সোমবার ঢাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত, সাত কলেজের সামনে অবরোধ কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোমবার ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে হামলায় জড়িত সবার বিচারের দাবিতে সোমবার নয়টা থেকে নিজ নিজ কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া রোববারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান। গভীর রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় কোনোভাবেই তৃতীয় পক্ষ যাতে সুযোগ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
এর আগে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা করতে গেলে রোববার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ সাত কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে অপমান করেন বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা। এ ঘটনায় তাঁর ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে রোববার সন্ধ্যা থেকে সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ এবং সেখান থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের দিকে মিছিল নিয়ে আসেন।
নীলক্ষেত মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে কয়েক শ শিক্ষার্থী বেরিয়ে এসে তাঁদের ধাওয়া দেন। এতে নীলক্ষেত মোড় থেকে কিছুটা সরে যান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা আবার একজোট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। পাল্টাপাল্টি এ ধাওয়া চলে রাত পৌনে দুইটা পর্যন্ত। এতে দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।
দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করতে মাঝে অবস্থান নেয় পুলিশ। এ সময় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করতে দেখা যায়। পরে পুলিশকে সহায়তা করতে চার প্লাটুন বিজিবিও মোতায়েন করা হয়।
একপর্যায়ে নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেন। পরে রাত পৌনে তিনটার দিকে অবস্থান ছেড়ে নিজেদের ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
রাত তিনটার দিকে সাত কলেজের পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাত কলেজের সামনের সড়কে সোমবার সকাল নয়টা থেকে অবস্থান নেবেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দেন তাঁরা।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। তাঁরা আমাদের ওপর হামলা করেনি। আমাদের ওপর হামলা করেছে পুলিশ। তবে তাঁরা আমাদের ওপর হামলা করতে পুলিশকে উসকে দিয়েছে।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ জানান, অনিবার্যকারণে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ এবং সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, সোমবার সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। যে সকল বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।