সুইস ব্যাংকে আর আগ্রহ নেই, সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকে এ বছরও বিস্ময়কর গতিতে বাংলাদেশিদের আমানত কমেছে
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকে এ বছরও বিস্ময়কর গতিতে বাংলাদেশিদের আমানত কমেছে। এক বছরের ব্যবধানে আমানত কমেছে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ফ্রাঁ । ২০২২ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত ছিল ৫ কোটি ৫২ লাখ সুইস ফ্রাঁ, ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁয়। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করে বাংলাদেশিরা কী করেছেন, কোথায় নিয়ে গেছেন কোনো ব্যাখ্যা নেই প্রতিবেদনে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তা দিনদিন কমতে থাকায় ধনীরা এখন টাকা জমা রাখতে ঝুঁকছেন ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, কেমান আইল্যান্ড অথবা বারমুডার মতো দেশগুলোয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁয়, প্রতি ফ্রাঁ ১৩২ টাকা করে ধরলে দেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৩৪ কোটি টাকা। গত বছরে যা ছিল ৫ কোটি ৫৩ লাখ ফ্রাঁ। তাতে ২০২৩ সালে সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের অ্যাকাউন্টে প্রায় ৬৮ শতাংশ অর্থ কমেছে। আগের বছর এ হার ছিল ৯৪ শতাংশ। সারা বিশ্বের ধনীদের অর্থ জমা রাখার জন্য বহুদিন ধরে পরিচিত সুইজারল্যান্ড। নামপরিচয় কঠোরভাবে গোপন থাকায় সারা বিশ্বের আমানতকারীদের কাছে নির্ভরশীল সুইস ব্যাংকগুলো। এসব কারণে কর ফাঁকি দেওয়া ও অবৈধভাবে আয় করা অর্থ জমা হয় সুইস ব্যাংকে। গ্রাহক নির্দিষ্ট করে তথ্য না দিলেও এক বছর ধরে টাকার হিসাব প্রকাশ করছে ন্যাশনাল সুইস ব্যাংক। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশিদের আমানত ছিল সবচেয়ে বেশি। দুই বছরের ব্যবধানে আমানতের পরিমাণ নেমে এসেছে সর্বনিম্ন অবস্থানে। এর আগে এক দশক ধারাবাহিকভাবে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছিল। হঠাৎ সর্বনি¤েœ নেমে আসার কারণ উল্লেখ করা হয়নি প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ। ২০১৯ সালে ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ। ২০১৮ সালে জমার পরিমাণ ছিল ৬১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ। নির্দিষ্ট করে গ্রাহকের তথ্য প্রকাশ না করলেও ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার তথ্য তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক। সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, যদি কোনো বাংলাদেশি নাগরিকত্ব গোপন রেখে অর্থ জমা রেখে থাকেন তবে ওই টাকা এ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। গচ্ছিত রাখা সোনা বা মূল্যবান সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমানও হিসাব করা হয়নি প্রতিবেদনে। এখন পর্যন্ত যে হিসাব পাওয়া যায়, তাতে ২০২১ সালেই বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি আমানত ছিল সুইস ব্যাংকে। ওই বছর জমা ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। ২০০২ সালে মাত্র ৩ কোটি ১০ লাখ সুইস ফ্রাঁ আমানত দুই দশকে বেড়েছিল প্রায় ৩০ গুণ। সুইস ব্যাংকে রাখা টাকা পাচারের অর্থ এমন ধারণা প্রচলিত। বিগত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বাড়লেও এ বছর উল্টো কমেছে। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৩ সাল শেষে জমার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৫৩ লাখ ফ্রাঁ। তবে দেশের ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা মানেই সব পাচারের অর্থ, তা বলা যাবে না। কারণ সুইজারল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা বৈধভাবেও দেশটিতে অর্থ জমা রাখেন। ব্যক্তির পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও অর্থ জমা রাখা হয় দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে।