International

স্পেনে সর্বকালের রেকর্ড ভাঙা বন্যা, মৃত বেড়ে ২০৫

স্পেনে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০৫-এ পৌঁছেছে, যা গত ৫০ বছরে ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ আবহাওয়াজনিত দুর্যোগ। এ অবস্থায় মৃতদেহ শনাক্ত করার জন্য শুক্রবার একটি অস্থায়ী মর্গ খুলেছেন উদ্ধারকর্মীরা। 

ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলেই এই বিপর্যয়কর বন্যা সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে। সেখানে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে এবং ঝড়ে আক্রান্তদের সহায়তার জন্য প্রায় ৫০০ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। 

এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিম স্পেনের হুয়েলভা অঞ্চলে আবারও আবহাওয়া সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

সর্বকালের রেকর্ড ভাঙা বন্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ

ড্রোন ফুটেজে দেখা গেছে, স্পেনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ভ্যালেন্সিয়ার শহরতলী আলফাফারে রেললাইনজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে গাড়িগুলোর ধ্বংসাবশেষ। এক কোণে একটি নৌকাও দেখা গেছে, যা বন্যার পানিতে ভেসে এসেছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা প্যাট্রিসিয়া ভিল্লার জানান, সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে- দোকান, সুপারমার্কেট, স্কুল, গাড়ি সব। 

জরুরি সেবার সদস্যরা প্লাবিত একটি আন্ডারপাসের প্রবেশমুখে জমে থাকা গাড়ি সরানোর চেষ্টা করছেন, যেগুলোতে আরও মৃতদেহ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

এছাড়া বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন প্রায় ৭৫,০০০ বাড়িতে সরবরাহ পুনঃস্থাপন করতে দমকলকর্মীরা পরিত্যক্ত গাড়ি থেকে পেট্রোল সংগ্রহ করে জেনারেটর চালাচ্ছেন।

আবহাওয়ার নজিরবিহীন প্রভাব

গত মঙ্গলবার রাতে মাত্র ৮ ঘণ্টায় গোটা এক বছরের বৃষ্টিপাত হওয়ায় স্পেনের নদীগুলো উপচে রাস্তাঘাট, রেললাইন, সেতু সব ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়াও বন্যার ফলে স্পেনের কমলা উৎপাদনকারী প্রধান অঞ্চল ভ্যালেন্সিয়ার হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

দেশটির পরিবহন মন্ত্রী অস্কার পুয়েন্তে বলেছেন, এ ধরনের বিপর্যয়ের কোনো নজির নেই। 

যদিও ভ্যালেন্সিয়ার অধিকাংশ এলাকায় পানি সরে গেছে, তবে কয়েকটি অঞ্চলে এখনো পথঘাট বন্ধ থাকায় উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না।

কিছু এলাকায় বোতলজাত পানির সংকট দেখা দিয়েছে এবং পাইপোর্টার বাসিন্দারা লুটপাট রোধে দোকানগুলো পাহারা দিচ্ছেন। 

তবে আম্বার গঞ্জালেজ নামে পাইপোর্টার ৭২ বছরের এক বাসিন্দা বলেন, যত সহায়তাই পাই না কেন, এটি দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা

ভ্যালেন্সিয়ার আঞ্চলিক সরকারের সভাপতি কার্লোস মাজোন বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সমস্ত প্রোটোকল অনুসরণ করা হয়েছে এবং রোববার থেকেই মানুষকে সতর্ক করা শুরু হয়েছিল।

Spain flood death toll expected to rise as dozens missing

তবে প্রথম দিকের সতর্কতার অভাবে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে হেক্টর বলিভার (৬৫) নামে ভ্যালেন্সিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা প্রশ্ন তুলে বলেন, কেন বৃষ্টিপাত শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছিল।

এদিকে বন্যার কারণে মৃত্যুর এই সংখ্যা ইউরোপে ১৯৭০ সালের পর সর্বোচ্চ। ওই সময়ে এক বন্যায় রোমানিয়ায় ২০৯ জন প্রাণ হারিয়েছিল। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ুবিদদের মতে, ভূমধ্যসাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং বাষ্পীভবন বৃদ্ধির ফলে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বাড়ছে।

এদিকে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে প্রার্থনা করার সময় পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘আমরা ইবেরিয়ান উপদ্বীপের মানুষের জন্য প্রার্থনা করছি। বিশেষ করে ভ্যালেন্সিয়ার জনগণের জন্য, যারা এই ঝড় ও বন্যায় উড়ে ও ভেসে গেছেন’।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button