Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

সীমান্তে হত্যা থামছে না বিএসএফের গুলিতে ৯৫ শতাংশ নিহত

১০ বছরে সীমান্তে নিহত ৩১৩ বাংলাদেশি আহত ৩৩০ * হত্যা শূন্যে নামাতে ভারতকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দিতে হবে -বিশেষজ্ঞ অভিমত

সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে হত্যাকাণ্ড থামছেই না। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যার চিত্র যেন এক অমীমাংসিত প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একের পর এক বৈঠক, আলোচনা, প্রতিশ্রুতি কিছুতেই কাজে আসছে না। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে না বলে এলেও তাদের কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই। বরং সীমান্তে ৯৫ শতাংশ মৃত্যুই হচ্ছে বিএসএফ-এর গুলিতে। সীমান্ত হত্যার এমন চিত্র শুধু দুই দেশের সম্পর্ককেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও নৈতিকতার ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত শুধু সম্মতই হয়, সহিংসতা থামেনি। বিএসএফ বন্ধ করেনি মারণাস্ত্রের ব্যবহার। তারা বলছেন, সীমান্তে চোরাচালান রোধ যেমন জরুরি, তেমনই মানবাধিকারও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিচারবহির্ভূত হত্যা কোনো সভ্যদেশের কাম্য হতে পারে না। সীমান্তে হত্যা শূন্যে আনতে হলে ভারতকে আন্তর্জাতিক চাপে রাখতে হবে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ সময়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে নিহত হয়েছেন ৩১৩ বাংলাদেশি। আহত হয়েছেন অন্তত ৩৩০ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে সাত বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। এ সময় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

আসকের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিএসএফ-এর ছোড়া গুলিতেই নিহত হয় ৯৫ শতাংশের বেশি। বাকি ৫ শতাংশের মৃত্যু হয় নির্যাতনে। ৪ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মাদলা সীমান্তে শাকিব মিয়া (১৮) নামে এক বাংলাদেশি তরুণকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। এর আগে ১ মে দিনাজপুরের বিরলের ধর্মজৈন সীমান্ত থেকে দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। পরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০ এপ্রিল হবিগঞ্জের মাধবপুরে সীমান্ত এলাকা থেকে দুই বাংলাদেশি কৃষককে তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। বিএসএফ-এর সামনেই উচ্ছৃঙ্খল ভারতীয় জনতা তাদের মারধর করে। ২৫ এপ্রিল আখাউড়ার সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ-এর গুলিতে চোখে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন আসাদুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক যুবক। 

বিএসএফ-এর গুলি, নির্যাতনের ঘটনা সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়াচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের সঙ্গে চীন, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের সীমান্ত থাকলেও গত ১০ বছরে এসব সীমান্তে কোনো বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে। 

শুধু সন্দেহ থেকে গুলি চালায় বিএসএফ : সীমান্ত এলাকায় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নানা সন্দেহ থেকে নিরীহ মানুষের ওপর গুলি চালায় বিএসএফ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকার বাসিন্দা আজাদ মিয়া বলেন, সীমান্ত এলাকার মানুষ নানা প্রয়োজনে জিরো-লাইনের আশপাশে যান। অথচ বিএসএফ ওপার থেকে বিনা উসকানিতেই চোরাচালানি কিংবা মাদক ব্যবসায়ী মনে করে গুলি চালায়। তিনি বলেন, এমন ঘটনাও আছে, গোয়াল ঘর থেকে গরু ছুটে সীমান্তের দিকে চলে গেছে। সেই গরু আনতে গিয়েও বিএসএফ-এর গুলি-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। 

লালমনিরহাটের আদিতমারীর দীঘলটারী সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা রহিম শেখ বলেন, চোরাচালান, গরু পাচার, ফেনসিডিল বা মাদকদ্রব্য পাচার, ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আনা এবং বাংলাদেশের কিছু পণ্য ভারতে নেওয়া-এমন কার্যক্রমের সন্দেহে অনেক বাংলাদেশিকে গুলি করে বিএসএফ। তিনি বলেন, সীমান্ত অতিক্রম করলে বা সন্দেহভাজন মনে হলে আটক করতে পারে; কিন্তু এভাবে গুলি চালানো মেনে নেওয়া যায় না। ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সীমান্তে অনুপ্রবেশও এর অন্যতম একটি কারণ। অনেক সময় সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশিরা ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে তাদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে। কখনো কখনো কৃষিকাজ বা মৌসুমি শ্রমিক হিসাবে তারা ওপারে যায় অবৈধভাবে কাজের সন্ধানে। এই অনুপ্রবেশ রোধ করতে গিয়ে বিএসএফ গুলি চালায়। যদিও আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী এমন পরিস্থিতিতে গুলি না করে গ্রেফতার করার কথা। এছাড়া সন্দেহজনক চলাফেরাও অন্যতম কারণ। কখনো সীমান্তে হাঁটাহাঁটি বা জমি চাষের সময় সাধারণ মানুষকে চোরাচালানকারী বা অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে গুলি করা হয়। এতে নিরীহ সাধারণ মানুষও প্রাণ হারায়। সীমান্ত এলাকার মানুষ রাতের অন্ধকারে চলাচল করেন। এ সময় সন্দেহে গুলি চালায় বিএসএফ। সীমান্ত এলাকা জটিল ও জনবহুল হওয়ার কারণে কখনো কখনো ভুল বোঝাবুঝি থেকেও গুলি চালানো হয়। সাধারণ চাষিকে বা পথচারীকেও ‘অনুপ্রবেশকারী’ মনে করে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে।

সমঝোতা হলেও থামেনি গুলি : বিএসএফ-এর গুলিতে ফেলানী হত্যার পর বাংলাদেশের দাবির মুখে ২০১৪ সালে দিল্লিতে বিএসএফ ও বিজিবির মহাপরিচালকদের বৈঠকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে সমঝোতায় আসে। সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনায় প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করার ব্যাপারে ২০১৮ সালের এপ্রিলে দুদেশের মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়। কিন্তু এরপরও হত্যাকাণ্ড ঘটছে।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন যুগান্তরকে বলেন, ভারতকে আন্তর্জাতিক চাপে ফেলা গেলে কমিয়ে আনা যেতে পারে সীমান্তে হত্যা। এজন্য আমাদের জাতিসংঘের শরণাপন্ন হতে হবে। বিএসএফ বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএসএফ বারবার চোরাচালানের কথা বলে। সেটা সত্য ধরে নিলেও চোরাচালানের শাস্তি তো গুলি করে হত্যা হতে পারে না। 

জানা যায়, ৫ আগস্টের পর অনুপ্রবেশের ঘটনা কমে গেলেও বিএসএফ-এর কর্মকাণ্ডে সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত বিজিবি কোনো ভারতীয় নাগরিকককে দেখামাত্র গুলি ছোড়েনি। তারপরও বিনা উসকানিতে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশিদের টার্গেট করে হত্যা ও অপহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। 

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা যা বলছেন : নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে হলে বিএসএফ-বিজিবি দুপক্ষকেই আরও সচেতন হতে হবে। আমাদের দেশের লোকজন যাতে সীমান্তে না যেতে পারে, সে বিষয়ে বিজিবিকে কঠোর নজরদারি করতে হবে। আর বিএসএফকে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। সীমান্তে হত্যা বন্ধে উভয় দেশের মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা কেন মাঠপর্যায়ে মানা হচ্ছে না, এর পেছনে কী ধরনের অনুঘটক রয়েছে-বাংলাদেশ-ভারতকে এর কারণ বের করতে হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেনেন্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বিজিবি সীমান্তে কখনো পিঠ দেখাবে না। বিজিবিকে বলা হয়েছে, সীমান্তে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতিতে কোনো ছাড় যাতে দেওয়া না হয়। এ বিষয়ে বিজিবি সদর দপ্তর কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তারা সীমান্তে পাহারার পাশাপাশি দুর্গম এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। 

কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশকে ভারতের সঙ্গে সীমান্তে ‘নন-লেথাল উইপন’ (অপ্রাণঘাতী অস্ত্র) ব্যবহারের বিষয়টি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে। যৌথভাবে নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যেখানে প্রতিটি গুলির ঘটনায় তদন্ত বাধ্যতামূলক হবে। বিজিবি ও বিএসএফ যৌথ টহল চালু করলে সীমান্তে সংঘাত ও ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ কমবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিরপেক্ষ মানবাধিকার সংস্থার পর্যবেক্ষক রাখাও কার্যকর হতে পারে, যারা সংঘাত প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবেন। সীমান্তে কোনো ব্যক্তি নিহত হলে দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিজিবি সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও নৈতিক দায়িত্ববোধ বাড়াতে হবে। একইভাবে ভারতীয় বিএসএফ সদস্যদের মানবিক আচরণ নিশ্চিত করতে ভারত সরকারকে চাপ দিতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto