Bangladesh

স্পর্শকাতর তথ্য বিক্রি করেন র‌্যাব-এটিইউর দুই কর্মকর্তা, সিডিআর, এনআইডির মতো গোপনীয় তথ্য বিক্রি

নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর তথ্য বিক্রি হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) থেকে তথ্যপ্রাপ্তির সুবিধা নিয়ে এমন অপরাধে জাড়িয়েছেন পুলিশের দুই কর্মকর্তা।

তারা এনটিএমসির সিস্টেম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও মোবাইল নম্বরের কল ডাটা রেকর্ডসহ (সিডিআর) অন্যান্য গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছেন। পরে ব্যক্তিগত এসব তথ্য অ্যানক্রিপ্টেড অ্যাপ টেলিগ্রামের মাধ্যমে পাচার করেছেন। ইতোমধ্যে তাদের মাধ্যমে তথ্য হস্তান্তর ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ পাঠিয়েছে এনটিএমসি।

এছাড়া দায়ী ব্যক্তি শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত এটিইউ এবং র‌্যাব-৬ এর সব ইউজার আইডি স্থগিত থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে এমনটি জানিয়েছে এনটিএমসি।

জানা গেছে, ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্ট প্ল্যাটফর্মসহ (এনআইপি) বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে এনটিএমসি। এসব উপায়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থাকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে তারা।

এজন্য এনটিএমসির দেওয়া ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এসব সিস্টেমে প্রবেশ করার সুবিধা পায় সংস্থাগুলো। তারা সেখান থেকে তদন্তের প্রয়োজনে বিভিন্ন অপরাধী বা ব্যক্তির সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে থাকে। এনআইপি সিস্টেমের লগ রিপোর্ট পর্যালোচনা করে ওই দুই কর্মকর্তার অস্বাভাবিক তথ্য সংগ্রহের প্রমাণ পায় এনটিএমসি।

পরে সশ্লিষ্টরা এসব তথ্য অর্থের বিনিময়ে হস্তান্তরের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে যাদের তথ্য নেওয়া হয়েছে এবং এসব তথ্য এই দুই কর্মকর্তার মাধ্যমে কারা নিয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে জানা যায়নি।

বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর এসব তথ্য থেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে। একজন নাগরিকের তথ্য বেহাত হওয়ার কারণে তার জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে, জিম্মি হতে পারেন অপরাধীদের হাতে। তার ব্যবসা-বাণিজ্যের নথিপত্র হাতিয়ে নিতে পারে।

এছাড়াও সিডিআর পেয়ে দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ পারিবারিকভাবে অশান্তির সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকেও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। কোন শ্রেণি বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে এর অপব্যবহার।

সংবেদনশীল ও গোপনীয় এসব তথ্য হস্তান্তরে অভিযুক্ত পুলিশ সুপার (এসপি) মোছা. ফারহানা ইয়াসমিন বর্তমানে পুলিশের অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিটে (এটিইউ) কর্মরত আছেন।

অপর অভিযুক্ত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তারেক আমান বান্না র‌্যাপিড আকশন ব্যাটালিয়নে (র‌্যাব) কর্মরত আছেন।

অভিযোগের বিষয়ে এটিইউর সাইবার ক্রাইম বিভাগের এসপি ফারহানা ইয়াসমিন শনিবার বলেন, বিক্রি হয়েছে এমন একটি সিডিআর পেয়েছে তারা (এনটিএমসি)। আমরা অভ্যন্তরীণভাবে জানতে পেরেছি আমার কম্পিউটার অপারেটর এই সিডিআর সংগ্রহ করে বিক্রি করেছে। এটা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে, বিস্তর তদন্ত শেষ হলে বিষয়টি জানা যাবে।

অভিযুক্ত এএসপি তারেক আমান বান্না র‌্যাব-৬ খুলনায় অপস অফিসারের দায়িত্বে আছেন। গতকাল তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে তার ব্যক্তিগত নম্বরে যোগাযোগ করে তথ্য পাচারের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে তিনি ব্যক্তিগত নম্বর পাওয়ার মাধ্যম জানতে চান এরপর নম্বর ভুল বলে কেটে দেন।

এদিকে এই দুই কর্মকর্তার তথ্য পাচারের বিষয়টি নজরে আসার পর ২৮ এপ্রিল এনটিএমসির পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হয়। তারা ওই দুই কর্মকর্তার মাধ্যমে সংবেদনশীল ও গোপনীয় এসব তথ্য হস্তান্তর ও প্রকাশ বন্ধসহ তাদের বিরুদ্ধে ববস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত সব তথ্য সরবরাহ বন্ধের কথা জানানো হয়।

এনটিএমসির অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৫ এপ্রিল রাত ৮টা ৫৭ মিনিট ও ৮টা ২৭ মিনিটের লগ রিপোর্ট এই ঘটনার সত্যতা মিলেছে। ওই দুই কর্মকর্তার ব্যবহার করা ইউজার আইডিগুলো থেকে ২৫ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের সংখ্যা অন্যান্য ব্যবহারকারীর তুলনায় অনেক বেশি। এ প্রেক্ষিতে সংবেদনশীল তথ্যের অননুমোদিত ব্যবহার ও অবৈধভাবে হস্তান্তরের যথাযথ তদন্ত শেষে এর জন্য দায়ী ব্যক্তিবর্গকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।

দায়ী ব্যক্তি শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত এটিইউ এবং র‌্যাব-৬ এর সব অফিসারদের ইউজার আইডি স্থগিত থাকবে। এক্ষেত্রে ইউজার আইডি স্থগিত থাকাকালীন সময়ে এই দুই প্রতিষ্ঠানের কোনো তথ্য প্রয়োজন হলে সদর দপ্তরের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে।

অস্বাভাবিকভাবে তথ্য বেহাত হওয়ার এ ঘটনায় নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওাত হোসেন বলেন, কোন ধরনের লোকের তথ্য তারা দিয়েছে সেটা জানতে হবে। তারা যদি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তথ্য দিয়ে থাকে তাহলে সেটা চিন্তার বিষয়। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বাবস্থা নেওয়া উচিত। এবং এখন থেকে নিরাপত্তা শ্রেণিবিন্যস ছাড়া কাউকে তথ্য না দেওয়া উচিত।

কারণ এমন অবস্থানে রক্ষক ভক্ষক হলে মানুষ কোথায় যাবে(!) দেশের সব অবস্থানে দুর্নীতি চলে গেছে। তাই এরাও গোপনীয় তথ্য বিক্রি করে অবৈধ অর্থ আয় করছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে যদি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে এমন ঘটনা আরও বাড়তে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d