International

স্কুলে ২০০০ পাউন্ডের বোমা ফেলে শতাধিক মানুষ হত্যা: গাজায় আগ্রাসন

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে একটি স্কুলে ইসরায়েলের বোমা হামলায় নারী, শিশুসহ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানান, গাজা সিটির ওই স্কুলে উদ্বাস্তু পরিবারগুলো সাময়িক আশ্রয় নিয়েছিল। ইরান ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের উত্তেজনার মধ্যে গাজায় সাম্প্রতিক সময়ে এটা সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গতকাল শনিবার ভোরে গাজা নগরীর দারাজ এলাকার আল-তাবিন বিদ্যালয়ে ওই হামলা হয়। ইসরায়েলের তিনটি বোমা বিদ্যালয়ে আঘাত হানে। আলজাজিরা লিখেছে, বোমার আঘাতে লোকজনের শরীর টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। ছবিতে লাশগুলো কেন্দ্র করে আর্তনাদ করতে দেখা যায় স্বজনের। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি। এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, ইরান, কাতারসহ বিভিন্ন দেশ। জর্ডান বলেছে, স্কুলে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটা মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থি।

গাজার গণমাধ্যম দপ্তরের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতা বলেন, হামলায় ইসরায়েলি বাহিনী ২ হাজার পাউন্ডের তিনটি বোমা ব্যবহার করেছে। বিদ্যালয়টিতে উদ্বাস্তুরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। এটি ইসরায়েলি বাহিনী জানত। এর পরও সেখানে হামলা হয়েছে। হামলার পর বিদ্যালয় ভবনে আগুন ধরে যায়। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি, ওই স্কুলে হামাস সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। তবে উত্তর গাজার অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবা বিভাগের পরিচালক  ফারেস আফানা বলেন, যাদের লক্ষ্যে পরিণত করা হয়েছে, তাদের সবাই বেসামরিক নাগরিক, নিরস্ত্র শিশু, বয়স্ক ও নারী-পুরুষ।

হামলার নিন্দা জানিয়েছেন অধিকৃত ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রান্সেসকা আলবেনিজ। এক বিবৃতিতে গাজায় রক্তপাত নিয়ে বিশ্বের উদাসীনতারও সমালোচনা করেন তিনি। এক্সে তিনি লেখেন, ইসরায়েল একই সময়ে ফিলিস্তিনের আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির ও ‘সেফ জোনে’ গণহত্যা চালাচ্ছে। 

গাজায় অব্যাহতভাবে ইসরায়েল হামলা চালালেও সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে আর এত বড় হামলা হয়নি। ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লিজ্জারিনি ‘চোখের সামনে এ ধরনের ভয়াবহতা’র সমাপ্তি চেয়েছেন। তিনি দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতিরও দাবি জানান। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের অধ্যাপক হাসান বারারি বলেন, বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল গাজা সিটির ওই স্কুলে হামলা শান্তি প্রচেষ্টা ব্যাহত করার ইসরায়েলের চেষ্টার অংশ। 

এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা পেতে যাচ্ছে ইসরায়েল। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার দেবে। বৃহস্পতিবার রাতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর দেশটির আইনপ্রণেতাদের জানায়, ইসরায়েলকে আরও কয়েক বিলিয়ন ডলারের সামরিক অর্থায়নে আগ্রহী বাইডেন প্রশাসন। এ অর্থ দিয়ে ইসরায়েল অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্র কিনতে পারবে।

গত ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় গাজায় মৃত্যু ৩৯ হাজার ৭৯০ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন ৯১ হাজার ৭০২ জন। গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ২০ লাখেও বেশি। উপত্যকার অধিকাংশ এলাকাই ধ্বংস হয়ে গেছে।

যুদ্ধবিরতির এখনই সময়– বললেন কমলা 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির এখনই সময়। আগামী নভেম্বরে নির্বাচন উপলক্ষে প্রচারণায় নেমে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে ফিলিস্তিন সমর্থকদের উদ্দেশে কমলা এ কথা বলেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। অ্যারিজোনার গ্লেনডেন শহরে ওই নির্বাচনী সমাবেশে ডেমোক্রেটিক পার্টির ১৫ হাজারের বেশি কর্মী-সমর্থক অংশ নেন। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button