Science & Tech

সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে জাপানের বৈপ্লবিক উদ্ভাবন

পেরোভস্কাইট সোলার সেল (পিএসসি) প্রযুক্তির মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চলেছে জাপান। হালকা, নমনীয় ও বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী এই সোলার প্যানেল সৌরশক্তি উৎপাদনে প্রচলিত ধারণা বদলে দিতে সক্ষম। জমির সীমাবদ্ধতা মোকাবিলা করে শহুরে পরিবেশেও এ প্রযুক্তি সহজে স্থাপন করা যাবে। জাপানের এই উদ্ভাবন টেকসই ভবিষ্যতের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করছে।

জাপানের সাহসী পরিকল্পনা

জাপান তার শক্তি ব্যবস্থায় নবায়নযোগ্য উৎসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পেরোভস্কাইট সোলার সেল (পিএসসি) প্রযুক্তিকে সামনে নিয়ে এসেছে। সংশোধিত জ্বালানি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ২০টি পারমাণবিক চুল্লির সমান শক্তি সরবরাহ করতে পারবে।

পিএসসি প্রযুক্তি বিকাশে জাপানের বিশেষ সুবিধা রয়েছে। পিএসসি সেলের প্রধান উপাদান আয়োডিন উৎপাদনে জাপান বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ফলে দেশটি সহজেই নিজস্ব সরবরাহ চেইন গড়ে তুলতে পারবে। এতে বিদেশি সরবরাহের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে ও দেশীয় শিল্পে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে।

একসময় সৌর প্যানেল উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় জাপান গত কয়েক দশকে চীনা ভর্তুকি-সমর্থিত পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছিল। তবে পিএসসি প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশটি আবারও তার অবস্থান পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছে। সরকারি সহায়তায় সেকিসুই কেমিক্যাল কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠান উন্নত পিএসসি মডিউল তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে। ২০৩০-এর দশকে এই প্রযুক্তির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শহুরে পরিবেশে সৌরশক্তি ব্যবহারে নতুন দিগন্ত

পিএসসি প্রযুক্তি প্রচলিত সিলিকনভিত্তিক সৌর প্যানেলের তুলনায় অনেক বেশি নমনীয়। সিলিকন প্যানেল স্থাপন করতে বড় আকারের জমির প্রয়োজন হয়, যা জাপানের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে একটি বড় সমস্যা।

পিএসসির হালকা ও নমনীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি ভবনের দেয়াল, জানালা, গাড়ির ছাদ ও সড়কবাতিতে সহজেই স্থাপন করা যায়। ফলে শহুরে এলাকায় সৌরশক্তি উৎপাদনের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব। এ ছাড়া পিএসসি প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়ু ও সৌরশক্তি একত্র করে হাইব্রিড ব্যবস্থাও গড়ে তোলা সম্ভব, যা নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন আরও কার্যকর করবে।

তবে পিএসসি প্রযুক্তির কয়েকটি সীমাবদ্ধতা এখনো রয়ে গেছে। দীর্ঘ স্থায়ীত্বের অভাব ও উচ্চ প্রাথমিক ব্যয়ের মতো চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে ২০৪০ সালের মধ্যে এর খরচ প্রতি ওয়াটে ১০ ইয়েনে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।

জাপানের সৌর–বিপ্লব

২০১১ সালের ফুকুশিমা পারমাণবিক চুল্লি বিপর্যয়ের পর জাপান নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকেছে। বর্তমানে দেশটির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ আসে সৌরশক্তি থেকে, যেখানে ২০১৪ সালে এই হার ছিল মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ।

সরকারের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার ৩৬ থেকে ৩৮ শতাংশে উন্নীত করা। পিএসসি প্রযুক্তি এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গবেষণার মাধ্যমে এর উৎপাদন খরচ আরও কমিয়ে এটি সহজলভ্য করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সবুজ ভবিষ্যতের পথে অগ্রসর জাপান

পেরোভস্কাইট সোলার সেল প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাপান নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চলেছে। প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির বিকাশ ঘটিয়ে দেশটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করছে। এই প্রযুক্তি কেবল জাপানের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না; বরং বিশ্বকে দেখিয়ে দেবে কীভাবে নবায়নযোগ্য শক্তি দিয়ে একটি পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor