্ত ছিল, রপ্তানি আয় আসার পর এসব ঋণের ডলার ফেরত দিতে হবে। 

‘কিন্তু কাঁচামাল আমদানি করলেও জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি আয়ের এসব ডলার নিয়ে আসেনি বেক্সিমকো গ্রুপ। ফলে জনতা ব্যাংকও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ঋণের ডলার ফেরত দিতে পারেনি। এছাড়া ইডিএফ থেকে দেওয়া আর কোনো লোন বর্তমানে খেলাপি নেই,’ বলেন তিনি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০.৪১ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ২৩.৩০ বিলিয়ন ডলার ছিল।

রপ্তানি আয়ের ডলার কেন দেশে আসে না?

বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু বেক্সিমকো গ্রুপই নয়, রিজার্ভ থেকে দেওয়া ইডিএফের অধীনে ঋণ নিয়ে রপ্তানি করলেও এর ডলার দেশে আসেনি, এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত দেশের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী। 

একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপন পরিচালক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি ব্যাংকের নামে ইডিএফ ঋণ ইস্যু করে। ফলে এসব ঋণ নিয়ে করা রপ্তানির ডলার দেশে আসুক বা না আসুক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট সময় পর ইস্যুকারী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ঋণের ডলার কেটে রিজার্ভে যুক্ত করে। 

তবে সম্ভবত গ্রাহক প্রভাবশালী হওয়ার কারণেই ব্যতিক্রম হিসেবে জনতা ব্যাংক ও বেক্সিমকো গ্রুপের ক্ষেত্রে এমন করা হয়নি বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ডেপুটি গভর্নর পর্যায় থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হলে আমাদের কিছু করার থাকে না।’ 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, বর্তমানে ইডিএফের অধীনে ডলার ঋণ নিলে গ্রাহককে ৪.৫ শতাংশ দিতে হয়। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button