স্থায়ী আমানতের সুদহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে সঞ্চয়পত্রে সুদহার বাড়াচ্ছে সরকার
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা এর কম বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদহার ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর স্থায়ী আমানতের সুদহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে সঞ্চয়পত্রের সুদাহারও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রের সুদহার অন্তত এক শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে।
জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোর সুদের হার পুননির্ধারণ সংক্রান্ত প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন দিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।
অনুমোদিত প্রস্তাবনায় বলা হয়, সরকারের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিডিএমসি) জুন মাসে জানুয়ারি–জুন সময়ের জন্য এবং ডিসেম্বর মাসে জুলাই–ডিসেম্বর সময়ের জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদহার, মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়নের সুদহার এবং প্রিমিয়াম নির্ধারণ করবে।
তবে ওয়েজ আর্নার বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এ সংস্কারের আওতাবহির্ভূত থাকবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলো সাধারণত স্থায়ী আমানতে ৯ থেকে ১১ শতাংশ সুদ দেয়। তবে কিছু ব্যাংক ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ প্রদান করছে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে ১১ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ সুদ পান গ্রাহক।
আগে ব্যাংক আমানাতের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে অনেক বেশি মুনাফা দেওয়া হতো। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা এর কম বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদহার ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আর এর বেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদহার হবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বর্তমানে, পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে সুদহার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ রয়েছে।
অর্থাৎ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা এর কম বিনিয়োগকারীরা কিছুটা বেশি সুদ পাবেন। ১ জানুয়ারি থেকে হিসাব করে সঞ্চয়পত্রের নতুন সুদহার কার্যকর করা হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন সুদহার পাঁচ বছর ও দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদের হার (সর্বশেষ ৬ মাসের নিলামের ভিত্তিতে) অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে।
তবে, সাড়ে সাত লাখ টাকা বা এর কম বিনিয়োগকারীদের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ বেসিস প্রিমিয়াম যোগ করা হবে। এতে করে তাদের জন্য কিছুটা বেশি সুদ নির্ধারণ করা হবে।
যে-সব সঞ্চয়পত্রে বাড়ছে সুদ
তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফা সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য সম্ভাব্য সুদহার হবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর এর বেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদহার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। বর্তমানে এ স্কিমে সুদহার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ রয়েছে।
পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদহার হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর এর বেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ সুদ হবে। বর্তমানে এ স্কিমে সুদহার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
অন্যদিকে একই মেয়াদের পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদহার ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ হবে। আর এর বেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে এ স্কিমে সুদহার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ রয়েছে।
এছাড়া, তিন বছর মেয়াদি পোস্ট অফিস ফিক্সড ডিপোজিটে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদহার হবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর এর বেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার গত কয়েক বছর সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করেছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) সুপারিশ করেছিল, সঞ্চয়পত্রের সুদব্যয়ে সরকারকে যে পরিমাণ টাকা দিতে হয়, তা কমানো উচিত।
তবে রাজস্ব আহরণ কমে যাওয়ায় এবং ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমায় সরকার আবারও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার দিকে ঝুঁকছে।
২০২২–২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক তিন হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা।
তবে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ঋণাত্মক সাত হাজার ৩১০ কোটি টাকা করা হয়েছিল। তবে, চলতি অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্য এ খাত থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার।