সুদানে আরএসএফের হামলায় নিহত কমপক্ষে ৩৩

সুদানে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) সন্দেহভাজন হামলায় কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হয়েছে। দেশটিতে দুই বছরের নৃশংস যুদ্ধের সর্বশেষ প্রাণহানি ঘটনা এটি।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এল-ওবেইদ শহরের একটি কারাগারে শনিবার আরএসএফের হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়। আর শুক্রবার সন্ধ্যায় দারফুরে একটি বিমান হামলায় একই পরিবারের অন্তত ১৪ জন নিহত হয়।
এই হামলাগুলো আরএসএফের সঙ্গে সামরিক নেতৃত্বাধীন সরকারের সুদানি সশস্ত্র বাহিনীর (এসএএফ) মধ্যে ২০২৩ সাল থেকে চলমান যুদ্ধের অংশ। আধাসামরিক গোষ্ঠীটি ছয় দিন ধরে পোর্ট সুদানে সামরিক নেতৃত্বাধীন সরকারের যুদ্ধকালীন রাজধানীতে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এসব হামলায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি পাওয়ার গ্রিড ও দেশের শেষ কার্যকর বেসামরিক বিমানবন্দর, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সহায়তা প্রবেশের প্রধান পথ ছিল।
এই যুদ্ধ ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, এক কোটি ৩০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে।
জাতিসংঘের মতে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে।
কারাগারে শনিবার হওয়া হামলায় আরো ৪৫ জন আহত হয়েছে বলে এএফপিকে জানিয়েছে একটি চিকিৎসা সূত্র। সূত্রটি জানায়, সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত উত্তর কোরদোফান প্রদেশের রাজধানী শহরের কারাগারটি আরএসএফের ড্রোন হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। এর আগের রাতেই দারফুরের এল-ফাশেরের আবু শৌক শরণার্থীশিবিরে ১৪ জন নিহত হয়, যেখানে স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকর্মীদের একটি দল আধাসামরিক বাহিনীকে এ হামলার জন্য দায়ী করেছে।
দলের একজন স্বেচ্ছাসেবী জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় আরএসএফের তীব্র গোলাবর্ষণের লক্ষ্যবস্তু ছিল শিবিরটি।
এল-ফাশেরের কাছে অবস্থিত শিবিরটি আরএসএফের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা দারফুরের শেষ রাজ্যের রাজধানী এবং সেখানে জাতিসংঘের মতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। শিবিরটিতে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে, যারা দারফুরের ধারাবাহিক সংঘাত ও ২০২৩ সাল থেকে আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশটিতে চলমান সংঘাত থেকে পালিয়ে গেছে। আরএসএফ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বারবার শিবিরটিতে গোলাবর্ষণ করেছে। আবু শৌক শিবিরটি জমজম শিবিরের কাছে অবস্থিত, যা আরএসএফ এপ্রিলে একটি বিধ্বংসী আক্রমণের মাধ্যমে প্রায় খালি করে দিয়েছিল।
আরএসএফের তৎপরতা বৃদ্ধি
অন্যদিকে শনিবার দারফুরের নিয়ালা ও এল-জেনিনা শহরে আরএসএফের অবস্থান লক্ষ্য করে এসএএফ যুদ্ধবিমান হামলা চালিয়েছে, যেখানে অস্ত্রের গুদাম ও সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়েছে বলে সামরিক সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে।
আরএসএফ সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা পশ্চিম কোরদোফানের কৌশলগত শহর আল-নাহুদ দখল করেছে, যা দারফুরে সামরিক বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ লাইন।
এই মাসের শুরুর দিকে পোর্ট সুদানে আরএসএফের হামলা বাড়ানোর ঘটনা সামরিক বাহিনী দক্ষিণ দারফুরের নিয়ালা বিমানবন্দরে হামলা চালানোর পর ঘটে, যেখানে আরএসএফ বিদেশি সামরিক সহায়তা, বিশেষ করে ড্রোন পায়। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ওই হামলায় আরএসএফের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
সুদানের সেনা সমর্থিত কর্তৃপক্ষ আরএসএফকে ড্রোন সরবরাহের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অভিযুক্ত করেছে। কারণ আরএসএফের নিজস্ব বিমান বাহিনী নেই।
এই যুদ্ধটি এসএএফের প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও তার সাবেক উপপ্রধান আরএসএফের কমান্ডার মোহাম্মদ হামদান দাগালোর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই হিসেবে শুরু হয়েছিল। এটি কার্যত দেশটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে, যেখানে উত্তর, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চল সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এবং পশ্চিমে দারফুর ও দক্ষিণের বেশির ভাগ এলাকা আরএসএফ ও তাদের মিত্রদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উভয় পক্ষই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে।