সিন্ডিকেটের কবলে উত্তরের চা শিল্প: বাজার নিয়ন্ত্রণে হাতে গোনা কয়েক ব্যবসায়ী
দেশের মোট উৎপাদিত চায়ের ১৯ শতাংশ উৎপাদন হয় উত্তরের ৬ জেলা পঞ্চগড়, দিনাজপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও লালমনিরহাটে। সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদন হয় পঞ্চগড়ে। উত্তরের অপার সম্ভাবনাময় চা শিল্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছে। এ সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে মুখথুবড়ে পড়বে এ শিল্প। চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষের জীবনে নেমে আসবে অনিশ্চয়তা। আশার আলো দেখাচ্ছে সম্প্রতি পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধ। এ নিলাম কেন্দ্রের সফলতা ধরে রাখতে সিন্ডিকেট ভাঙার বিকল্প নেই বলে মনে করছে সচেতন মহল। জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের চা সম্প্রসারণের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ২০০১ সালে পঞ্চগড়ে বিটিআরআই উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। উপকেন্দ্র থেকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ক্ষুদ্র চা চাষিদের চা আবাদের সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র চা চাষের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যে চা বোর্ড লালমনিরহাটে চা সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সম্ভাবনাময় এ চা শিল্পকে ঘিরে অশনিসংকেত দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও এখানকার চা পাতা ৩৫-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হতো। বর্তমানে প্রতি কেজি চা পাতা বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ টাকায়। হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী ও চা বাগানের মালিক চায়ের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে চায়ের দরপতন ঠেকানো যাচ্ছে না। চা পাতার দাম নিম্নমুখী হওয়ার কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট নিজেদের ইচ্ছেমতো চায়ের দাম নির্ধারণ করছে। ২ সেপ্টেম্বর তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ও পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজহারুল হক প্রধানসহ স্থানীয় বক্তারা অভিযোগ করেন- সিন্ডিকেটের কারণে পঞ্চগড়ের ক্ষুদ্র চা চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
স্মল টি গার্ডেন অ্যান্ড টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলে নিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে ৯টি। অনিবন্ধিত বাগান রয়েছে ২১টি। ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান রয়েছে ৮ হাজার ৩৫৫টি। এর মধ্যে নিবন্ধিত ২ হাজার ৫৫টি। ক্ষুদ্র চাষি সমিতি রয়েছে ছয়টি। এসব চা বাগানে ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ২০২২ সালে ১৭৭ দশমিক ৮১ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে; যা টাকার পরিমাণে ২৬০ কোটি টাকা। ১২ হাজারের বেশি একর জমিতে চায়ের চাষ হচ্ছে এ অঞ্চলে। উত্তরাঞ্চলে চায়ের আবাদ শুরু হয়েছে ১৯৯৯ সালের অক্টোবর থেকে। মাত্র দুই যুগে এ অঞ্চলের চা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। দেশের গি পেরিয়ে বিদেশে অবস্থান করে নিয়েছে। এখানকার উৎপাদিত চা রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, দুবাই ও জাপানে। স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যান্ড টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ পঞ্চগড়ের সভাপতি আমিরুল হক খোকন বলেন, একটি মহল সিন্ডিকেট করে চায়ের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। এ সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে সম্ভাবনাময় এ শিল্প হোঁচট খেতে পারে।