সিলেটে বৃষ্টিতে বন্যার অবনতি, পানিবন্দি ওসমানী হাসপাতাল
সিলেটে বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর পানি নেমে যেতে শুরু করায় সড়কের ক্ষত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এবার কয়েক দিনের বন্যায় সিলেটের ৩৯.২ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় সাড়ে ৮৪ কোটি টাকা। সিলেট সড়ক বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সিলেট-গোয়াইনঘাট, সিলেট-কানাইঘাট সড়কসহ মোট ২২.৯৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ছাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ১১.১ কিলোমিটার এবং জাতীয় মহাসড়কের ৫.১৫ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিলেট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, ‘বন্যার পানি উপজেলাগুলো থেকে সরে এখন শহরের দিকে মুভ করছে। আমরা তাই সেদিকে এখন নজর রাখছি। রবিবার রাতের টানা বর্ষণে নগরের মেজরটিলা এলাকায় আড়াই শ মিটারের মতো সড়ক ডুবে গেছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সুরমা ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি কমছে। আগামী বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও সংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে আজ মঙ্গলবারও সুরমা নদীর পানি কোনো কোনো পয়েন্টে স্বল্প সময়ের জন্য বাড়তে পারে।
নদীর পানি কোথাও কমেছে, কোথাও বেড়েছে : পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্য মতে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টার রেকর্ড অনুযায়ী সুরমা নদী সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং কানাইঘাটে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলসিদে বিপত্সীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ফেঞ্চুগঞ্জে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এর আগে গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৬টার রেকর্ড অনুযায়ী সুরমা নদী কানাইঘাটে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার এবং সিলেটে বিপত্সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারা নদী একই সময়ে জকিগঞ্জের অমলসিদে বিপৎসীমার ৮৭ এবং ফেঞ্চুগঞ্জে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
টানা বর্ষণে বিভিন্ন এলাকা ডুবেছে : রবিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাতে নতুন নতুন এলাকা পানিবন্দি হয়। সিসিকের ৪২ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি ওয়ার্ডের ২৫ হাজার মানুষ জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
এ সময় সুরমা নদীর পানি বেড়ে নগরে ঢুকে পড়ে। তবে দুপুর ২টার পর থেকে বৃষ্টিপাত কমলে সুরমার পানিও কমতে থাকে।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরের ২৮ ওয়ার্ডের ২৫ হাজার মানুষ কমবেশি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে ৬৫০ জন মানুষ।
উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি : সিলেটে বেশি মাত্রায় বন্যাকবলিত পাঁচ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকায় গতকাল আরো ২৭৮ জন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে গেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।
পানিবন্দি সিলেট ওসমানী হাসপাতাল : রবিবার রাত থেকে টানা ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সোমবার ভোর ৫টার দিকে জলমগ্ন হয়ে পড়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালের ভেতরে পানি প্রবেশ করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী, স্বজন ও চিকিৎসকরা। তবে বিকেল ৩টার পর পানি নেমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘ভোরের দিকে হাসপাতালের ভেতর পানি প্রবেশ করে। বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের এক ধরনের প্রস্তুতি ছিল। বালুর বস্তা প্রস্তুত করা ছিল। সেগুলো দিয়ে অনেকটা রক্ষা করা গেছে। কিন্তু চারটা ওয়ার্ড রক্ষা করা যায়নি, পানি ঢুকে পড়ে।’
সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বাড়ছে : সুনামগঞ্জে সুরমাসহ অন্যান্য নদীতে পানি বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে সুরমার পানি ২১ সেন্টিমিটার বেড়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, ভারতের মেঘালয়ে গত রবিবার রাত ৯টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই সুরমার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারি ও মাঝারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে। সীমান্ত নদী যাদুকাটার পানিও গতকাল ৭.২৮ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল। যাদুকাটা নদীর বিপৎসীমা ৮.০৫ সেন্টিমিটার বলে তিনি জানান।