সৌরঝড়ে উত্তর গোলার্ধের আকাশজুড়ে বর্ণিল মেরুজ্যোতির খেলা!
এনওএএর স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টারের বিজ্ঞানী স্টিনবার্গ বলেন, ‘‘অরোরা: এটি সত্যিই মহাকাশ আবহাওয়ার একটি উপহার।’’
রাতের আকাশে বর্ণিল রঙের খেলা! এমনই এক ঘটনা দেখল পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের বাসিন্দারা। আকাশে বর্ণিল আলোর ঝলকানির এ ঘটনার নাম নর্দার্ন লাইটস বা অরোরা বোরিয়ালিস। বাংলায় মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে একটি শক্তিশালী সৌরঝড়ের আঘাতে উত্তর গোলার্ধের আকাশজুড়ে এ দৃশ্য তৈরি হয়েছে।
ইংল্যান্ড, লন্ডন, বার্সেলোনা, প্রাগসহ ইউরোপের বিভিন্ন স্থান থেকে আকাশে এই রঙের খেলা দেখা গেছে। এটি আরও কয়েকদিন দেখা যেতে পারে।
অনেকেই দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করেছেন, কেউ কেউ ভিডিও ধারণ করেছেন। সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করেছেন।
ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ ক্রিস স্নেল জানান, বার্সেলোনা ও প্রাগসহ ইউরোপের বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা ঘটনাটির ছবি ও তথ্য পেয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) জানিয়েছে, এই সৌরঝড়ের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা ও উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার মতো দক্ষিণের অঞ্চলগুলোতেও এই আলোর খেলা তৈরি হতে পারে।
এনওএএর স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টারের বিজ্ঞানী স্টিনবার্গ বলেন, ”অরোরা: এটি সত্যিই মহাকাশ আবহাওয়ার একটি উপহার।”
স্টিনবার্গ এবং তার সহকর্মীরা বলেন, খালি চোখের চেয়ে ফোনের ক্যামেরা দিয়ে অরোরা ভালোভাবে দেখা যাবে। কারণ খালি চোখের চেয়ে ক্যামেরা ভালোভাবে আলো শনাক্ত করতে পারে।
এনওএএর স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টারের অপারেশন প্রধান মাইক বেটউই বলেছেন, ”আকাশের একটি ছবি তুলুন। এটি সত্যিই আপনার জন্য সুন্দর ছোট্ট একটা মুহূর্ত হতে পারে।”
এ ঝড়ের কারণে অবশ্য বিদ্যুতের উচ্চ ভোল্টেজের ট্রান্সমিশন লাইনের জন্য ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এমনকি স্যাটেলাইটগুলোও প্রভাবিত হতে পারে। এতে পৃথিবীতে যোগাযোগ পরিষেবাগুলো কিছুটা ব্যাহত হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০০৩ সালে একটি শক্তিশালী ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের কারণে সুইডেনে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রেকর্ড অনুযায়ী, সবচেয়ে শক্তিশালী সৌরঝড়টি হয়েছিল ১৮৫৯ সালে। সেই ঝড়ের প্রভাবেও আমেরিকার মধ্যাঞ্চল থেকে হাওয়াই দ্বীপ পর্যন্ত এমন বর্ণিল আলোকচ্ছটা তৈরি হয়েছিল।
শুক্রবার বিকেলে একটি সৌর বিস্ফোরণ পৃথিবীতে পৌঁছার পর যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একটি বিরল ভয়াবহ ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে। এটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পৃথিবীর কক্ষপথে মহাকাশযানের অপারেটরদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে।
এনওএএ বলছে, সানস্পট ক্লাস্টার বা সূর্যের দাগের গুচ্ছ থেকে গত বুধবার বেশ কয়েকটি মাঝারি থেকে শক্তিশালী সৌর শিখা ছড়িয়ে পড়ায় বিরল এই ঘটনা ঘটেছে।