Bangladesh

স্নাইপার, এসএমজিসহ ভারী আগ্নেয়াস্ত্রগুলো কোথায়?

  • সর্বশেষ সুনামগঞ্জে উদ্ধার হয়েছে একটি স্নাইপার রাইফেল
  • এসএসএফের খোয়া যাওয়া ৩২টি অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধার হয়নি
  • নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি: বিশেষজ্ঞ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিন ৫ আগস্ট দায়িত্বরত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যরা ভল্টে অস্ত্র জমা রেখে গণভবন ছেড়ে চলে যান। পরে অভ্যুত্থানকারীরা গণভবনে ঢুকে পড়লে এক পর্যায়ে ভল্টে রাখা এসএসএফের ৩২টি অত্যাধুনিক অস্ত্রও লুট হয়। এর মধ্যে অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, এসএমজি টি-৫৬-সহ অত্যাধুনিক সব আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, লুট হওয়া ঐ অস্ত্রগুলো হাতবদল হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঐ সময় পুলিশ, বিভিন্ন থানা, কারাগার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র এবং ৬ লাখ ৬ হাজার ৭৪২টি গুলি লুট হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৪৬টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২ লাখ ৬২ হাজার গোলাবারুদ উদ্ধার করা যায়নি। এগুলো যদি সন্ত্রাসীদের হাতে গিয়ে থাকে তাহলে নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অস্ত্রগুলো কোনো স্বাভাবিক মানুষের কাছে থাকার কথা না।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে নাজমুল বাহিনীর তিন সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে লংরেঞ্জ (স্নাইপার) রাইফেলসহ গত শুক্রবার আটক করেছে বিজিবি। তারা হলেন, নাজমুল বাহিনীর তিন সদস্য বড়ছড়া গ্রামের রাজু আহমেদ (২১) জালাল মিয়া (২৩) ও রাসেল মিয়া (২৫)। বিজিবির সিলেট সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বড়ছড়া এলাকায় মেসার্স শামীশ ট্রেডার্সের একটি পরিত্যক্ত কয়লা ও চুনাপাথর ডিপো অফিসে অভিযান চালিয়ে একটি ভারতীয় লংরেঞ্জ শুটিং রাইফেল উদ্ধার করা হয়। তবে এই অস্ত্রটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কি না—সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একটি সূত্র বলছে, এটা ভারত থেকে সন্ত্রাসীরা এনেছে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর নড়াইলে সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে গতকাল স্নাইপার স্কোপযুক্ত একটি রাইফেল ও বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। এ ঘটনায় চার জনকে আটক করা হয়। যদিও নড়াইলের নড়াগাতি থানার ওসি শফিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেছেন, তারা পরে নিশ্চিত হয়েছেন এটি আসল স্নাইপার রাইফেল না। ঐ আদলে বানানোর একটি আগ্নেয়াস্ত্র।

গত শনিবার মুন্সীগঞ্জের বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে তরুণীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তৌহিদ শেখ তন্ময়কে (২৮) গ্রেফতার করে পুলিশ। ঐ যুবক পুলিশকে জানিয়েছে, বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় তরুণীকে হত্যা করে সে। যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়, সেটি গত ৫ আগস্ট ঢাকার ওয়ারী থানা থেকে লুট করা। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের একটি পুকুরে তল্লাশি চালিয়ে ঐ অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে। চট্টগ্রামে লুট করা অস্ত্র দিয়ে চাঁদাবাজি করার সময় এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আবার ঢাকার বিহারি ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময়ও থানা থেকে লুট করা অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে।

গণভবন থেকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে—অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, এসএমজি টি-৫৬, ফ্ল্যাশব্যাং গ্রেনেড, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম, বেতার যোগাযোগের ডিভাইস ও বিপুল গোলাবারুদ। এগুলো সবই ভারী আগ্নেয়াস্ত্র বলে জানা গেছে।

লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাইরে থাকায় কি নিরাপত্তাসংকট বাড়ছে? জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখন যে উদ্ধার হয়নি, সেটা তো উদ্বেগের। এছাড়া গণভবন ও সংসদ ভবন থেকে এসএসএফের যে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে, সেগুলো তো কোনোভাবেই সাধারণ নাগরিকের কাছে, এমনকি পুলিশের কাছে থাকাও উচিত নয়। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাইরে থাকলে যে কোনো সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা থেকে যায়।’

শুধু থানা বা এসএসএফের কাছ থেকে লুট হওয়া অস্ত্রই নয়, গত ২০ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ৯ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোদ্ধারা। ঐ সময় কারাগার থেকে বেশ কিছু অস্ত্র লুট হয়। লুট হওয়া ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ২০টি চায়না রাইফেল, ১৫টি রাইফেল এবং ১০টি শটগানসহ ৪৫টি অস্ত্র, ১ হাজার ৯১টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। আরও কিছু অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি।

এসব আগ্নেয়াস্ত্র সাধারণ মানুষের কাছে থাকা কতটা নিরাপদ? জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, ‘অবৈধ কোনো আগ্নেয়াস্ত্র সাধারণ মানুষের কাছে থাকা ঠিক না। এর কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে কোনো সময় অবনতি হতে পারে। এই মুহূর্তে সরকারের কাজ হবে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে মনোযোগ দেওয়া। পাশাপাশি যেসব সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা পালিয়ে গেছে, তাদের গ্রেফতার করতে হবে।’

স্নাইপার রাইফেল কী: স্নাইপার রাইফেল হলো নিখুঁত একটি লং রেঞ্জ রাইফেল। যার মাধ্যমে অধিক দূরত্বে নির্ভুলভাবে আঘাত করা যায়। স্নাইপারে অনেক ধরনের বুলেট ব্যাবহার করা হয়। এন্টি মেটারিয়াল বুলেট যদি মানুষকে হিট করে তাহলে মৃত্যু নিশ্চিত। জোসেফ হুইটওর্থের তৈরি হুইটওর্থ রাইফেলকে বিশ্বের প্রথম স্নাইপার রাইফেল, যাতে টেলিস্কোপিক সাইট লাগানো যেত। আমেরিকান সিভিল ওয়ারে এই রাইফেলটি ব্যবহৃত হতো। এটি দুই কিলোমিটার কাছাকাছি টার্গেটে হিট করতে পারে। মূলত দুই ধরনের স্নাইপার রাইফেল আছে। এই স্নাইপারগুলো কোনো যুদ্ধে ব্যবহৃত হয় না। এগুলো সাধারণত শহুরে পরিবেশে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।

এসএমজি টি-৫৬ রাইফেল কী: টাইপ ৫৬ অ্যাসল্ট রাইফেল হলো একটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। এটি একে-৪৭-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। চীন-ভারত যুদ্ধসহ বেশ কিছু যুদ্ধে এই রাইফেলের ব্যবহার করা হয়। বিশ্ব জুড়ে অনেক দেশে এবং গেরিলা বাহিনীকে এটি দেওয়া হয়। বিভিন্ন সামরিক বাহিনী বহু বিরোধে ব্যবহার করে আসছে। ক্রোয়েশিয়ান স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং যুগোস্লাভ যুদ্ধের সময়ও এটির ব্যবহার হয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে, কসোভোর কসোভো লিবারেশন আর্মিও টাইপ ৫৬ রাইফেলের প্রধান ব্যবহারকারী ছিল।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d