Bangladesh

সেই হারুনের ভাতের হোটেলে হাজার কোটি টাকার ‘গুপ্তধন’

বিগত আওয়ামী সরকারের সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশে বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন উর রশীদের ‘ভাতের হোটেল’। এই ভাতের হোটেলে বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সেলিব্রেটি পারসন, চলচ্চিত্র-নাটকের নায়ক-নায়িকা, শিল্পপতি-ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষকে ভাতের হোটেল ডিবি প্রধানের সঙ্গে বসে খেতে দেখা গেছে। এই সব ভিডিও ফুটেজ সোস্যাল মিডিয়ায় সারা বছর ভাইরাল হয়েছে। 

৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর সেই হারুন উর রশীদ এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। 
পরবর্তীতে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এবং তার স্ত্রী ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাগুলোতে প্রাথমিকভাবে হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে ১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ, তার স্ত্রী শিরিন আক্তারের বিরুদ্ধে ১০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং হারুনের ভাই এ বি এম শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদকের মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলা তিনটি তদন্ত করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত এই পরিবারের হাজার কোটি টাকার সম্পদ থাকার তথ্য পেয়েছে। অর্থাৎ ডিবির সেই ভাতের হোটেলে ‘গুপ্তধন’ এর সন্ধান পেয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কেবল রাজধানীর উত্তরাতেই নামে-বেনামে অন্তত ১৮টি সম্পত্তির (জমি ও ভবন) মালিক হারুন। রাজধানীর উত্তরাতে ডিবি হারুনের প্রভাব খাটিয়ে পর্দার আড়ালে থেকে সম্পদের পাহাড় গড়ার প্রধান কারিগর ছিলেন ব্যবসায়ী গোলাম হাসনাইন হিরন। হারুনের সঙ্গে যুক্ত সম্পত্তি উত্তরা ৩ নং সেক্টরের ৯ নং রোডের ১৪ নং বাড়ি। এ বাড়ির নাম হা-মীম। 

বাড়ির কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী  জানান, বিল্ডিংয়ের মালিক ব্যবসায়ী গোলাম হাসনাইন হিরন। তবে আগে এই বাড়ির মালিক ছিলেন ডিবির হারুন। ৫ আগষ্টের কিছু দিন আগে ৪০ কোটি টাকায় হিরনের কাছে বাড়িটি বিক্রি করেন হারুন। 

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, অন্যান্য সম্পত্তির মধ্যে উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর রোডের ১০ কাঠার দুটি প্লট, ১০ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডে একটি ৫ কাঠার প্লট এবং ১২ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলায় হারুনের কথিত মামা জাহাঙ্গীরের অফিস ও সোনারগাঁও জনপথ রোডে একটি ৬ তলা বাড়ি (২১ নম্বর সেক্টর)। কথিত মামা জাহাঙ্গীর ডিবি হারুনের উত্তরায় সম্পত্তির দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করত।  হারুনের কথিত মামা জাহাঙ্গীরে সাথে ছিল ব্যবসায়ী গোলাম হাসনাইন হিরনের সখ্যতা ছিল। 


দুদক জানায়, দুদকের অনুসন্ধান চলাকালে একটি চক্র হারুনের কিছু সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা করেছিল। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন। পরে গত ২৪ এপ্রিল দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এক আদেশ দেন। আদেশে রাজধানীর উত্তরায় হারুনের নামে থাকা ১ হাজার ৫৭০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ও ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দ করার নির্দেশ দেয়া হয়। 

এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের পাঁচটি ভবন, দুটি ফ্ল্যাট ও ১০০ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা এক কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। তার স্ত্রী শিরিন আক্তারের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। পাশাপাশি তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।

দুদক সূত্র জানায়, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডের মাথায় একটি আটতলা বাড়ির ৮ম তলায় সপরিবারে থাকতেন হারুন। স্থানীয়রা জানান, হারুনের মালিকানাধীন ২৬/এফ নম্বর বাড়িটির প্রতি তলায় দুটি করে ইউনিট আছে।  আটতলা বাড়িটির মূল্য ৩০ কোটি টাকা।
উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর রোডে ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি ১০ তলা মার্কেট আছে হারুন উর রশীদের। মার্কেটের নির্মান কাজ গত বছরের মে মাসে শেষ হয়। বিভিন্ন দোকান ভাড়া দেয়ার আগেই হারুন আত্মগোপনে চলে যান। এর মধ্যে মার্কেটের নিচতলায় বেবি শপ নামে বাচ্চাদের কাপড়ের দোকান রয়েছে। ২য় তলা থেকে ১০ম তলা পর্যন্ত খালি রয়েছে। এই মার্কেটটি মূল্য আনুমানিক ৮০ কোটি টাকা।

উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডে ৭.৫০ কাঠার বাণিজ্যিক প্লট এবং ১৫ নম্বর রোডে ৭.৩৪ কাঠা জমির ওপর নির্মানাধীন ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবনের সঙ্গেও যুক্ত সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন উর রশীদ।  
এছাড়া উত্তরার জমজম টাওয়ারের পাশে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে হারুনের কয়েক ডজন ফ্ল্যাটের মালিকানা রয়েছে। ১৪ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডের ১৭ ও ১৯ নম্বর প্লট চারটি কোম্পানির শোরুম হিসেবে ভাড়া দেওয়া রয়েছে।
 

গাজীপুরের সবুজপাতা রিসোর্টের মালিকানা, নিকুঞ্জ-২ আবাসিক এলাকার ৩ নম্বর রোডে রিক্রুটিং ও ট্রাভেল এজেন্সিসহ অন্যান্য ব্যবসা ও সাভারের নন্দন পার্কেও হারুনের শেয়ার রযেছে বলে দুদকের তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে। 


দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বনানী কবরস্থানের দক্ষিণ পাশে ২০ কাঠার প্লট দখল করে একটি কোম্পানির কাছে ৭০ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন হারুন। এছাড়া তার মালিকানাধীন টঙ্গীর ২৭ নম্বর মৌজায় ৮ বিঘা জমিতে কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে জেএক্স জিওটেক্স লি. নামক প্রতিষ্ঠান। 
টঙ্গীর আশুলিয়া মৌজায় ছায়াকুঞ্জ-৫ আবাসিক প্রকল্পের ভেতর ১২ বিঘা জমিতে রয়েছে নির্মাণাধীন একটি রিসোর্ট।  টেকনাফের মেরিনড্রাইভে রাজারছড়া এলাকায় হারুন কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন। ওই জমিতে রিসোর্ট নির্মানের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। এছাড়া খাগড়াছড়ি, গাজীপুর, সাভার ও টেকনাফে হারুনের আরও সম্পদ থাকার তথ্য দুদক অনুসন্ধান করছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto