সৌদি আরবে ‘চীনের প্রভাব ঠেকাতে’ তৎপর ট্রাম্প, দিচ্ছেন অস্ত্রের বিরাট চালান: গোপন ছয় সূত্রের ভাষ্য

সৌদি আরবকে ১০০ বিলিয়ন (১০ হাজার কোটি) ডলারের বেশি মূল্যের এক বিশাল অস্ত্রের চালান যুক্তরাষ্ট্র দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ–সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আগামী মাসে দেশটিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরকালে ঘোষণা করা হতে পারে। বিষয়টি সম্পর্কে জানাশোনা আছে, এমন ছয়টি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রিয়াদের সঙ্গে পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি সইয়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসন সৌদি আরবের জন্য এই প্যাকেজের প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্তরঙ্গ বন্ধু ইসরায়েলের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে সুদূরপ্রসারী এক সমঝোতার অংশ হিসেবে চুক্তি সইয়ের ওই চেষ্টা চালিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন।
বাইডেন প্রশাসন চীন থেকে অস্ত্রশস্ত্র কেনা বন্ধ ও বিনিয়োগ সীমিত করার বিনিময়ে সৌদি আরবকে আরও উন্নত ধরনের মার্কিন অস্ত্র দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। এখন ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবে এসব শর্ত অন্তর্ভুক্ত আছে কি না, তা জানতে পারেনি রয়টার্স।
এ বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধ জানালে হোয়াইট হাউস ও সৌদি আরব সরকারের কেউ তাৎক্ষণিকভাবে তাতে সাড়া দেয়নি।
বাইডেন প্রশাসন চীন থেকে অস্ত্রশস্ত্র কেনা বন্ধ ও বিনিয়োগ সীমিত করার বিনিময়ে সৌদি আরবকে আরও উন্নত ধরনের মার্কিন অস্ত্র দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। এখন ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবে এসব শর্ত অন্তর্ভুক্ত আছে কি না, তা জানতে পারেনি রয়টার্স।
এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বের অধীন বর্তমানে সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিকতর মজবুত। এই অংশীদারির সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা বজায় রাখা এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে আছে। তাদের প্রতিরক্ষা চাহিদা মেটাতে আমরা কাজ করে যাব।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দফার মেয়াদেও ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রিকে উৎসাহিত করেছিলেন।
দুই মার্কিন সূত্র বলেছে, সৌদি আরবকে একগুচ্ছ অত্যাধুনিক অস্ত্রের চালান দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন করপোরেশন (এলএমটি.এন)। চালানের মধ্যে সি-১৩০ পরিবহন উড়োজাহাজও রয়েছে। একটি সূত্র বলেছে, লকহিড দেশটিকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডারও দিতে পারে।
দুই মার্কিন সূত্র বলেছে, সৌদি আরবকে একগুচ্ছ অত্যাধুনিক অস্ত্রের চালান দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন করপোরেশন। চালানের মধ্যে সি-১৩০ পরিবহন উড়োজাহাজও রয়েছে। একটি সূত্র বলেছে, লকহিড দেশটিকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডারও দিতে পারে।
আগে রেথিওন টেকনোলজি নামে পরিচিত আরটিএক্স করপোরেশনও (আরটিএক্স.এন) ওই অস্ত্রের প্যাকেজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চারটি সূত্র বলেছে, সৌদি আরবকে অস্ত্র সরবরাহ করবে বৃহৎ আরও কয়েকটি মার্কিন প্রতিরক্ষা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, যেমন বোয়িং করপোরেশন (বিএ.এন), নরথ্রপ গ্রুম্যান করপোরেশন (এনওসি.এন) ও জেনারেল অটোমিক্স।

সৌদি আরবে এক সফরে দেশটির যুবরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিজ কার্লটন হোটেল, রিয়াদ, সৌদি আরব, ২০ মে ২০১৭
স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় এসব সূত্রের কোনোটি তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হয়নি।
এ বিষয়ে আরটিএক্স, নরথ্রপ ও জেনারেল অটোমিক্স কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বোয়িংও মন্তব্য করার অনুরোধে তাৎক্ষণিকভবে সাড়া দেয়নি। তবে লকহিড মার্টিনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বৈদেশিক পর্যায়ে সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্রের বিক্রি দুই দেশের সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি নিয়ে প্রশ্নের জবাব মার্কিন সরকারই ভালো দিতে পারবে।
মার্কিন অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাবের কতটুকু নতুন, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারেনি রয়টার্স। দুটি সূত্র বলেছে, চুক্তির অনেক বিষয় আগেই আলোচনায় ছিল, যেমন সৌদি আরব জেনারেল অটোমিক্সের ড্রোন সম্পর্কে সেই ২০১৮ সালে প্রথম তথ্য জানতে চায়। আর গত ১২ মাসে প্রায় ২০ বিলিয়ন (২ হাজার কোটি) ডলারের ‘এমকিউ-৯বি সি-গার্ডিয়ান’ ড্রোন ও অন্যান্য উড়োজাহাজ নিয়ে চুক্তি সামনে এসেছে।
তিনটি সূত্র জানিয়েছে, কয়েকটি প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী মার্কিন প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে ওই অঞ্চল (সৌদি আরব) সফরের কথা ভাবছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই সৌদি আরবে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ২০১৭ সালে ট্রাম্প দেশটিকে প্রায় ১১০ বিলিয়ন (১১ হাজার কোটি) ডলারের অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে ২০১৮ সালের মধ্যে বিক্রি হয় মাত্র ১৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র।
পরে সৌদি আরবের ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার জেরে দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে মার্কিন কংগ্রেস। এর ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসনের অধীন কংগ্রেস দেশটিতে আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো অস্ত্র চুক্তি চূড়ান্ত করার আগে অবশ্যই কংগ্রেস সদস্যদের মাধ্যমে তা পর্যালোচনা করতে হবে।