Bangladesh

সিইসি’র বিলম্বিত উপলব্ধি

বাইশ মাস আগে দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছিলেন, সব দলকে নির্বাচনে আনাই তার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। পরে নানা সময়ে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে নিজেদের আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এসব আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির ঠিক উল্টো অবস্থান নিয়ে বিরোধী দলগুলোর আপত্তি অগ্রাহ্য করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর নানা কারণে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশন। এই আলোচনার মধ্যে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। অনেকের আপত্তির মধ্যে ঘোষিত তফসিল এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হলে সামনেও আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে এমন ইঙ্গিত দিয়ে সোমবার বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনে দায়িত্বপালন করবেন এমন বিচারিক হাকিমদের উদ্দেশ্যে সিইসি এমন বক্তব্য দিলেও অনেকে মনে করছেন তার এই বক্তব্য সরকারি দল ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য নতুন এক বার্তা। যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করেই তিনি বলতে চেয়েছেন, আসন্ন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে দেশের অর্থনীতি, পোশাক শিল্প ও ভবিষ্যতের ওপর এর একটা বড় প্রভাব পড়বে। সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে ইসি’র ওপর  যে চাপ আসছে এই বিষয়টিও অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন সিইসি। নির্বাচন নিয়ে দেশ সংকটে আছে, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে আছে- এমনটাও বলেছেন তিনি।

কাজী হাবিবুল আউয়াল সর্বশেষ যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে বিলম্বিত উপলব্ধি বলে মনে করছেন অনেকে। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সিইসি’র বক্তব্যের বিষয়ে বলেন, উনার সর্বশেষ বক্তব্যটিও পক্ষপাতদুষ্ট। কারণ তিনি শুধু একটি দেশের কথা বলেছেন। অন্য যেসব দেশ দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে আসছে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। তিনি বলেন, বর্তমান ইসি ক্ষমতাসীন দলকে আবারো ক্ষমতায় আসার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। এ কারণে বাইরের দেশগুলো কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। এর দায়ও নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। 

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ওরা খুব বেশি দাবি করে নাই। একটাই দাবি-বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এখানে কোনোরকম কারচুপির আশ্রয় নেয়া যাবে না। এই নির্বাচনের ফেয়ারনেসকে উপলক্ষ করে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিভক্ত হয়ে গেছে। এটি কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তিনি বলেন, ইলেকশন জিনিসটা কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য, চোখে দেখা যায় না, যাবেও না। তারপরেও বলা হয় নির্বাচন ক্রেডিবল, ফ্রি হয়েছে কিনা, ফেয়ার হয়েছে কিনা। এই পাবলিক পারসেপশনের কোনো মানদণ্ড নেই। তবুও জনগণকে বলতে হবে নির্বাচন ফ্রি এবং ফেয়ার হয়েছে। সার্বিকভাবে যদি জনগণ বলে থাকে যে, এবারের নির্বাচনটা ফ্রি ফেয়ার এবং ক্রেডিবল হয়েছে, তাহলে এটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, অতি সমপ্রতি আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং লক্ষ্মীপুরে। ওখানেও সিল মারা হয়েছে। আমরা সেটা প্রতিহত করতে পারি নাই। আমাদের প্রশাসন পারেনি। আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তারা পারেনি। এটা লজ্জাকর। 
সিইসি তার বক্তব্যে দেশের গত ৫০ বছরের নির্বাচনী সংস্কৃতির হালচাল তুলে ধরার পাশাপাশি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচন নিয়ে দেশ সংকটে আছে, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে আছে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সবাইকে সমভাবে দায়িত্বশীল হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। গণতন্ত্রে আমরা স্থিরভাবে এগোতে পারেনি। সংবিধান সমুন্নত রাখার জন্য সবাইকে সমভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার নিয়ে তিনি বলেন, ভোট শুরুর ২১ দিনের আগে প্রার্থীরা প্রচারণা করতে পারবেন না। হয়তো সভা করতে পারবেন। এর আগে কোনো ধরনের প্রচারণা করতে পারবেন না।

এবারের সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রথমবারের মতো ৩০০টি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, এতে প্রমাণ হয়েছে সত্যিকার অর্থে আমরা ভিজিল্যান্সটা চাচ্ছি। বিচারকরা যেভাবে সাহসী হয়ে ভিজিল্যান্স করতে পারবেন, অনেকে সেটা করতে পারবেন না। দেশের গণতন্ত্র রক্ষার্থে বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, সাহসিকতা দিয়ে যতদূর পারেন সাহায্য করবেন। 

তিনি বলেন, লাইন যেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেমে না থাকে। যদি থেমে থাকে তাহলে মনে করা হবে ভেতরে এই (সিলমারা) কাজটি হচ্ছে। লাইনটা চলমান থাকতে হবে। তারপর ওরা (ভোটাররা) ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বেরিয়ে আসতে পারছে কিনা। 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এর আগেও বিভিন্ন বক্তব্যে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে নিজেদের অতৃপ্তির বিষয়টি প্রকাশ করেছেন। সর্বশেষ ১৫ই নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যেও নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে সংলাপে বসতে দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। রোববার নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসলে তফসিল সূচি পরিবর্তনের সুযোগ আছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor