Bangladesh

সেনাপ্রধান যা বলার বলেছেন, আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তার সরকারের মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান। মঙ্গলবার সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্য থেকে জানা যায় তাদের কেউ কেউ সেনা হেফাজতে রয়েছেন।

ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রী, এমপিদের হেফাজতে নেওয়া সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, তাদের জীবনের যে হুমকি আছে, সেটার জন্য আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে যাতে কোনো বিচারবহির্ভূত কাজ না হয়’।

তবে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে বা মামলা হলে তারা শাস্তির আওতায় আসবেন বলেও উল্লেখ করেন সেনাপ্রধান।

কারা সেনা হেফাজতে রয়েছেন সেটি নিয়ে নাগরিক সমাজের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে।

বুধবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর একটি সংলাপে অংশ নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কারা সেনা হেফাজতে আছে তার একটা তালিকা করা দরকার।

‘এসব ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তারা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।

কারা আছেন সেনা হেফাজতে: ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার পরপরই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করেন তার মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য।

সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। বুধবার তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

৫ অগাস্ট তার কিছুক্ষণ পর আটক হন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দেয়।

এ দু’জনকেই সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে বিমানবন্দর সূত্র বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছিল।

সেদিন বাংলাদেশ পুলিশের এক বার্তায় জানানো হয়েছিল, ‘প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করায় অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সাথে পরামর্শক্রমে বিভিন্ন হাই প্রোফাইল ব্যক্তিবর্গ যেমন- সাবেক মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, মিডিয়াকর্মীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন না করে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

বিমানবন্দর থেকে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদকেও আটকের খবর আসে গণমাধ্যমে। তবে, তাদের সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কি না সে ব্যাপারে কোনো তথ্য মেলে নি।

স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বিএনপি নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়লে তাকেও হেফাজতে নেয় সেনাবাহিনী।

চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করার খবর প্রকাশ করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানায়, তাকেও সেনাবাহিনীর হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।

এই তথ্য দুটি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী, এমপি বা নেতাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের অনেকে দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন, কেউ কেউ আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের কেউ কেউ সেনা হেফাজতে থাকতে পারেন বলে ধারণা রয়েছে।

হেফাজতে থাকা মানুষের সংখ্যা ও পরিচয় সম্পর্কে জানতে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরে যোগাযোগ করা হয়। তবে, এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান।

মঙ্গলবার রাজশাহী সেনানিবাসে সেনাপ্রধান বলেন, ‘তাদের জীবনের যে হুমকি আছে, সেটার জন্য আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক, যে ধর্মের হোক, সেটা আমরা করব।’

‘তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, মামলা হয় তবে অবশ্যই তারা শাস্তির আওতায় যাবেন। কিন্তু অবশ্যই আমরা চাইব না যে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কোনো একশন তাদের উপর হোক,’ যোগ করেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

মামলা হলে গ্রেফতারে বাধা থাকবে না: বাংলাদেশে কয়েকদিন কার্যত সরকারবিহীন অবস্থা পার করার পর গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

এই সময়টায় পুলিশও ছিল অনুপস্থিত। ফলে, নিরাপত্তা কিংবা আইনিব্যবস্থা নেওয়ার কাজ আপাতভাবে সামরিক বা আধা-সামরিক বাহিনীকেই করতে হয়েছে।

গত রোববার থেকে ধীরে ধীরে সচল হতে শুরু করে পুলিশের কার্যক্রম।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রি. জে. (অব) শামীম কামাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যাদের ওপর মানুষের আক্রোশ তারা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সেনানিবাস এলাকাগুলোকে বেছে নিয়েছিল। সেনাবাহিনীর দিক থেকেও তাদের নিরাপত্তা দেয়াটা ছিল অত্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ।’

‘পাবলিকের হাতে পড়লে মব জাস্টিস বলে একটা কথা আছে, পাবলিক পিটিয়ে মেরেও ফেলতে পারতো,’ যোগ করে কামাল বলেন, ‘তেমন হলে পরিস্থিতির একটা নেগেটিভ কনোটেশন (নেতিবাচক অর্থ) দাঁড়াত।’

তবে, যত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

আরেকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রি. জে. (অব.) বায়েজিদ সারোয়ার বলছেন, সামরিকবাহিনী হেফাজতে নিয়েছে বলার চেয়ে তারাই বাহিনীটির কাছে আশ্রয় চেয়েছে বলা অধিক যুক্তিযুক্ত হবে।

‘নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে, জীবন বিপন্ন হতে পারে এমন শঙ্কা থেকেই সম্ভবত তারা সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন’, বলেন সারোয়ার।

‘মন্ত্রি-এমপিদের বিরুদ্ধে আদালতে রেগুলার মামলা হলে এবং সেনা কর্তৃপক্ষকে জানালে তখন পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতারে বাধা থাকবে না,’ যোগ করেন তিনি।

সরকার কী বলছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, যাদের অপরাধের সম্পৃক্ততা আছে এবং আত্মগোপনে আছেন ‘তাদের আমরা হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি।’

‘সেনা প্রধান যা বলার বলেছেন, আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি,’ যোগ করেন তিনি।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যাপারে আরো অগ্রগতি আসবে বলেও ধারণা দিলেন স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা।

ইতিমধ্যেই, বাংলাদেশের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার রাতে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d