সিলেটের পর্যটনশিল্প: পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হাতছাড়া বিপুল সম্ভাবনা
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য ভূমি সিলেট। এখানে সৌন্দর্যের ডানা মেলে আছে প্রকৃতি। শীত-বর্ষা-হেমন্ত সব মৌসুমেই পর্যটকদের আনাগোনা সিলেটে। প্রতিদিন ৮-১০ হাজার লোকসমাগম ঘটে নগরীসহ প্রত্যন্ত হাওর, পাহাড়, টিলা, চা-বাগান ঘিরে তৈরি হোটেল-মোটেলে। কিন্তু যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এখানে পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য সেভাবে গড়ে উঠছে না। সঠিক উদ্যোগ নিলে বছরে এখানে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
একদিকে গত তিন দিনের সরকারি ছুটি উপভোগ করতে সিলেটে নানা বয়সের ৫০ হাজারের বেশি পর্যটক সমাগম ঘটেছিল সিলেটে। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না নগরীর হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউজগুলোতে। হোটেলে সিট না পাওয়ায় অনেকেই আসতে পারেননি। আর যারা আগে থেকে হোটেল বুকিং না করে এসেছিলেন তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। নিরুপায় হয়ে অনেকেই হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার প্রাঙ্গণে রাত কাটান গত শুক্রবার।
কক্সবাজারের পরেই সিলেট: ‘কক্সবাজারের পরেই সিলেটে পর্যটক সমাগম বেশি ঘটে,’ এমন মন্তব্য করে সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ ওনার্স গ্রুপের সভাপতি এ টি এম সোয়েব আহমদ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, পাহাড়, টিলা, ঝরনা, চা-বাগান, হাওর-নদী, ঘন বন প্রকৃতির অপার দান সিলেট। মেঘালয় পাহাড় ও চেরাপুঞ্জির পাদদেশের এই জনপদে সঠিক উদ্যোগ নিলে পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে জমজমাট হয়ে উঠবে। ব্যাপক কর্মসংস্থান ঘটবে।’ অন্যদিকে ‘সীমান্তের অপারে ভারতের ‘সেভেন সিস্টার’-এ বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা। তাছাড়া তামাবিল, ভোলাগঞ্জ, সুতারকান্দি, জকিগঞ্জ, বড়ছড়া, বাগলি, চারাগাও, চেলা, ইছামতি, জুড়ি, চাতলপুর, বাল্লা ১৩টি স্থল শুল্ক স্টেশন রয়েছে। কয়েকটির সঙ্গে ইমিগ্রেশন সেন্টারও রয়েছে। সিলেটে আন্তর্জাতিক ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ভারতের শিলং তামাবিল হয়ে দুই-আড়াই ঘণ্টার পথ। অনেকেই মনে করেন, সিলেটের পর্যটনকে সমৃদ্ধ করলে নানা ব্যবসার দুয়ার খুলবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, ‘প্রাকৃতিক রূপলাবণ্যে পরিপূর্ণ সিলেটকে পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে একটি পর্যটনবান্ধব জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবে জেলা প্রশাসন। পর্যটন এলাকার বর্ধিতকরণ, প্রাকৃতিকরূপ সংরক্ষণ, আইনশৃঙ্খলা নিরাপত্তাসহ পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন, অগ্রগতি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করবে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল কত দূর: পর্যটকমুখর সিলেটকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) কয়েক বছর আগে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার আগ্রহ দেখায়। জাফলং এলাকায় পরিকল্পিত পর্যটনশিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে বেজার চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চার সদস্যদের প্রতিনিধিদল এলাকা পরিদর্শন করে। সূত্র মতে, পুরো এলাকার অবকাঠামোকে পরিকল্পনার আওতায় ঢেলে সাজানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়। কিন্তু সেই উদ্যোগে এখন ভাটা পড়েছে। স্থানীয়রা বলেছেন, পুরো এলাকাকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় নিয়ে এলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের দৃষ্টি ভিড় লেগে যাবে। সীমানার ওপারের মেঘালয়ের ডাউকী শহরে সুন্দর বাড়িঘর, পাহাড় দেখার জন্য উঁচু টাওয়ার, আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন মোটেল তৈরির সুযোগ রয়েছে।
সিলেটের পর্যটন খাত উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি রাস্তার আওতায় অন্তত ২৪টি পর্যটন স্পটকে সংযুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। তবে এই উদ্যোগ কবে বাস্তবায়িত হবে তা বলা যাচ্ছে না। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কাজ করছেন। এতে পর্যটকদের সময়, ভোগান্তি ও ব্যয় কমে আসবে। স্থানীয় আর্থসামাজিক অবস্থায়ও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এজন্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও প্রশস্ত করতে হবে।
সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর সড়কটি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
হাওরকেন্দ্রিক পর্যটন বেড়েছে: সিলেটে নয়নকাড়া স্পটগুলো একেক মৌসুমে একেক রকমের সৌন্দর্যের পাখা মেলে। ইদানীং সুনামগঞ্জে হাওরকেন্দ্রিক পর্যটনকে কেন্দ্র করে ভিড় জমে উঠছে। হাউজ বোটগুলোতে ওয়াশ রুমসহ আধুনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়ায় পর্যটকরা রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।