Bangladesh

সুইস ব্যাংকে কেন আমানতের পাহাড় এক বছরে বাংলাদেশিদের বেড়েছে ৫৭ কোটি ১৮ লাখ সুইস ফ্রাঁ

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো সাধারণত আমানতের ওপর সুদ দেয় না, অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছ থেকে হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ফি কেটে নেয়। কিছু ক্ষেত্রে, সুইস ফ্রাঙ্কে থাকা অ্যাকাউন্টে অল্প পরিমাণে সুদ পাওয়া যেতে পারে, তবে তার ওপরে সুইস উইথহোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হয়। তার পরও কেন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি আমানতকারীদের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ বাড়ছে- প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ, স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে জমা হয়েছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ। অর্থাৎ এক বছরে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৫৭ কোটি ১৮ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে ব্যাপকভিত্তিক দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেছে- সেই অর্থ সুইস ব্যাংকে জমা হয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। জার্মানভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্ট্রারন্যাশনাল, বাংলাদেশ চাপ্টারের (টিআই,বি) নির্বাহী পরিচালক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সুইস ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ সবই যে অবৈধ দুর্নীতি বা পাচারের অর্থ তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না। অনেকে বৈধ ব্যাংকিং প্রক্রিয়ায় সেখানে অর্থ পাঠাতে পারেন। নিরাপদ ব্যাংকিং সিস্টেমের কারণেও অনেক বাংলাদেশি তাদের বৈধ অর্থ জমা রাখতে পারেন। তবে ধারণা করা হয়, এর বেশির ভাগ অর্থ অবৈধ। সুইস ব্যাংকে ২০২৪ সালে এত বেশি অর্থ জমার বিষয়ে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের এই প্রধান বলেন, গত বছরই যে সুইস ব্যাংকে জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে এমন নয়; এর আগেও এক বছরের তুলনায় আরেক বছরে অর্থের পরিমাণ ওঠানামা করেছে। এ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট উপসংহারে আসা কঠিন। তবে গত বছরের পুরোটা সময়জুড়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। ফলে যাদের কাছে টাকা ছিল তারা দেশে নিরাপদ না ভেবে সুইস ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তর করতে পারেন। এর আগে ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। ২০২২ সালে তা কমে ৫ কোটি ৫২ লাখ ফ্রাঁতে নেমে আসে। ২০২৩ সালে তা আরও কমে নেমে আসে ১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁতে। এ অবস্থা থেকে ২০২৪ সালে আমানতে বড় ধরনের এ উল্লম্ফন নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুইস ব্যাংকে জমা রাখা সব অর্থই যে অবৈধ, তেমন নয়। সেখানে বৈধ প্রক্রিয়ায় অর্থ জমা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক আমানত রাখা হয়েছে, কিছু পাচারকৃত অর্থও রাখা হতে পারে। তবে তা খুব উল্লেখযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না। ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এর আগেও এর চেয়ে বেশি অর্থ জমা হয়েছে। ২০২০ সালে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছিল। পরে কভিডের সময় কমেছে। সর্বশেষ নির্বাচনের পর অনেকে হয়তো বুঝেছেন যে, এটা টেকসই হবে না। সে কারণে আর্থিক নিরাপত্তার চিন্তা করে অর্থ বা প্রাতিষ্ঠানিক আমানত সুইস ব্যাংকে স্থানান্তর করতে পারেন।

২০১৪ সাল থেকে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক শুধু দেশভিত্তিক জমাকৃত অর্থের পরিমাণ প্রকাশ করছে। এ প্রতিবেদন থেকে কে অর্থ জমা রেখেছে বা কী উদ্দেশ্যে রেখেছে, তা জানা যায় না। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি করেছিল। গত ডিসেম্বরে ওই কমিটি যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে তাতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যেহেতু একটি নির্দিষ্ট বছরে সুইস ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে- সে কারণে সরকারের এটি তদন্ত করে দেখা উচিত। প্রয়োজনে সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে তথ্য নিয়ে সরকার দেখতে পারে- কারা এই অর্থ জমা রেখেছেন, এর কতটা বৈধ আর কতটা অবৈধ অর্থ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto